জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে

 বর্তমান সময়ে যে কয়জন লেখক খুব ভাল করছে তাদের ভেতরে কিশোর পাশা ইমন অন্যতম । এতো কম বয়সে এতো চমৎকার লেখার হাত সবার ভেতরে থাকে না । তবে লেখায় এখনও তার পরিরপূর্ণ পরিপক্কতা আসে নি । তবে সেটা কোন সমস্যা না । সময়ের সাথে সেটাও চলে আসবে । এই বয়সেও তার লেখা অন্য যে কোন লেখক থেকে অনেক এগিয়ে । আপনারা যারা তার লেখা আগে পড়েছেন সেটা ভাল করেই জানেন । এরই ভেতরে তার অনেক বই পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে । এমনই একটা বইয়ের নাম ''জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে''। 


বাংলাদেশের দুর্নীতি অরাজকতা সমাধানের ক্ষেত্রে অনেক মানুষ অনেক রকম ভাবেই মত দেন । কারো মতে দেশে সঠিক গনতন্ত্র আনতে পারলেই বুঝি সব সমাধান হয়ে যাবে । কেউ ভাবে আর্মির হাতে ক্ষমতা দিয়ে সব ঠিক আবার কেউ মনে করে যে ইসলামী শরিয়া শাসন হলেও সব ঠিক হয়ে যাবে । তবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্র মনে করে যে আসলে এই দেশের সব জায়গায় দুর্নীতি এমন ভাবে জেঁকে বসেছে, সব কিছু এমন ভাবে ঘুণে খেয়ে ফেলেছে যে এই সিস্টেমকে আর কোন ভাবেই ঠিক করা সম্ভব না । এখন এটাকে সম্পূর্ন ধ্বংশ করে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । সব ভেঙ্গে ফেলে একেবারে নতুন করে শুরু করতে হবে । এই লক্ষ্যেই তারা দুজন মিলে গড়ে তোলা জাদুঘর নামে এক জঙ্গী গোষ্ঠী । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের দুজনের সাথে পরিচয় হয় এক মারামারির মাঝে । তারপর দুজন একে অন্যের বন্ধু হয়ে ওঠে । দুজন মিলে ডিম ওয়েভে গড়ে তোলে এক ওয়েবসাইট । অনেকটা সোস্যাল ক্লাবের মত । বিভিন্ন নির্দেশনা দেয় এই ক্লাবের মেম্বারদের । তারা সেটা শেষ করে । 


কাজ শুরু করে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ছাত্র নেতার উপর হামলা আসে । সেখান থেকেই জাদুঘরের আত্মপ্রকাশ । এরপর একের পর এক কাজ করতে থাকে । দেশ জুড়ে জাদুঘরকে নিয়ে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া । কেউ ভাবে জাদুঘর যা করছে তা স্রেফ সন্ত্রাসী কার্যক্রম অন্য দিকে অনেকে ভাবছে এটা বিপ্লব । এভাবেই দেশে পরিবর্তন আনতে হবে । প্রেমিকা তমালিকা প্রথমে এই জাদুঘরের ব্যাপারে পজেটিভ মনভাব থাকলেও যখন গাজীপুরের এক রিসোর্টে তারই সামনে ধ্বংশ লিলা আর রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় তখন সে সরে যায় । তারপর এক সময়ে কর্তৃপক্ষ জেনেই যায় আসলে জাদুঘরের পেছনে কে রয়েছে । 


বইতে গল্প এগিয়ে চলে দুই সময়ে । এক সময়ে বর্তমান কালের ঘটনা । এই ঘটনাতে দেখা যায় স্মৃতি হারিয়ে এক কন্ট্রাক্ট খুনী গিয়ে হাজির হয় বান্দারবানের গহীনে । সেখানে থাকতে শুরু করে এক আদিবাসী পরিবারের সাথে । তবে তার চোখ পড়ে মাইকেলের সাথে । বিশেষ করে মাইকেলের স্ত্রীর দিকে তার বিশেষ নজর যায় । সে কেন বান্দারবান গিয়েছে কী কারে গিয়েছে এসব তার কিছুই মনে পড়ে না । কেবল মনে পড়ে যে বিপুল পরিমানের টাকা এবং পিস্তল রয়েছে তার কাছে । কোন ভয়ংকর কাজ সে করেছে । সেই কাজ করে পালিয়ে সে বান্দারবন রয়েছে । 


অন্য দিকে অন্য একটা ধারায় আগে কী হয়েছে দুই ছাত্র কেন এবং কিভাবে জাদুঘর গড়ে তুলে সেটার বর্ণনা রয়েছে । এভাবেই দুটো কাহিনী প্রবাহ একটা অন্যটার সাথে এগিয়ে যায় এবং শেষে একে একটার সাথে আমরা অন্যটার সংযোগ দেখতে পাই । শেষ পর্যন্ত কী হয়ে সেটা অবশ্য বই পড়েই জানতে হবে । পুরোটুকু বলে দিকে তো বই পড়ার আগ্রহ থাকবে না কারো । 


এই বইয়ের ভাল দিক হচ্ছে বইয়ের গল্প এবং কাহিনী বিন্যাস । আমি এর আগে এই কন্সেপ্টের বই আর পড়েছি বলে মনে নেই । আগেই বলেছি বর্তমান সময়ের অন্যতম ভাল লেখকদের তালিকা করলে কিশোর পাশা ইমনের নাম আসবে । 

অন্য দিকে বই পড়ে আমার মনে হয়েছে যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে লেখকের কোন ধরনের ক্ষোভ রয়েছে । খুব বেশি নেগেটিভ ভাবে তাদের তুলে ধরা হয়েছে । এই ধারণা সে কোথা থেকে পেয়েছে সেটা আমার জানা নেই । অন্য দিকে লেখক নিজে কখনও বান্দরবনের গহীনে ট্রেকিং করেছে বলে মনে হয় না । এই অভিজ্ঞতা তার থাকার সম্ভবনা কম । এই কারণে এই ব্যাপারে লেখায় একটু অপরিপক্কতা রয়েছে । এটা স্বাভাবিক । 


সব মিলিয়ে বেশ চমৎকার বই । এর আরেকটা পার্ট বের হয়েছে যা আামর সামনে রয়েছে বর্তমানে । সেটা পড়ে শেষ হলে, সেটারও রিভিউ লেখার চেষ্টা করবো । 



বইয়ের নাম জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে

লেখক: কিশোর পাশা ইমন 

মোট ৪৪৬ পৃষ্ঠার বই, মূল্য ৫০০ টাকা