দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট

 অ্যালিসিয়া এবং গ্যাব্রিয়েল সুখী দম্পতি। দুইজনই নিজেদের পেশায় সফল।  অ্যালিসিয়া লন্ডনের একজন সফল চিত্রশিল্পী। তার পেইন্টিংয়ের নিয়মিত প্রদর্শনী হয়, হাজার হাজার ডলারে সেগুলো বিক্রিও হয়। অন্য দিকে তার স্বামী গ্যাব্রিয়েল একজন সফল ফ্যাশন ফটোগ্রাফার। শহরের অভিজাত অঞ্চলে বসবাস করে। বাইরে থেকে দেখলে দেখা যাবে তাদের মত সুখী সম্পতি বুঝি আর কেউ নেই। কিন্তু সেই সুখী পরিবারেই ঘটে গেল এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা। 

একদিন রাতে প্রতিবেশী অ্যালিসিয়ার বাড়ি থেকে গুলির আওয়াজ শুনতে পেল। সাথে সাথে পুলিশে ফোন করল সে। পুলিশ যখন বাড়ি ঢুকল তখন দেখতে পেল যে গ্যাব্রিয়েল চেয়ারের সাথে হাতপা বাধা অবস্থায় রয়েছে। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অন্য দিকে অ্যালিসিয়া মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে সে। 

অ্যালিসিয়াই যে তার স্বামীকে গুলি করেছে সেই ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ থাকে না। কিন্তু অ্যালিসিয়া সেই ঘটনার পর থেকে একটা কথাও বলে না। সে নিজের দোষও স্বীকার করে না আবার অস্বীকারও করে না। পুলিশ কোন ভাবেই তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারে না। হাউজ এরেস্ট থাকা কালীন সময়ে সে কেবল একটা ছবি আঁকে। নিজের প্রোট্রেইট। আর ছবির নাম দেয় অ্যালসেস্টিস। অ্যালসেস্টিস হচ্ছে গ্রিক মিথের সেই নারী, যে স্বামীর জন্য নিজের জীবন বলি দেয়। 

তার উকিল বিচারককে বোঝাতে সক্ষম হয় যে অ্যালিসিয়া মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হোক। তাকে পাঠান হয় গ্রোভ নামের একটি সুরক্ষিত মানসিক হাসপাতালে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলতে থাকে। 

এদিকে এই গল্পের মূল ন্যারেটর থিও ফেবার পেশায় একজন সাইকোথেরাপিস্ট। সে অ্যালিসিয়ার এই কেস নিয়ে সে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সে জানতে চায় যে কেন অ্যালিসিয়া কথা বলা বন্ধ করে দিল। কী সেই কারণ। সে নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রোভে এসে চাকরি নেয় কেবল মাত্র অ্যালিসিয়ার চিকিৎসা করার জন্য। সে নিজের সাথে অ্যালিসিয়ার মিল খুজে পায়। তার মতে সে অ্যালিসিয়া চিকিৎসার মাধ্যমে মূলত নিজেরই সাহায্য করছে। তার শৈশবটা সুখের ছিল না। সে যেমন মানসিক অশান্তির মধ্যে দিন পার করেছে অ্যালিসিয়াও হয়তো তেমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়েই যাচ্ছে বা গেছে। তাই সত্যটা তাকে জানতেই হবে। 

থিও কেবল অ্যালিসিয়াকে থেরাপী দিয়েই বসে থাকে না। তার মতে অ্যালিসিয়া এই নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার পেছনে তার অতীত জড়িত। সে ধীরে ধীরে অ্যালিসিয়া অতীত সম্পর্কে জানতে শুরু করে। একই সাথে তার নিজের জীবনের গল্পও এগিয়ে যেতে থাকে। তার সুন্দরী অভিনেত্রী স্ত্রী ক্যাথি অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এটা জানার পরেও থিও ভাল স্বামী হওয়ার অভিনয় চালিয়ে যায়। 

এক সময়ে থিওকে অ্যালিসিয়া তার নিজের লেখা ডায়েরি পড়তে দেয়। আস্তে আস্তে সব সত্য বের হয়ে আসে। অ্যালিসিয়া আসলে কেন হত্যা করেছিল তার স্বামীকে? নাকি সে তার স্বামীকে হত্যা করে নি। অ্যালিসিয়া প্রতিবেশি বলেছি যে একজন লোক তাকে ফলো করতো সব সময়। সেদিন কি সেই লোকটা এসে তার স্বামীকে হত্যা করেছিল? অ্যালিসিয়া কেন কথা বলা বন্ধ করে দিল? থিও কি সত্যিই তার মুখ দিয়ে কথা বের করবে পারবে? থিও কি কেবল নিজের সাথে অ্যালিসিয়ার জীবনের মিল আছে বলেই এই কেইসটা নিয়ে এমন আগ্রহী ছিল, অ্যালিসিয়াকে সাহায্যের মাধ্যমে নিজেকে সাহায্য করাই কি তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল? নাকি আরও কোনো কারণ ছিল?

সালমান হকের অনুবাদটা বেশ সাবলীলই বলা যায় এখানে। পড়তে আশা করি খারাপ লাগবে না। শেষের কারণটাও ভালই লাগবে আশা করি যদিও আমার মনে আগে একটা সন্দেহ জেগেছিল। তাই আমি একেবারে বিমোহিত হয় নি। যদি আপনি সেটা বুঝতে না পারেন তবে বই শেষ করে বেশ ভাল লাগবে আশা করি। 

হ্যাপি রিডিং।