মোর ডেইজ অ্যাট দ্য মারিসাকি বুকশপ


 মরিসাকি বইঘরের দিনগুলো বইয়ের কাহিনীটা ঠিক যেখানে শেষ হয়, মোর ডেইজ অ্যাট দ্য মারিসাকি বুকশপ বইটার কাহিনী ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়। তাই এই বইটার আগে অবশ্যই আগের পর্বটা পড়তে হবে। এই বইয়ের কাহিনীটা শুরুটা শান্ত এবং সুন্দর। প্রথম পর্বের প্রায় প্রতিটা চরিত্রই এই পর্বেও রয়েছে। তবে নতুন করে দুই একজন এসে যোগ হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম বইয়ে তাকাকোর প্রতারক প্রেমিক এই বইতে নেই। তার বদলে আছে তার নতুন প্রেমিক ওয়াদা। এছাড়া ওর নতুন অফিসের ওয়াদা নম্বর দুইও রয়েছে।

যা বলছিলাম, বইয়ের শুরুটা শান্ত ভাবেই হয়। মারিসাকি বইয়ের দোকানের প্রতিদিনটা যেভাবে কাটে ঠিক সেইভাবে। প্রতিদিন সাতারু মামা দোকান খোলেন, বই বিক্রি করে, রাতে বন্ধ করে। তার বউ মোমোকো মামী বই দোকানে তাকে সাহায্য করা ছাড়াও পাশের রেস্টুরেন্টে কদিন ধরে কাজ করছে কারণ সেখানকার হেডসেফ চলে গেছে। রেস্টুরেন্টের মালিক তাকে অনুরোধ করেছে এই কয়েকটা দিন সাহায্য করতে। সেখানেই সে কাজ করছে সন্ধ্যার সময়টা । তাকাতো অফিস শেষ করে সময় পেলেই চলে আসছে জিমবোচোতে । শুধু যে মামার বইয়ের দোকানেই সে সময় কাটাচ্ছে সেটাই না, এই রাস্তায় অন্য সব দোকানগুলোর সাথেই তার একটা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । মাঝে মাঝে তার প্রেমিক ওয়াদাও এসে হাজির হয় তার সাথে। 

এভাবে যখন দিন কেটে যাচ্ছিল তখন তাতাকো তার মামা আর মামিকে এক প্রকার জোর করেই ট্রিপে পাঠায় ঘুরতে। বিয়ের পরে তাদের আর এক সাথে ঘুড়ে বেড়ানো হয় নি । এই দুইটা দিন তাকাকো নিজে দোকান সামলায়। তবে প্রথম দিন ক্ষণে ক্ষণে মামার ফোনে এসে হাজির হয় । তবে দ্বিতীয় অদ্ভুত ভাবেই সেই ফোন আসা বন্ধ হয়ে যায়। তাকাকোর কাছে মনে হয় যে মামা বুঝি সময় উপভোগ করছে মামির সাথে। 

টোমো মেয়েটার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় । টোমো মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে তাকানোর নম্বরটা ব্লক করে রেখেছে । কিন্তু কেন সেটার কোন কারণ তাকানো জানে না । তবে সে যে কোন ভাবেই টোমোর সুনজরে আসতে চায় । টোমো একবার একটা গল্পের বইয়ের নাম বলেছিল। গোল্ডেন ড্রিম নাম বইটার । তাকানোর ইচ্ছে আসছে টোমোর জন্মদিনে এই বইটা তাকে উপহার দিবে। তাকাকোর কাছে সে সাহায্য চায় এই বইটা খোজার ব্যাপারে । দুজন মনে পুরো শহর জুড়ে খুজে দেখার চেষ্টা করে । কিন্তু তারপরেও বইটার কোন খোজ পাওয়া যায় না ।

তবে টোমো কেন তাকানোর কাছ থেকে দুরে থাকে সেই রহস্য এক সময়ে তাকাকো জানতে পারে । টোমোর জীবনের গল্পটা এখানে আমরা জানতে পারি । অন দিকে ওয়াদার প্রতি তাকাকো তার প্রেমিক ওয়াদাকে তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে দেখা করতে দেখে ফেলে । তখন তাকাকো অদ্ভুত এক দোটানায় পড়ে । নিজের মনের ভেতরে এক দ্বন্দ্ব পড়ে যায় না । সে ভাবতেই পারে না যে ওয়াদা ওর সাথে প্রতারণা করবে। এমন কি ওয়াদার সাথে সত্যি কথাটা জানতে চাইতেই তার সাহস হয় না । যদি যে সত্যি সত্যিই প্রাক্তন প্রেমিকার কাছে ফিরে যায় তাহলে তাকাকো সেটা কিভাবে সহ্য করবে! 

ঠিক এই সময়েই মারিসাকি বুকসপে এক খারাপ সংবাদ এসে হাজির হয় । সাতোরু মামা তাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলে । ঘটনাটা তার মামীর সম্পর্কিত । ঠিক যে কারণে মামী মোমোকে দুরে চলে গিয়েছিল সেটা আবার ফিরে এসেছে। এই বার পুরো ব্যাপারটা ওরা কিভাবে সামাল দিবে সেটা তাকাকো জানে না । সে তার মামাকে খুব ভাল করেই চেনে ।

বইয়ের শেষটা একই সাথে দুঃখের এবং আশার । আগের বইতেই আমরা দেখছি কিভাবে তাকাকো গভীর হতাশার জীবনে ডুবে গিয়েও আবার নিজের জীবনে ফিরে আসে । এই বইতে সেই একই ধরণের একটা ঘটে । 

জীবন চলার পথে আমাদের দুঃখ কষ্ট আর প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা এসে হাজির হবেই । এমন কোন মানুষ হয়তো এই দুনিয়াতে নেই যার জীবনে কষ্ট এসে হাজির হয় নি । কিন্তু তবুও মানুষের থেমে থাকলে চলবে না । থেকে থাকলে চলে না । সবাইকে এগিয়ে চলতেই হয় । 

প্রথম পর্বটা যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে এই পর্বটাও আপনাদের ভাল লাগবে । মূলত প্রথম পর্বের পরে এই গল্পটা পড়লে পুরো কাহিনীর একটা পূর্ণতা এসেছে বলীই আপনার মনে হবে । 

বইয়ের অনুবাদ নিয়ে একেবারে উন্নত মানের আমি বলব না । আগের পর্বের অনুবাদ ছিল সালমান হক । তার অনুবাদটা বেশ ভাল ছিল । এই বইয়ের অনুবাদ করেছে আসাদুল লতিফ । সত্যি বলতে অনুবাদটা আরেকটু ভাল হতে পারতো। সব থেকে যে ব্যাপারটা আমার কাছে দৃষ্টি কটু মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে সে সাতোরু আঙ্কেল বলতেছে অথচ তার বউকে বলতেছে মামী। আঙ্কেল না অনুবাদ করে মামা অনুবাদ করলেই বুঝি বেশি মানান সই হত। এছাড়া দুই তিনটা লাইন পড়ে কেমন যে খাপ ছাড়া মনে হয়েছে আমার কাছে। হয়তো একেবারে আক্ষরিক অনুবাদ বসিয়ে দিয়েছে সেখানে । তবে সেটা ভাবানুবাদ হলেই আরু যুতসই হত । 

এই বই নিয়ে একটা অডিও রিভিউ করার চেষ্টা করেছিলাম। এখান থেকে শুনতে পারেন সেটা। 

মোর ডেইজ অ্যাট দ্য মারিসাকি বুকশপ  
লেখক- সাতোশি ইয়াগিসাওয়া
অনুবাদ- আসাদুল লতিফ