আসমান

 

আসমান বইটা অর্ডার দিয়ে আমার মনে হয়েছিল যে হুদাই অর্ডার দিলাম । একটা ফেসবুক পোস্ট দেখে চট করে অর্ডার দিয়েছিলাম। এতো এতো বই রয়েছে ঘরে নতুন করে আরেকটা বই কেনার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু অর্ডার তত সময়ে চলে গেছে। একদিন পরেই বই এসে হাজির । সেদিন সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। আমার বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। তাই বইটা নিয়ে বসলাম। অনেক দিন পরে এক বসায় একটা বই পড়ে শেষ করলাম।   

আগে বইয়ের কাহিনী বলা যাক। বলতে পারেন পুরো কাহিনীই তুলে ধরব তাই স্পয়েলার আছে । বইয়ের কাহিনীর সময়টা এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ১৯৯৬ সাল। মূল চরিত্রের নাম ওমর। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । জীবনের এক কঠিন পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে। ভালবাসার মানুষটির কাছ থেকে তীব্র ভাবে প্রতারিত হয়ে যে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। তার এক বন্ধু রয়েছে রুশো নামে। রক ব্যান্ড আছে। জিম মরিসনের ভক্ত। সারাদিন গাজা আর ফেন্সির নেশায় বুদ হয়ে থাকে। ওমর গাজা না খেলেও তার সাথে ফেন্সী খায়। ওমরের সাথে তার ভাল বোঝাপড়া । দুই দুজনকে ভাল বোঝে । আড্ডা দিয়ে সময় পার করে দেয়। 

এমন ভাবে যখন দিন পার হয়ে যাচ্ছে আর তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছে তখন ওমরের মায়ের কথা মত সে ধানমন্ডির এক মসজিদের ইসহাক হুজুরের সাথে দেখা করে । এক পর্যায়ে তাদের ভেতরে এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় । ওমরের ভেতরে পরিবর্তন আসে । সে আর নিজেক নেশার জগতের দিকে নিয়ে যায় না । ফিরে আসে । বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর ড্রপ দিয়েছিল তারপর আবার পড়াশোনা শুরু করে। বাকিটা সময় তার কাটে ইসহাক হুজুরের সাথে । জীবন নিয়ে তাদের ভেতরে নানান আলোচনা হয়। 

এরপর ওমর তাবলিগ জামাতের সাথে পাকিস্তানে গিয়ে হাজির হয় । কিন্তু তার আর ফিরে আসা হয় না । সেখানে তার পরিচয় হয় খালেদ নামের এক আফগান যোদ্ধার সাথে। সে তালিবানদের জন্য যোদ্ধা সংগ্রহ করতে এসেছে। ওমর তাদের দলে গিয়ে ভিড়ে যায় । ট্রেনিং সমাপ্ত করে সরাসরি যুদ্ধে গিয়ে যুক্ত হয় । প্রবল সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে বটে তবে এক পর্যায়ে সে মারাত্বক ভাবে আহত হয় । ওমরের বাচারই কথা ছিল না তারপরেও বেঁচে যায়। খালিদ তাকে নিজের ভাই বানিয়ে নিজের বাড়ি নিয়ে । সেখানেই তার দেখা শোনা চলে। 

খালেদের বাড়িতেই তার বোন আসমা তার দেখাশোনা শুরু করে । আসমা নার্সিংয়ে পড়াশোনা করছিল। তাই দেখা শোনা করতে সমস্যা হয় না। এক পর্যায়ে আসমা ওমরকে পছন্দ করতে শুরু করে । ওমরও তাই । ওমর সুস্থ হয়ে সেখানকার একটা স্কুলে পড়ানোর কাজ শুরু করে । গল্পের এই পুরো সময়টা চলে যখন আফগানে তালিবান শাসন চলছে। তারপর টুইন টাওয়ারে হামলা হল । আমেরিকা আফগানদের উপরে আক্রমন চালালো । এই সময়ে খালেদরা আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। শুরুর আগে খালেদ নিজের বোনের সাথে ওমরের বিয়ে দিল যাতে ওদের পরিবারের একেজন পুরুষ অভিভাবক থাকে । 

আক্রমন শুরুর পরে খালেদের বাড়ির উপর হামলা হয় বিমান থেকে। সেই সময়ে ওমর ছিল স্কুলে আর আসমা ছিল হাসপাতালে । এই দুজন ছাড়া বাকি সবাই মারা পরে । এক পর্যার ওমর আসমাকে হাসপাতালে রেখে নিজে চলে যায় যুদ্ধে । তবে সে মার্কিনীদের হাতে ধরা পড়ে । সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কিউবার সেই কুখ্যাত কারাগারে । 

এই মোটামুটি গল্প । তবে এক পর্যায়ে এসে ওমর মুক্তি পায়। নতুন এক দেশে নতুন ভাবে তার জীবন শুরু হয় । সেই জীবনে কি আসমা থাকে নাকি আফগানের সেই যুদ্ধেই সে হারিয়ে যায়? এই শেষ কথাটা নাই বললাম। এই টুকু বইতেই থাকুক !

বইয়ের লেখকের হাত যে খুব পাঁকা সেটা বলব না । তবে মানান সই । গল্পের কাহিনী একেবারে সহজ তবে পড়তে বিরক্তি আসবে না । লেখক মানুষের জীবনে ধর্মের একটা বিরাট ভূমিকা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । এবং আমার মনে হয় যে অনেকাংশে তিনি না সফল ভাবেই করতে পেরেছেন। তবে একটা ব্যাপার আমার কাছে একটু অপছন্দের মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে এই বই পড়ে অনেকেই আফগানে চলে যেতে চাইবে তালিবানদের সাথে যুদ্ধ করতে ! 

ছোট বই তাই পড়তে পারেন । আশা করি ভালই লাগবে।


বইয়ের নাম আসমান
লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী