লম্বা
সময়ের রিডার্স ব্লক কাটিয়ে একটা বই পড়ে শেষ করতে পারলাম । মনে হচ্ছে রিডার্স
ব্লকটা কেটে গিয়েছে । কাল রাতে বইটা শেষ করতে পেরেছি । বইটার নাম “কুয়াশিয়া” ।
লেখক আশরাফুল সুমন । আধুনিক রূপকথার গল্প অর্থ্যাৎ বইটার ধরন ফ্যান্টাসি । বাংলা
ভাষায় বাংলাদেশী লেখকদের লেখা ফ্যান্টাসি গল্প আমি এর আগে পড়েছি বলে মনে পড়ে না ।
ছোট খাটো গল্প পড়া হয়েছে কিন্তু বিশাল সাইজের ফ্যান্টাসি উপন্যাস আমার এই প্রথম ।
সেই হিসাবে লেখক সাহেবকে অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ।
উপন্যাসের
কাহিনী সংক্ষেপ টা শুরু অ্যারেন কে নিয়ে । অ্যারেন আস্তে আস্তে বুঝতে পারে তার আশে
পাশে সব কিছু ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এই পরিবর্তন টা সে ছাড়া আর কেউ বুঝতেও
পারছে না । নিজেকে এক সময় পাগল ভাবতে শুরু করে সে । ভাবে হয়তো তার মাথা হয়তো খারাপ
হতে চলেছে । কেন তার সাথে এমন হচ্ছে এমন জানার আগেই তার জীবনে নেমে আসে অন্য এক
বিপদ । তার সব থেকে কাছের মানুষটা তারই ভুলের জন্য হারিয়ে যায় কুয়াশিয়ায় ।
কুয়াশিয়া জগতটাকে একটা নদীর সাথে তুলনা করা যায় যেটা পৃথিবীর উপর দিয়ে প্রবাহিত
হয়ে চলেছে । এই জগতে ভয়ংকর সব প্রাণীদের বসবাস । সেখান বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেলেই সেটা
পৃথিবীর শৃঙ্খলাকে বিনষ্ট করে ।
অ্যারেন
সেই কুয়াশিয়ার দিকেই রওয়ানা দিলো তার বাবাকে ফেরৎ নিয়ে আসার জন্য । সঙ্গী হল দুজন
এলিস এবং সামারলান । তিন জনের মিলিত চেষ্টায় তার এগিয়ে চলল কুয়াশিয়ার দিকে । এক
শক্তিশালী অস্ত্রের খোজে যেটার সাহায্য আবারও তার বাবাকে ফেরৎ আনা যাবে । কিন্তু
তারা নিজেও জানতে পারলো না যে এই সবই আগে থেকেই ঠিক করা ছিল । তের বছর আগের করা এক
প্রোফেসীকে সত্য করার জন্য এগিয়ে চলেছে তারা । সেই প্রোফেসীটা সত্য হলে, এক
প্রাচীন শক্তি আবারও ফিরে আসবে । আবারও পৃথিবীতে আরেকটা মহা যুদ্ধ শুরু হবে । তিন
হাজার বছর পূর্বে এক মহাযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, সেই রকম
আরেকটা মহা যুদ্ধ হতে চলেছে । এখন অ্যারেন এবং তার বন্ধুরা মিলে কি পারবে সেই
শক্তিকে ঠেকাতে?
সেটা
জানতে হলে বই পড়তে হবে !
বইয়ের
ভাল দিক হচ্ছে কাহিনীর এগিয়ে চলা । কাহিনী কখনই ঘুমিয়ে পড়ে নি কিংবা মনে হয় নি
আটকে গেছে । লেখকের লেখার হাতও বেশ । যেহেতু সম্পূর্ন ভাবে এটা একটা ফ্যান্টাসি
তাই পাঠক যখন বইটা পড়তে যাবে তখন তার কল্পনা শক্তিটা অনেক ভাল হওয়া চাই । তাহলে
লেখকের লেখটা মনে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারবে এবং তখন বইটা তার কাছে আরও বেশি
আকর্ষনীয় মনে হবে । তবে একটা খারাপ দিক হচ্ছে বইয়ের সংলাপ । আমার কাছে বইয়ের সংলাপ
বেশ দূর্বল মনে হয়েছে । এতো বড় বইয়ের চরিত্রদের সংলাপ গুলো আরও বেশি স্বাভাবিক এবং
বুদ্ধিদীপ্ত হওয়ার দরকার ছিল কিন্তু সেখানে লেখককে আমার খানিকটা ব্যর্থ মনে হয়েছে
। কিছু কিছু জায়গাতে সংলাপ গুলো এতোটাই কৃত্রিম মনে হয়েছে সে সেটা লেখার উপর থেকে
মনযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে গেছে । তবুও কাহিনীটা আকর্ষনীয় ছিল বলেই আবারও সেই মনযোগ
ফিরে এসেছে । এই একটা ব্যাপার বাদ দিলে কুয়াশিয়া চমৎকার একটা বই ।
কি নেই
আসলে বইটাতে ! একশান, খানিক রোমান্স, বন্ধুত্ব জাদু ড্রাগন আরও কত কিছু । যারা
ফ্যান্টাসি বই পড়তে পছন্দ করেন তারা এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন । আমাদের দেশে এই রকম
লেখা খুবই কম । আরও লেখা উচিৎ ।
বইয়ের
নাম কুয়াশিয়াঃ স্পেলমেকারের অনুসন্ধান
লেখকঃ
আশরাফুল সুমন
প্রকাশিত
হয়েছে রোদেলা প্রকাশনী থেকে । মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা ৪৩২ ।
হ্যাপি
রিডিং ।