ওয়েস্টার্ন সিরিজঃ জলদস্যু ও নীলগিরি



অনেক দিন পরে ওয়েস্টার্ন পড়ে শেষ করলাম । এক টানে দুইটা। বই দুইটার নাম জলদস্যু এবং নীলগিরি। ওসমান সিরিজের দুটো বই। গল্পের চরিত্র এবং প্রেক্ষাপট একটা অন্যটার সাথে জড়িত । একটার পরের কাহিনী অন্যটা। শুরুর বইটার নাম জলদস্যু। গল্পের প্রথম চরিত্র এলেন ওসমান। ইংল্যান্ডের এক হাওড় অঞ্চলে তার জন্ম বেড়ে ওঠা। অল্প কিছু জমির মালিক সে। বাবা রেখে গেছে তার জন্য। ওসমানের বাবা একজন বিখ্যাত সৈনিক। যুদ্ধে তার বীরত্বের কথা অনেকেই জানে। বাবা মারা গেছেন বছর তিনেক আগে। তারপর থেকে সে একাই এগিয়ে চলছে জীবনের পথে। বাবা এলেনকে যুদ্ধবিদ্যা শিখিয়ে গেছেন । দারুন তলোয়ার চালাতে পারে সে। তবে এই যুদ্ধবিদ্যা জানার ব্যাপারটা সে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে । সবাই তাকে চেনে চাষী হিসাবেই।

ঘটনার শুরু হয় ছয়টা প্রাচীন মুদ্রা পাওয়ার পর থেকে । রাস্তা দিয়ে হাটতে গিয়ে একটা খাদে পড়ে যায় যে । মাতাল ছিল খানিকটা তা সেখানেই পড়ে যায় । সেখানে ভাগ্যক্রমে খুজে পায় মুদ্রগুলো । বিক্রি করতে যায় একজনের কাছে। সেখানে একজন বৃদ্ধর সাথে পরিচয় হয়। সেই  বৃদ্ধা তাকে একজন বিখ্যাত লোকের খোজ জানায় যে কিনা বাকি সব মুদ্রাগুলো কিনে নিতে পারবে। এবং এই বিখ্যাত আর্ল তার বাবাকে খুব ভাল করেই চেনে । সেই হিসাবে তার কথাও জানে।

তবে পথে মধ্যে আবারও ঝামেলায় পড়ে যায় সে । একজন ধনীর ভাতিজার সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে । তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জাড়ি হয় । সে পালিয়ে প্রথমে যায় হাওড়ের ভেতরে তারপর সেখান থেকে লন্ডন শহরে। তবে বিপদ তার পিছু ছাড়ে না। পালাতে গিয়ে একজন জাহাজ ক্যাপ্টেনের বাসায় গিয়ে হাজির হয় । পরিচয় হয় তার মেয়ে রেবেকার সাথে। সেখান থেকেই পরিকল্পনা করে জাহাজে চড়ে সে পাড়ি মজাবে আমেরিকাতে। সেখানেই ব্যবসা করবে । 

তবে পরিকল্পনা একটু বদলে যায় যখন তাকে সেই অভিজাতের ভাতিজা এক জলদস্যুর হাতে তাকে ধরিয়ে দেয় । জলদস্যু তাকে নিয়ে পাড়ি দেয় সমুদ্রে। সেখানেই তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। এভাবেই আমাদের গল্প এগিয়ে চলে। এক সময়ে সে আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্য পৌছে যায়া । সেখানে গিয়েই সে বুঝতে পারে যে এখানেই সে তার বাকি জীবন থাকবে। 

তবে পরিস্থিতির কারণে তাকে আবার ফিরে যেতে হয় ইংল্যান্ডে । যাওয়ার আগে সে প্রতিজ্ঞা করে যায় যে আবারও ফিরে আসবে সে।



নীলগিরির গল্প শুরু হয় এই জলদস্যুর গল্পের শেষ থেকে । এলেন যে স্বর্ণ মুদ্রা পেয়েছিল সেই কথা অনেকেই জেনে যায় । তাদের সবার মনে এই ধারণা জন্মে যে ওসমান রাজা জনের গুপ্তধন পেয়েছে। রাজা জন একবার বিপুল পরিমান ধন সম্পদ নিয়ে যাচ্ছিলেন সমুদ্রের পাশ দিয়ে । সেই সময়ে তার গাড়ি তীব্র ঝড়ের কবলে পড়ে এবং সেই গাড়ি পড়ে সমূদ্রে । সেখান থেকেই সেটা হারিয়ে যায় । জলদস্যু বইয়ের শুরুতে এলান যে স্বর্ণ মুদ্রা পেয়েছিল সবাই ধারনা করে নেয় যে এলান ওসমান সেই গুপ্তধন পেয়েছে। পুরো ইংল্যান্ড তার পিছু নেয়। তার নামে পরোয়ানা জারি হয়।

এবার সত্যি সত্যি তাকে ইংল্যান্ড ছেড়ে পালাতে হবে। আর কোন পথ নেই । জাহাজ নিয়ে পাড়ি দেয় আমেরিকার উদ্দেশ্যে। সাথে তার বন্ধু এবং প্রেমিকা রয়েছে যাকে নিয়ে সামনের দিকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছে সে। তবে পালাতে যে পাড়ে না । নৈবাহিনীর জাহাজ তাকে মাঝ পথেই ধরে নিয়ে যায় । নিক্ষেপ করে কুখ্যাত কারাগারে। 

জেল থেকে পালিয়ে আবারও সে রওয়ানা দেয় আমেরিকার  উদ্দেশ্যে । অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এক সময়ে আবারও মিলিত হয় তার প্রিয়তাম প্রেমিকার সাথে। আমেরিকার বুনো পরিবেশে তাদের জীবন শুরু হয়। তবে সেই জীবন বড় কঠিন । বন্য পরিবেশ যেমন আছে সেই সাথে রয়েছে আদিবাসীদের হামলার ভয়। বারবার হামলা করে তারা । প্রতিহত করে ওসমান । তবে এক সময়ে হয়তো আর সে প্রতিরোধ করতে পারবে না । এভাবেই গল্প এগিয়ে চলে ।


আমি ওয়েস্টার্ন সিরিজের খুব বড় ভক্ত নই। প্রতিটা ওয়েস্টার্ন সিরিজেই নায়ককে সবার থেকে দক্ষ এবং অজেয় হিসাবে দেখানো হয়। এই ব্যাপারটা আমার কেন জানি ঠিক ভাল মনে হয় না । অনেকটা মেকি মনে হয়। ওসমান সিরিজেও এর ব্যতীক্রম হয় নি। ওসমানের সাথে কেউ যুদ্ধে পারবে না । 

গল্পের প্রেক্ষাপট অনেক পুরানো । সেই যোলশ শতক । যে সময়ে সমুদ্রে কাঠের জাহাজ চলত, জলদস্যু ঘুরে বেড়াতে, কামান নিয়ে যুদ্ধ চলত । বই দুটো পড়তে তাই মন্দ লাগে নি। বুনো পরিবেশের বর্ণনা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে যদি সেই সময়ে জন্মগ্রহন করতাম তাহলেই বুঝি ভাল হত। এই তীব্র আধুনিকতা ছেড়ে বনে জঙ্গলে বসবাসের ব্যাপারটা নেহত মন্দ নয়। 

যারা ওয়েস্টার্ন সিরিজ পছন্দ করেন তারা এই বইদুটো পড়তে পারেন । সময় ভাল কাটবে আশা করি।  


ওসমান সিরিজ
জলদস্যু ও নীলগিরি
লেখক রওশন জামিল