বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাসঃ আলালের ঘরে দুলাল

 চাকরির পরীক্ষার জন্য যারা প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা সবাই জানেন যে বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম উপন্যাসটার নাম আলালের ঘরে দুলাল । লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র । আমি অবশ্য এই তথ্য জেনেছিলাম যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য পড়ছিলাম । তখন থেকেই মনের ভেতরে একটা ইচ্ছে ছিল যে এই বইটা পড়বো । কিন্তু সেই ইচ্ছে সম্প্রতি এসে পূরণ হয়েছে । পড়ে ফেলেছি বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস । বইটা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে । তখন অবশ্য তিনি লিখেছিলেন টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে । 


উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা করা যাক । নাম থেকেই কাহিনী সম্পর্কে একটা পাওয়া যাচ্ছে গল্পটা কেমন হতে পারে । ভেতরের কাহিনীও ঠিক তেমনই । বাবুরামবাবুর টাকা পয়সা অনেক । তার বড় ছেলে মতিলাল এবং ছোট ছেলে রামলাল । বাবুরামবাবুর তার বড় ছেলে প্রতি তার অঘাত বিশ্বাস । ছেলে তার লাখে একটা । ছোট বেলা থেকে মতিলাম নষ্ট হওয়ার পথে যায় এবং এর পেছনে তার বাবার পূর্ণাঙ্গ হাত থেকে । সে ছেলের দোষ দেখেও একেবারে দেখে না । ছেলেকে সে পড়াশুনার জন্য বালীতে পাঠান কিন্তু সেখানেও সে কিছু কুসঙ্গ জোগার করে অকর্ম করতে থাকে । মানুষজনকে জ্বালাতন করতে থাকে । এক সময়ে সে পুলিশের কাছে ধরা পর্যন্ত খায় তবে বাবুরাম বাবু ঠকচাচার সহায়তায় তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে ।


অন্য দিকে তার ছোট ছেলে রামলাল বড় ভাইয়ের বিপরীত । বাপের সেবা করে মায়ের সেবা করে । তাদের মান্য করে কিন্তু বাবুরাম বাবুর মতে ছোট নাকি খানিক পাগল । দুনিয়াদারি সে কিছু বুঝে না । 

দিন কে দিন মতিলালের আচরন খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকে । এক সময়ে বাবুরাম বাবু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । মারা যাওয়ার পরে দেখা যায় বাবুরাম বাবু উইল অনুযায়ী সব সে সব কিছুর মালিক হয়ে ওঠে । তখন তাকে আর পায় কে। অর্থ আসলে দুধের মাছির অভাব হয় না ঠিক তেমনি ভাবে মতিলালের আশেপাশেও তাদের আগমন ঘটে । ঠক চাচা আর বাঞ্জারাম এতোদিন বাবুরাম বাবুকে কুমন্ত্রনা দিয়ে এসেছিলো এখন মতিলালের পেছনে লাগে তারা । আস্তে আস্তে তাকে কুমন্ত্রনা দিতে থাকে ।

নিজের মায়ের সাথে তার আচরন খারাপ হতে থাকে দিনকে দিন । তার মা আর বোন ঘর ছেড়ে চলে যায় । অন্য দিকে ছোট ভাই রামলালকে সে বাসায় ঢুকতে মানা করে দেয় ! রামলাল ঘর ছেলে দেশান্তরি হয় !

মতিলাল আস্তে আস্তে মতিলাল তার সব অর্থ সম্পদ হারাতে থাকে । যে কয় স্থানে ব্যবসা করতে যায় সব স্থানে লোকসান খায় । টাকা পায়সা খুইয়ে আসে । তবে তার আমদ ফূর্তি কমে না । এক সময়ে সে সব কিছু হারিয়ে ফেলে । দেনায় দায়ে ডুবে যায় । তার আসে পাসে যারা এতোদিন ছিল সবাই সরে পড়ে । 

একটা সময়ে সে নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং একাই পথে পথে ঘুরতে থাকে । এক সাধুর কাছে এসে আশ্রয় নেয় শিক্ষা গ্রহনের জন্য ! গল্পের শেষের দিকে রামলালের সাথে তার মা আর বোনের দেখা হয় । রামলাল তখন অনেক বড়লোক হয়ে গেছে । এবং বড় ভাইয়ের সাথেও তার দেখা হয় । তাকে ক্ষমা করে তারা আবার তাদের আগের বাড়িতে চলে আসে আর সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাক ! 


এই হচ্ছে আলালের ঘরে দুলাল উপন্যাসের গল্প । যখন এই উপন্যাস লেখা হয়েছিল বোধকরি তখনকার সময় অনুযায়ি এটার কাহিনী ছিল চমৎকার কিন্তু বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করলে এ অতি সাধারন একটা গল্প । অবশ্য তখনও সাহিত্যিক বিশ্লেষকরা এটাকে একটা সার্থক উপন্যাস বলেন না । তবুও বাংলা ভাষার প্রথম উপন্যাস বলে কথা । এর আবেদনই আলাদা ।