মুখোশের দিন বৃষ্টির রাত

তিনটা গল্পের পাশাপাশি ছুটে চলা । এর ভেতরে একটা গল্প শুরু হয়েছিল আঠার বছর আগে । পরের দুটো সময় সাময়িক। এই গল্পের পৃথিবী আমাদের বর্তমান পৃথিবী থেকে একটু আলাদা । এই গল্পে মানুষকে বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক পরতে হয় । কারণ তেজস্ক্রিয়তায় পৃথিবীর একটা অংশের বায়ু হয়ে গেছে দুষিত। এই দুষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিলে মৃত্যু নিশ্চিত। তাই সবাইকেই পরতে মাস্ক। 

তাই চাহিদা মোতাবেগ দেশে তৈরি হয় মাস্ক তৈরির কারখানা। নিন্মমানের মাস্ক তৈরি করে বাজারে ছাড়ে কিছু স্বার্থসন্ধানী গোষ্ঠি। সেই নিন্ম মানের মাস্কের কারণেই মৃত্যু হয় স্কুল ছাত্রের। শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন । সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তা দাবানলের মত । দেশের মানুষের কাছে সেটা সমর্থনও পায় । ক্ষমতায় থাকা কর্তৃপক্ষ প্রথমে সব দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে দেখা যায় ছাত্রদের উপরেই চড়াও হয় । পালিত গুন্ডা বাহিনী দিয়ে হামলা চালান হয় । দেশের মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হাতে । পরে বেঁছে বেঁছে সবার উপরে বিপদ নেমে আসে যারা যারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল । 

দেশে একদল উর্দিপরা শান্তিসঙ্ঘের লোক পরিকল্পনা করে বিদ্রোহ করার । তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে দেশের প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে বসানো। তাদের মতে দেশের এই অরাজকতায় পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য এর বাইরে আর কোন উপায় নেই । তারা দলে টানতে চায় আড়িপাতা সংস্থার উপপ্রধান হায়দারকে । অথচ হায়দারের রয়েছে নিজেস্ব পরিকল্পনা। অনেক দিন ধরেই সে এটার পেছনে কাজ করে চলেছে । অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নেয় যে বিদ্রোহীদের সাথে যুক্ত হবে । এটা তার নিজেস্ব পরিকল্পনায় কাজের সাহায্য করবে । তারপর সেই সময়ে এগিয়ে আছে । বিদ্রোহীরা হামলা করে। প্রাথমিক বিজয়ও নিশ্চিত করে । 

এদিকে শহর থেকে দুরে নির্জন একটা চা বাগানে দেশের গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তি জড় হয় বিনোদনের জন্য । দেশের আবহাওয়ার অবস্থা তখন বেশ খারাপ । এই বৃষ্টি বাদলার দিনে একে একে হাজির সব অতিথিরা । তারপর এক সময়ে সেখানে একজন খুন হয় । পুলিশকে যখন ফোন করা হয় তখন জানা যায় সে দেশে একটা ক্যু হয়েছে । এখন তারা আসতে পারবে না । তবে কিছু সময় পরেই সেখানে গোয়েন্দা বিভাগের তিনজন এসে হাজির হয় । তাদের নেতা হায়দায় । সেই সব অথিতিদের জেরা করতে শুরু করে । আস্তে আস্তে অতীত খুড়ে বের হয়ে থাকে । ১৮ বছর আগে ঘটা কিছু অপরাধের সাথে অতিথিদের সংযোগ বের হতে থাকে । এভাবের গল্প এগিয়ে যায় । একে একে এই তিন দৃশ্য কিভাবে একে অন্যের সাথে যুক্ত সেটা আপনার কাছে একেবারে পরিস্কার হয়ে উঠবে। 

এই বইটা শুরুর প্রথম দিকে আমার মনে আছে দুই দিনে আমি মাত্র বিশ পঁচিশ পেজ পড়েছিলাম । কিন্তু তারপরেই একেবারে এক ধাক্কায় দুইশ পেজ পড়ে ফেললাম । লেখকদের যে সমাজের দর্পন বলা হয় সেই কথাটাই আমার বারবার মনে হচ্ছিল । বর্তমান সময়ে বেশির লেখককেই দেখা যায় কর্তৃপক্ষের লেজুরবৃত্তি করতে । অথচ লেখকদের একতা দায়িত্ব থাকে সমাজে কী হচ্ছে সেটা দল মত নির্বিশেষে তুলে ধরার । 

কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে হয়ে কিশোর আন্দোলনের দিকটা নিরাপদ মাস্ক আন্দোলনের মাধ্যমে এতো নিঁখুত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে  পড়ার সময়ে আপনাকে বারবার পেছনে ফিরে যেতে হবে ভাবতে হবে। এরপরে সেই আন্দোলনের পরে ঠিক ভাবে বাচ্চাদের হেনস্তা করা হয়েছিল সেই অন্যায়গুলো খুব সুক্ষ ভাবে তুলে ধরা ধরেছেন লেখক। 

শুরুর দিকে আপনার ঘটনা গুলো খানিকটা খাপছাড়া মনে হতে পারে । পড়ার সময়ে মনে হবে যে একটার সাথে অন্য ঘটনার হয়তো কোন মিলই নেই তবে কাহিনী যত এগিয়ে যাবে আপনি তত কাহিনীর ভেতরে ঢুকে পড়বেন । শেষ না করা পর্যান্ত অন্য কোন কিছু চিন্তা করতে পারবেন না । অনেক দিন পরে কোন বই পড়ে আমার এতোটা ভাল লাগল । এই বইটা আরও প্রচুর মানুষের পড়া উচিৎ ! 



বইয়ের নাম মুখোশের দিন বৃষ্টির রাত

লেখক সুহান রিজওয়ান

বাতিঘর থেকে প্রকাশিত