লিলির জীবনের গল্প। লিলির মনে দুঃখের সীমা নেই। তার জন্ম হয়েছে অতিদরিদ্র এক পরিবারে। বাবা মা আর দুই বোন নিয়ে তাদের সংসার। তার বাবা চেয়ারম্যান বাড়ির সারা বছরএর বাঁধা কামলার কাজ করে। মাও প্রায়ই দিনই গিয়ে হাজির হয় চেয়ারম্যান বাড়িতে কাজের জন্য। লিপি এবং তার বোন ঝিলিও এই কাজে সাহায্য করে। তবে তার বড়বোন ঝিলি এই কাজ করে না। নানান রকম অযুহাত দেখায়। তার মনে যদি সে একবার এই কাজে হাত লাগিয়ে ফেলে তাহলে তার মান সম্মান থাকবে না। তখন তার প্রেমিকের বাড়ির লোকজন আর তাকে মেনে নিবে না। অন্য দিকে তার বাবার মতে কাজ করলে কোন অসম্মান হয় না। লিলি তারপরেও চেয়ারম্যান বাড়িতে আসতে পছন্দ করে না। এখানে এলেই চেয়ারম্যান বাড়ির প্রাচুর্য্য তার চোখে পড়ে। এটা তাদের দারিদ্রতার বারবার মনে করিয়ে দেয়।
অথচ চেয়ারম্যান তার বউ তাদের মেয়ে রূপা লিলিকে খুবই পছন্দ করে। রূপা তার সব নতুন নতুন জামা লিলিকে দিয়ে দেয়। লিলির মনে হয় রূপা কেবল হয়তো লিলিকে জামা দিতেই নতুন জামা কেনে।
লিলি দিন চেয়ারম্যান বাড়িতে গিয়েই জানতে পারে যে বাড়ির বড় ছেলে গ্রামে আসছে শীত দেখতে। সাথে তার কিছু বন্ধু বান্ধবও আসছে। এই জন্য চেয়ারম্যান বাড়িতে আনন্দ উৎসব শুরু হয়। লিলি চেয়ারম্যানের এই ছেলেকে আগে দেখে নি। সে এতোদিন মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছে। তার মামা মারা যাওয়ার পরে গ্রামে এসেছে।
চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সালের সাথে লিলির দেখাটা হয় অঘটনের মাধ্যমে। সেখান থেকেই শুরু। একের পর এক ঘটনা লিলির সাথে ঘটতেই থাকে। এক সময়ে লিলি সেই দুসাহস করেই ফেলে । নিজের পারিবারিক অবস্থা সত্ত্বেও ফয়সালের প্রেমে পড়ে যায়।
এরপরেই শুরু হয় লিলি নিজের সাথে যুদ্ধ। নিজের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে একবার সে ছুটে যায় ফয়সালের কাছে। কিন্তু ঠিক একদম শেষ মুহুর্তে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর?
ফয়সাল কি কখনো জানতে পারে যে তাদের বাড়ির উপর নির্ভশীল থাকা একটা পরিবারের মেয়ে তাকে কী নিদারুন ভাবে ভালোবেসেছিল? এই ভালবাসার কথা জানতে পেরে ফয়সালের মনের ভাব কেমন হয়েছিল?
তৃধা আনিকার বই মানেই হচ্ছে চোখের সামনে পূরিপূর্ন প্রেমের বাস্তুসংস্থান ফুটে ওঠা। এই বাস্তুসংস্থানের ভেতরে সব কিছু থাকে। এদের ভেতরে কিছু চরিত্র থাকে যারা প্রধান চরিত্রের জন্য অসম্ভব মায়া প্রদর্শন করে। চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী হাফসা সুলতানা ঠিক এমন দুইটা চরিত্র। পুরো বই জুড়েই এই দুইজন মানুষ লিলি এবং তার পুরো পরিবারের জন্য যে পরিমান ভালোবাসা দেখিয়ে গেছে সেটা দেখে আমি বারবার ভেবেছি যে বাস্তবে কি এমন চরিত্রের মানুষ সত্যিই আছে? আমার এই জীবনে কিন্তু এমন মানুষ আসলেই দেখি নি কোন কখনই। কিন্তু তারপরেও আমার এই চরিত্রগুলো কে বড় বাস্তব মনে হয়েছে। মনে হয়েছে যে যদি এমন মানুষগুলো আমাদের চারিপাশে থাকত তাহলে কতই ভাল হত। এখানেই বুঝি লেখকদের একটা স্বার্থকতা ! এরা সমাজকে নিজেদের সৃষ্ট চরিত্র দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে যে দেখো তোমাদের এমন আচরণ করা উচিৎ।
বই শেষ করার পরে আপনার মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি এসে হাজির হবে। আরও ভাল করে বললে আপনি খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন। আপনার একই সাথে লিলির জন্য যেমন আনন্দ হবে আবার সেই লিলির জন্যই আপনার মন খারাপ হবে। ক্যালকুলেটিভ ফয়সালের জন্য হয়তো মন কেমন করবে কিন্তু সব থেকে মন খারাপ হবে রূপার জন্য। পুরো বইয়ের সব থেকে নিঃশ্বাস চরিত্র আপনার মনে হবে রূপাকে। অথচ দেখুন লেখক তার ভাগ্যটা কেমন করে লিখে রাখল। কাজটা ঠিক হয় নি।
যদিও বানান ভুল নিয়ে আমার কথা একদম সাজে না। কারণ আমার লেখায় প্রচুর বানান ভুল হয়। বইতে দুইটা বানান ভুল আমার চোখে পড়েছে এছাড়া এক কি দুই জায়গায় কমা দেওয়া উচিৎ ছিল সেখানে দাড়ির ব্যবহার করা হয়েছে।
বইমেলায় এবার বইটা বের হয়েছে। অন্যধারা থেকে। দেরি না করে আজই সংগ্রহ করে নিন আজই।