পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ ব্লাডস্টোন


 নাজিম উদ দৌলার ছোট গল্প নিয়ে আমার ধারণা খুবই ভাল, বিশেষ করে থ্রিলার গল্প লেখায় তার জুড়ি নেই । আমার পড়া সেরা দশটা থ্রিলার গল্পের লিস্ট যদি তৈরি করতে বলা হয়, তাহলে তার ভেতরে নাজিম উদ দৌলার গল্প থাকবেই । কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে তার লেখা উপন্যাস গুলোর ব্যাপারে আমার ধারণা ততটা ভাল নয় । আমার পড়া বাজে উপন্যাস গুলোর ভেতরে তা কয়েকটা উপন্যাস রয়েছে

। তার লেখা প্রতিটি উপন্যাসেরই শো-শা খুব বেশি, শুরুটা মনে হবে খুব ভাল কিন্তু আসলে ভেতরে কিছুই থাকে না । ইনকারনেশন, মহাযাত্রা তারপর এই ব্লাডস্টোন সবই একই । ব্রিজরক্ষক ছোট গল্পটা আমার জীবনের পড়া শ্রেষ্ঠ গল্প গুলোর একটা । তবে সেটা থেকে লেখা উপন্যাসটা কেমন হবে, সেটা এখনও যেহেতু পড়ি নি, তাই বলতে পারছি না । বইটা কেনা আছে কিন্তু হয়তো পড়লো আশাহত হব এই জন্য এখনও পড়া হয় নি ।


যাই হোক আজকের গল্প ব্লাডস্টোন নিয়ে । বইটা ২০১৬ সালে কিনলেও পড়েশেষ করলাম কয়েক দিন আগে । বইয়ের কাহিনী দিয়ে শুরু করি । 


ইতিহাসের পাতায় ব্লাডস্টোন এক রহস্যময় নাম । ঢাকার একটা হোটেলে এই পাথরের প্রদর্শনীর সময়ে সবার চোখের সামনে থেকে তারা চুরি হয় । চোর ধরতে ইনেস্পেক্টর মুনসুর হালিম এসে হাজির হয় । প্রদর্শনীর সময় সবাইকে জেরা করে সে, কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে । তার নজরে পড়ে একটা চিরকুটের দিকে । সেখানে বাংলাতে লেখা ''অ্যামিতিস তোমাকে ভালবাসি'', রহস্য সমাধানের জন্য সে হাজির হয় ইতিহাসের প্রফেসর রুদ্র রাশেদের কাছে । রুদ্র রাশেদ এই ব্লাডস্টোনের ইতিহাস বের করে একসময় জানা যায় যে আসলে বাংলাদেশেরই বেশী অধিকার রয়েছে এই ব্লাড স্টোনের উপরে । 


উপন্যাসে কিভাবে ব্লাডস্টোন তৈরি হল, কেন তৈরি করা হয়েছিলো, তারপর সেটা কিভাবে হারিয়ে গেল, কোন কোন হাত পেরিয়ে সেটা বর্তমান অবস্থানে এল সেটা দেখানো হয়েছে । অর্থ্যাৎ সেই সময় গুলোকে খন্ড খন্ড দৃশ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে । এক পর্যায়ে চোরের কাছে পৌছে যায় পুলিশ । কিভাবে সবার চোখের সামনে থেকে ব্লাডস্টোন চুরি যায় সেটাও জানা যায় । 

এই হচ্ছে কাহিনী । 


এই গল্পে সাসপেন্স থ্রিল কিংবা একটা ভাল প্লট সব কিছুরই অভাব ছিল । সব থেকে বেশি বিরক্ত লেগেছে ইতিহাস আশ্রিত দৃশ্য গুলো উপস্থপান । সেই দৃশ্য উপস্থাপন, বর্ণনা  খুবই সাধারন এবং অতিরিক্তি কথা বার্তায় ভর্তি মনে হয়েছে এবং সেই চরিত্র গুলো কথোপকথনের বর্ণনা ছিল খুবই নিন্মমানের । মনে হচ্ছিলো যেন বর্তমান ইউটিউবে স্বপ্ল বাজেটের বাংলা নাটকের সংলাপ পড়ছি। এমনই যে পড়তে গেলে বিরক্তি চলে আসে । অন্য দিকে মুনসুর হালিমকে লেখক কিভাবে বর্ণনা করতে চেয়েছেন ঠিক বুঝতে পারি নি । একদম শুরু থেকে এই চরিত্রের আচরন আমাকে প্রচন্ড বিরক্ত করেছে । একটা চরিত্রকে বিরক্তিকর ভাবে উপস্থাপন করা এবং  অন্য দিকে চরিত্র উপস্থাপন করতে গিয়ে পাঠকের মাঝে বিরক্তির উদ্রেক করা দুটো ভিন্ন বিষয় ! মুনসুর হালিমের ব্যাপারে দ্বিতীয়টি ঘটেছে । আর লেখক সেখানে টুইস্ট দিতে চেয়েছেন সেখানে টুইস্টের বদলে রাগ সৃষ্টি হয়েছে। 

সব মিলিয়ে অর্থ আর সময়ের এক অপচর ! লেখক সাহেবের দক্ষতা ছোট গল্প লেখায় । সেদিকে যদি তিনি আরও বেশি সময় দেন তাহলে ভাল হবে বলে মনে হয় । সবাইকে কেন উপন্যাস লিখতেই হবে ! 



ব্লাডস্টোন

লেখক নাজিম উদ দৌলা

আদী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত, মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা ২৫৫, মুদ্রিত মূল্য ২৮০