মরিসাকি বইঘরের দিনগুলো

 তাকাকোর জীবনটা হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে যায় । তার ভালবাসার মানুষ হিদেয়াকি যখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে যে সে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে । অথচ তাকাকোর সাথেই হিদেয়াকির প্রেম চলছিল । হিদেয়ারি একই সাথে দুইজনের সাথে প্রেম করছিল । এই ব্যাপারটাই তাকাকো মেনে নিতে পারে না । কিন্তু প্রতারণার প্রতিবাদও করতে পারে না । নিরবে দূরে সরে আসে । একই অফিসে চাকরি করতো তারা । তাই চাকরি ছেড়ে দেয় তাকাকো । নিজের ভাড়া করা ফ্লাটে দিনরাত শুয়ে বসে দিন কাটাতে থাকে । কিন্তু তাকাকো খুব ভাল করেই জানে যে এভাবে সে খুব বেশি দিন পার করতে পারবে না । যখন তার জমানো টাকা শেষ হয়ে যাএ তখন তাকে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে তার হোম টাউনে ফিরে যেতে হবে।

তাই বাধ্য হয়েই সে তার মায়ের পরামর্শ মত তার মামা সাতোরুর কাছে কিছু থাকতে গেল । তার মামার জিম্বোচোতে একটা বইয়ের দোকান রয়েছে । তিন পুরুষ ধরে তাদের এই বই বিক্রির ব্যবসা । মামা কোমরে ব্যাথার কারণে সকালে তাকে যেতে হয় । সেই সময়ে তাকাকোর দায়িত্ব থাকবে বইয়ের দোকানটা খোলা আর কাস্টমার সামলানো। তাকাকো হাজির হল মরিসাকি বইয়ের দোকানে। তার থাকার জায়গা হল বইয়ের দোকানের উপরের একটা ঘরে । সেখানেও বইয়ের রাজ্য । প্রথম কিছু দিন কেটে গেল কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই । তারপর একদিন তাকাকো খানিকটা কৌতূহল থেকেই একটা বই তুলে নিল হাতে । তারপর সে যেন প্রবেশ করলো নতুন এক জগতে । বই যে মানুষের জীবন যে কিভাবে বদলে দেয় সেটাই বইয়ের এই অংশে দেখা যায়। একেবারে নতুন একজন মানুষে পরিণত হয় । সেই বইয়ের দোকানের আশে পাশের মানুষ জনের সাথে পরিচয় হয় তাকাকোর । নতুন একটা জীবনে গিয়ে হাজির হয় ।

তারপর একদিন তাকাকো বইয়ের দোকানটা ছেড়ে আবারও টোকিওতে গিয়ে হাজির । মূলত এই বইয়ের দোকানে সে এসেছিল নিজের জীবনে যে অন্ধকার অবস্থার ভেতরে পরেছিল সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে। সেটা সে সফল ভাবেই পার করে ফেলে ।

টোকিও ফেরত যাত এবং নতুন ভাবে কাজ শুরু করে। গল্পের প্রথম অংশের শেষ এখানে। তাকাকো তার যে মামার কাছে গিয়ে উঠেছিল সেই মামা এক সময়ে উড়নচণ্ডি টাইপের মানুষ ছিল । তারপর তারপর তার একটা মেয়ের সাথে পরিচয় বিয়ে হয় । দুজন মিলে বইয়ের দোকানটা সামলাতে থাকে । তারপর তাকাকোর মামাকে ছেড়ে তার মামী চলে যায় । সেই সময়ে মামা অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়েছিল। তাকাকো নিজের জীবনে ফিরে যাওয়ার পরে একদিন তার মামা ফোন করে জানায় যে তার স্ত্রী ফিরে এসেছে । যেমন করে একদিন কিছু না বলে চলে এসেছে ঠিক একই ভাবে ফিরে এসেছে । তার মামা তাকে দায়িত্ব দেয় যে তার মামী আসলে কী চায় সেটা জানার জন্য ! তাকাকো মামীর সাথে ভাব জমায় । তারা এক সময়ে এক সাথে বেড়াতে চায় পাহাড়ে । সেই সময়ে মামী তাকে জানায় যে কেন সে ছেড়ে চলে গিয়েছিল আর কেন ফিরে এসেছে । 

বইটা পড়ার পরে আমার মনে অদ্ভুত একটা অনুভূতি এসে ভর করেছিল । তাকাকো তার মামা আর মামীর জন্য । কিছুটা আনন্দ আর কিছু বলব না বইটা নিয়ে । বইটির পেছনে লেখা ছিল মরিসারি বইয়ের দিনগুলো কেবল একটি বইয়ের দোকানের গল্প না। বইয়ের দোকানের পেছনের মানুষের গল্প । সত্যিই তাই । মানুষের জীবনের গল্প আমাদের হাসায় আবার কাঁদায় ! মনকে করে উদ্বেলিত !

সালমান হকের অনুবাদ মোটামুটি ভালই । পড়তে বিরক্তি আসে নি ।