গ্রাফিতিও প্রশ্ন করে

লেখকদের সমাজের দর্পন বলা হয়। মাঝে মাঝে কিছু বই পড়ে এই কথাটা আরো ভাল করে উপলব্ধ হয়। লেখকরা আসলেই সমাজের দর্পন । তারা তাদের লেখার মাধ্যমে সমাজে কী হচ্ছে সেই ব্যাপার গুলো তুলে ধরে। নিজের লেখায় মাধ্যমে সময়টাকে স্থির করে রাখে। ‘গ্রাফিতিও প্রশ্ন করে’ ঠিক তেমনই এক সমাজের দর্পন। এই গল্প এক অবরুদ্ধ সময়ের  গল্প। মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছে। না পারছে তারা কথা বলতে না পারছে নিজের মত প্রকাশ করতে । তাদের প্রতিটি কাজ কর্মের উপরে রয়েছে কর্তৃপক্ষের কড়া চোখ । এমন লেখকরা পর্যন্ত নিজের মত মত লেখা লিখতে পারছে না । শিল্প সংস্কৃতি আর সাহিত্য হয়ে পড়েছে অবরুদ্ধ । লেখকরা লেখা বন্ধ করে দিয়েছে । কেবল গুটি কয়েক লেজুরবৃত্তির লেখকরা টিকে নিজেদের বিবেককে বিক্রি করে দিয়ে।

এই গল্পের প্রেক্ষাপট আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর ভবিষ্যতের । পারমানবিক চুল্লির বিষ্ফোরণের ফলে বাংলাদেশ পুরো বিশ্ব থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । দেশের বেশির ভাগ মানুষই মারা যায়, দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল হয়ে পড়ে বসবাসের অযোগ্য । তারপর আবার বাঙালিরা ঘুরে দাঁড়ায় । ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় । এবং এই সুযোগে ইকবাল খান ক্ষমতা দখল করে এবং দেশকে একজন স্বৈরশাসকের মত শাসন শুরু করে। একটা সময়ে এমন এক অবস্থা হয় যে কারো পক্ষে কোন কথা বলা সম্ভব না । কিছু বলতেই সেটা চলে যেতে পারে উন্নয়নের বিরুদ্ধে । তাকে তখন পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্বাসনে। নিরাপদ তেজস্ক্রিয় অঞ্চলের বাইরে । এই গল্পের কাহিনী একদম আমাদের চারপাশের পরিচিত ঘটনার সাথে মিলিয়ে নিতে পারবেন।

এই গল্পের মূল চরিত্র সুহান রিসায়াত । দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল জীবিত বিশ্বে, সিনেমা বানাবে বলে। কিন্তু একটা সময়ে তার  মনে হয় সে উপন্যাস লিখবে। উপন্যাস তার লিখতে হবে দেশে এসেই । জীবিত বিশ্বে ছেড়ে সে দেশে ফিরে আসে । তারপরই সে খুজতে থাকে তার উপন্যাসের উপজীব্য । এক সময়ে সে পেয়ে যায় তার উপন্যাস লেখার বিষয় বস্তু । সুহান ঠিক করে সে উপন্যাস লিখবে ঋজুশিরকে নিয়ে । ঋজুশির হচ্ছে সেই গ্রাফিতি শিল্পী সে রাতের আধাতে শহরের দেয়ালে গ্রাফিতি একে চলে যায় । কর্তৃপক্ষ শত চেষ্টা সেই শিল্পীকে ধরতে পারে না । ঋজুশির তার গ্রাফিতির মাধ্যমে দেশের শাসন ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন ছুড়ে দেয় । আর এই মৃত বিশ্বে এই প্রশ্ন করাকে পছন্দ করে না । 

উপন্যাসের কাহিনী আপনি যতই পড়তে থাকবেন ততই আপনি আশে পাশের অনেক কিছুর সাথেই মিল খুজে পাবেন। বুঝতে পারবেন লেখক খুব সুক্ষ ভাবে বইয়ের কোন ঘটনাকে বাস্তবের কোন ঘটনার ছাপ রেখে লিখেছেন । হ্যা অবশ্যই এটা ফিকশন কিন্তু এই ফিকশনের উৎস আপনার চোখের সামনেই ধরা পড়বে । লেখার শুরুতে যে বললাম লেখকরা সমাজের দর্পন যে বলা, সেই ব্যাপারটা আপনি আরেকটা ভাব ভাবেই টের পাবেন। 

বর্তমান সময়ের অনেক লেখকের লেখাই আমি পড়েছি। তবে সুহান রিজওয়ান তাদের সবার থেকে আলাদা, সবার থেকে এগিয়ে । এই বছরে যদি একটা মাত্র বই পড়ার কথা আপনি চিন্তা করে থাকেন তাহলে এই ‘গ্রাফিতিও প্রশ্ন করে’ পড়ে দেখতে পারেন । নিঃসন্দেহে বইটা বাংলা সাহিত্যে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। বইটার দামটা যদিও একটু বেশি তবে ভাল জিনিসের দাম বেশি হবে এটা স্বাভাবিক । 

গ্রাফিতিও প্রশ্ন করে

লেখক সুহান রিজওয়ান