পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ জন্ম ও যোনির ইতিহাস

 জান্নাতুল নাঈম প্রীতির  ''জন্ম ও যোনির ইতিহাস'' নিয়ে অনলাইনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে । পুরো বইয়ের কয়েকটি পাতা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে । সেই পাতা গুলোতে প্রীতি খোলাখুলি সেক্সের আলাপ করেছে । ব্যাস চারিদিকে ছিছি পড়ে গেছে । আমি শতভাগ নিশ্চিত যে ১৭৩ পাতার এই বইটা আসলে কেউ পড়েই নি । যা পড়েছে ঐ তিনচার পাতা ।

আরও ভাল করে বললে কয়েকটা লাইনই কেবল পড়েছে সবাই । বইটা আজকে মেলা থেকেও ব্যান করে দেওয়া হয়েছে । বই না পড়ে বইয়ের ব্যাপারে এই জ্ঞানী গুণীর আলাপ এটা আমার কাছে খুব চমৎকার লাগে । বেশ কয়েক বছর ধরেই এই বোকদো৳%## অনলাইনে ঘটে চলেছে ! 


এই বইটা পড়ার ইচ্ছে আমার ছিল না । কিন্তু আজকে কী মনে করে সারা ধরে এই বইটা পড়ে শেষ করলাম । বইটা ঠিক আত্মজীবনী হয়েছে কিনা আমার সেটা জানা নেই । কারণ আত্মজীবনী বই আমি আগে যা পড়েছি এই বইতে সে সবের খুব একটা বালাই নেই । এখানে লেখিকা নিজের জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরেছেন । আরও ভাল করে বললে তার নামে মামল হওয়ার পরে সে কিভাবে পালিয়ে বেড়ালো এবং প্যারিসে গিয়া হাজির হল সেটাই মূল ফোকাস এই বইয়ের ।  বইয়ের এই অংশটুকু পড়ার সময় আমি কিছু সময় আসলে লেখিকার তখনকার জীবনটা কল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম । একবার কল্পনা করে দেখুন ২৫/২৬ বছরের একটা মেয়ের নামে মামলা হয়েছে । কেন মামলা হয়েছে কারণ একজন রাজনৈতিককে নিয়ে সে কিছু লাইণ লিখেছেন ফেসবুকে । সেটা সত্য কি সত্য না সেটা আশা করি আপনারা নিজেরাও ভাল করেই জানেন । কিন্তু কিভাবে একটা রাষ্টযন্ত্র একজন ২৫ বছরের মানুষের পেছনে এভাবে পড়তে পারে? এর থেকে ভয়ংকর ব্যাপার কি হতে পারে কোন কিছু? আমার নামে এমন কিছু হলে আমার অবস্থা যে কী হতে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারি না । সেই তুলনাতে এই মেয়ে যে টিকে গেছে এর থেকে বড় আর কিছু হতে পারে না । সত্যই পারে না । 


বইয়ের একটা চ্যাপ্টারে সে নিজের সেক্স লাইফের কথা লিখেছে । সব মিলিয়ে সম্ভবত ৩ থেকে ৫ পাতা । তার ভেতরে কয়েকটা লাইনে আপনি পাবেন এই শুয়েছিলাম টাইপের কথা । এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই লাইণ গুলো কি মিথ্যা ? মিথ্যা হলে অবশ্যই এই কাজ মোটেই উচিৎ হয় নি । কিন্তু যদি সত্যি হয় তাহলে কি এই কথা বইতে লেখা উচিৎ হয়েছে? প্রশ্ন আসতে পারে কারো প্রাইভেসী এভাবে নষ্ট করা ঠিক কিনা ! আমার কাছে আমি একজনের সাথে যখন আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার শেয়ার করবো, সে আমার কাছে তার ব্যক্তিগত ব্যাপার শেয়ার করবে, তাকে চুমু খাবো কিংবা আরও অন্য কিছু করবো ব্যক্তিগত ভাবে, আমি কোন ভাবেই চাইবো না সেই জিনিস পাব্লিক্যালি আসুক । আমি নিজেও যে কাজ করবো না কখনই । এই বইতে লেখিকা ঠিক একই কাজই করেছেন । সব থেকে মজার হচ্ছে এই বইতে লেখিকা নিজেকে এমন ভাবে তুলে ধরেছেন যেখানে মনে হতে পারে আমি তো এমনিই করেছি কোন অপরাধ নেই কিন্তু ওরা খুব অপরাধ করেছে । এই ব্যাপারটা আরো ভাল করে উদাহরন যদি দেই, ধরুন আমি একটা মেয়েকে মেসেজ দিলাম । সেই মেয়েটি অন্য একটা ছেলেকে মেসেজ দিল । আমাদের দুজনের কথা একই ছিল । এই ব্যাপার লেখিকা লিখবে তানভীর বেটা এতো বদ আমাকে মেসেজ দিছে । আর নিজের বেলাতে লিখবে আমি তো এমনি সময় কাটানোর জন্য মেসেজ দিয়েছিলাম । পুরো বইতে সে এভাবেই নিজেকে তুলে ধরেছে ।

তারপরেও আত্মজীবনীতে আপনার সাথে ঘটনা সব রকম কাহিনী আপনি লিখতে পারেন । ঠিক বেঠিকের আলাপ না হয় নাই করলাম । এই বইতে আরেকটা খারাপ ব্যাপার হচ্ছে সে অন্য মানুষের ব্যাপারেও একই ভাবে যা ইচ্ছে লিখে গেছে । এখানেও উদাহন যদি দেই তাহলে এভাবে দেওয়া যায় যে আমি ওমুকের সাথে শুয়েছিলাম । ওর আগের প্রেমিকার ওমুকের সাথে শুয়েছে তার এই ছিলো ঐ ছিল এমন ছিল সত্যমিথ্যা জানি না এটা এমন হয়েছে !

লেখিকা আরেকটা ব্যাপার খুব করে হাইলাইট করেছেন সেটা হচ্ছে তিনি একজন শিল্পী । খুব করে মানুষজনকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন দেখো আমি এই খানে আছি, এই বৃত্তি পাই এই আমি খুব প্রতিভাবান । আর দুনিয়ার সকল বিখ্যাত লেখক হচ্ছে তার অতি পছন্দের লেখক । আমি আসলে বলতেই পারি সাদাত হোসেন মন্টো আমার পছন্দের লেখক । যদিও তার লেখা আমি কোন দিন পড়ি নি । আমার কয়েকটা চেপ্টার পড়ার সময়ে কেবল এই মনে হয়েছে । 

তবে সব কিছুর পরেই এই বইয়ের শুরুর দিকটা আমার কাছে সত্য আর বস্তু নিষ্ঠই মনে হয়েছে । একজন নারী আমাদের দেশে কিভাবে জীবন পার করে এটা লেখিকা বেশ ভাল করেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । হ্যা এটা সত্য যে পুরুষজাতির উপরে একটা তীব্র রাগ সেখানে প্রকাশ পেয়েছে তারপরেও যা সে লিখেছে আমার মনে হয় নি তা অসত্য। এই দেশ, এই সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের নীতি কিংবা দেশে যে অরাজকতা চলছে সে ব্যাপারে লেখা লেখিকার প্রতিটি লাইনে কোন মিথ্যা আপনি খুজে পাবেন না । হ্যা অনেক কিছুই আপনার পছন্দ হবে না কিন্তু আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না । 

বই নিয়ে আর কী বলবো । আপনাদের কেবল বলি যে বই পড়ুন । বই পড়ে তারপর সেই বইয়ের ব্যাপারে, সেই বইয়ের লেখিকার ব্যাপারে মন্তব্য করুন। বই না পড়ে দয়া করে বোকদোোচি করবেন না ।