শেষ মৃত পাখি

তনয়া দিল্লির বিখ্যাত একটি পত্রিকার সাংবাদিক । একটা ক্রাইম সিরিজ লেখা শুরু করে সে ।  সেখানে বিখ্যাত ও আলোচিত অমিংমাশিত অপরাধের গল্লগুলো ভিন্ন আঙ্গিকে এবং ভিক্টিম ও অভিযুক্তের জবানীতে তুলে নিয়ে আসে। কোন কিছু প্রমান করতে নয় বরং আমরা যেভাবে গল্প শুনি, সেটার থেকে বেরিয়ে অন্য তুলে ধরে। কথা ছিল এই রকম চারটা গল্প তুলে নিয়ে আসবে কিন্তু সিরিজটা এতোই জনপ্রিয়তা পায় যে চারটা থেকে গল্প গিয়ে দাঁড়ায় ষোলতে। সেই সিরিজের শেষ গল্প লিখতে তনয়া হাজির হয় দার্জিলিং শহরে। ৪৪ বছর আগে এখানে একটা খুনের ঘটনা ঘটেছিল । সেই খুনের কোন সমাধান সেই সময়ে হয় নি। অদ্ভুত ভাবেই পুলিশ কাউকে ধরতে পারে নি অথবা ধরে নি । কেস সেখানে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময়ে যার নামে খুনের অভিযোগ সে বর্তমান সময়ের বিখ্যার লেখক অরুন চৌধুরী এবং খুন যে হয়েছিল সে ছিল অরুনের বন্ধু অমিতাভ। একজন ছিল লেখক যে কিনা পরবর্তিতে দেশের বিখ্যাত ক্রাইম থ্রিলার বেস্ট সেলার লেখক হয়ে উঠেছে অন্যদজন ছিল তারই বন্ধু কবি। অরুনের বিরুদ্ধে কোন প্রমান পাওয়া যায় নি । খুনের রাতে অরুনের প্রতিবেশি একমহিলা দেখেছিল যে অরুনের সাথে অমিতাভের হাতাহাতি হয়েছিল এমন কি বন্দুকের আওয়াজও শুনেছিল সে। মহিলা তখন অমিতাভ থেকে অরুনের বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে দেখে। পরে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে অরুনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে যখন অমিতাভের লাশ পাওয়া যায় তখন দেখা যায় তাকে ভয়ংকর ভাবে খুন করা হয়েছে । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যখন খুনের সময়ে অরুন নিজে বসে ছিল থানায়। তাই তার পক্ষে খুন করা সম্ভব ছিল না তবুও অনেকের মনেই এখনও সন্দেহ যে খুনটা অরুন চৌধুরীই করেছিল। সেই খুনের গল্প লিখতে তনয়া হাজির হয়। তার কোন প্রমানের দরকার নেই। তার কেবল গল্প দরকার । ১৬ হাজার শব্দের গল্প যা পাব্লিক খাবে। 

প্রথমে অরুন চৌধুরী রাজি না হলেও পরে তনয়াকে আসতে বলেন নিজেই এবং সাক্ষাতের প্রথম দিনই তিনি বলেন তিনিই খুনটা করেছেন। তবে সেই একই সাথে এটাও জানান যে কেন আর কিভাবে খুণটা করেছেন সেটা তিনি তনয়াকে বলবেন না । বললে নাকি তনয়া বিশ্বাস করবে না। তার বদলে তিনি তনয়ার হাতে ধরিয়ে দেন অমিতাভের লেখা একটা মার্ডার মিস্ট্রির উপন্যাস। অভিতাভ কবি হলেও সে উপন্যাস লেখা শুরু করেছিল। অসমাপ্ত উপন্যাস যেটা কিনা অভিতাভর ঘর থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছিল। অরুনের মতে অমিতাভ নাকি তার আসন্ন মৃত্যু আগে থেকেই দেখতে পেয়েছিল। সেটা নিয়ে লিখেছিল উপন্যাস তবে শেষ করে যেতে পারে নি। এটা সমাধান করতে পারলেই তনয়া অমিতাভর খুনীকে খুজে পাবে। 

শুরুতে তনয়া উপন্যাসের দিকে খুব বেশি মনযোগ দেয় না । তার আসলে সত্য জানার খুব বেশি আগ্রহও ছিল না । সে কেবল গল্প চাচ্ছিল। সেই সময়ে যারা এখনও জীবিত আছে তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করে। সবাই ইন্টারভিউ নিতে শুরু করে। কিন্তু এক সময়ে বুঝতে পারে সে অমিতাভর উপন্যাসের দিকে তার মনযোগ দিতেই হচ্ছে। 

আসলেই এটা সম্ভব ? অমিতাভ কি নিজের খুনের ভবিষ্যত দেখতে পেয়েছিল? আসলেই কি অরুন চৌধুরীই খুনী? নাকি অন্য কেউ খুন করে অরুন চৌধুরীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল? এসবের উত্তর পাওয়া যাবে গল্পের শেষে। 

বইয়ের নাম, শেষ মৃত পাখি । মার্ডার মিস্ট্রি ভাল লাগলে পড়তে পারেন । অনেক দিন পরে বেশ চমৎকার একটা মার্ডার মিস্ট্রি পড়ে শেষ করলাম । আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন।



শেষ মৃত পাখি

লেখকঃ শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য