শী এন্ড হার ক্যাট





বছরের শুরুটা হয়েছে চমৎকার একটা বই দিয়ে। কিছু কিছু বই থাকে যে বই গুলোতে কোন এক্সাইটমেন্ট নেই, কোন টানটান উত্তেজনা নেই, শান্ত স্নিগ্ধ একটা গল্প কিন্তু তারপরেও বইটা যখন পড়ে শেষ করা যায় তখন মনের ভেতরে একটা আলাদা আনন্দের অনুভূতি এসে জড় হয়, শী এন্ড হার ক্যাট বইটাও ঠিক একই রকম। পুরো বইটাতেই আমাকে এই একটা শান্ত অনুভূতি দিয়ে গেছে বইটা। বইটা কাহিনীর একটা পাড়াকে কেন্দ্র করে। সেই পাড়াতে থাকা চারজন মানুষ আর তাদের চারটা বেড়াল। এই নিয়ে পুরো বইটা। চারজন মানুষই গল্পের কোন না কোন পর্যায়ে একে অন্যের সাথে দেখা করে তবে তারা একে অন্যের কাহিনীর সাথে খুব বেশি জড়িত নয়। মূল গল্পটা চারটা ভাগে বিভক্ত এবং এই চার ভাগে চারজন মেয়ের জীবনের গল্প সেই সাথে তাদের চারটা বেড়ালের গল্প। 

এই বইয়ের একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, বইটা কেবল মাত্র বইয়ের চরিত্রদের দিক থেকে বর্ণনা করা নয় বরং বেড়ালের দিক থেকেও বর্ণনা করা হয়েছে। একটা বেড়াল কিভাবে ভাবছে না ভাবছে কী করে বেড়াচ্ছে সেটাও বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় বেড়ালের মনস্তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এই ব্যাপার আমার কাছে মজার লেগেছে। তবে মাঝে মাঝে একটু হাসিও এসেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ বয়সের বেড়ালও অনেক কিছু বুঝে ফেলছে। অবশ্য আমরা এটা সম্ভব কোন কালেই জানতে পারব না যে আসলে বেড়ালের মাথার ভেতরে কী চলছে । 

জাপানিজ গল্পগুলোতে যেমনটা হয় এই বইটাতেও তার ব্যতীক্রম থাকে না। মানুষের জীবন জীবন একাকিত্ব সেই একাকিত্বকে ঘিরে জীবন এগিয়ে এলা আবার এক সময় আবার নতুন করে কাউকে ভালবাসা। এই চারটা গল্পের একটাতে দেখা যায় একটা মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে ব্রেকআপ করে কষ্টে থাকে, কিভাবে সেই কষ্টের সাথে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যায় জীবনে সেটা দেখানো হয়, অন্য একটা গল্পে দেখা যায় বাবা মায়ের বিচ্ছেদের কারণে মেয়েটা একা একা তার নানীর বাসায় এসে থাকে । তারপর কিভাবে সে তার পছন্দের জীবন খুজে পায়। অন্য একটা গল্পে প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে একটা মেয়ে মানসিক বিপর্যয় থেকে কিভাবে সেরে ওঠে । শেষ গল্পটাতে একটা মাঝ বয়সী মহিলার গল্প যে কিনা আজীবন মানুষের সেবা করে আসে । এক সময়ে সেও কেমন করে একাকী হয়ে যায়। এই চারজনের গল্পেই বেড়াল একটা বড় ভূমিকা পালন করে । 

বইটা এক বসাতেই পড়ে শেষ করা সম্ভব। খুব বেশি জটিল চিন্তা ভাবনার দরকার পড়বে না এমন কি আপনার মস্তিস্কের উপরে আলাদা চাপও সৃষ্টি করবে না। তবে বইটা পড়ে শেষ করে আপনার মনের ভেতরে একটা আলাদা আনন্দের অনভূতি ঠিকই জন্ম দেবে। আমি বাংলা অনুবাদ পড়েছি। অনুবাদ করেছেন সোহানা রহমান।


বইটা কিনতে পারেন রকমারি থেকে