পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ জীবনানন্দের হাসি ও অন্যান্য


 যে বই পড়ার শেষ করে আমার কেবল দুইটা অনুভূতি সব সময় হয়। বইটা পড়ে সময়টা ভাল গেল । বইটা পড়ে সময়টা নষ্ট হল । রবিন জামান খানের জীবনানন্দের হাসি ও অন্যান্য মনে হল বইটা পড়ে খানিকটা সময় ভাল গেলেও বেশির ভাগই সময় নষ্ট হল । অথচ আমি সব সময় গল্প সংকলন ভালবাসি । সব ধরনের ছোট গল্পই আমার সব সময় পছন্দ , এই বইটার অপছন্দের আরেকটা কারণ হচ্ছে এই বইয়ের প্রায় সব গল্পই আমি আগেই পড়েছি । লেখকের আগে বিভিন্ন গল্প সংকলনে প্রকাশিত গল্প গুলোই এখানে স্থান পেয়েছে । তাই তিনশ টাকা দিয়ে এই বই কিনে একটু গায়ে বেঁধেই গেল । বই দামী হলেও ভেতরের ভাল কিছু থাকলে সেটা সয়ে যায় তবে এই বইয়ের ক্ষেত্রে সেটা সইলো না মোটেই । হয়তো আগে পড়া থাকার কারণেই বইটা আমার ভাল লাগে নি । 


বইটা একটা গল্প সংকলন । মোট এগারোটা গল্প আছে বইতে । প্রথম গল্পের নাম সুইসাইড । গল্পের প্রধান চরিত্র মি হাসান কোন গূরুত্বপূর্ণ পদে আছেন । কী পদ সেটা অবশ্য গল্পে উল্লেখ নেই । লেখকের লেখাতে এই ব্যাপারগুলো আছে আমি আগেই খেয়াল করেছি । সে গল্পের চরিত্র কিংবা কাহিনী বর্ণনাতে এই ডিটেইল গুলো দেন না । গুরুত্বপূর্ন কাজে আছে, গুরুত্বপূর্ণ চাকরি করেন এই টাইপের বক্তব্য দিয়ে কাজ সারেন । এটা গল্পের নামকে সময় নামিয়ে দেয় । যাই হোক মিস্টার হাসান সকল তার সকল কর্ম ব্যস্ততা থেকে গুটিয়ে নির্জন এক স্থানে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের জন্য । প্রতিদিন সকালে সে মর্নিং ওয়াকে যান এবং কাছের একটা রেল স্টেশনে বসেন কিছু সময় । আজকে দেখলেন সেখানে একজন ইয়াং ছেলে বসে আছে । কাঁদছে । সে আসলে সুইসাইড করতে এসেছে ট্রেনে ঝাপ দিয়ে । কিন্তু ঘটনা দেখা যায় সে সুইসাইড নয় অন্য কিছু করতে এসেছে । এরপরের গল্পটার নাম হোমিসাইড । এই গল্পটা আগের গল্পটার সাথে যুক্ত । এই গল্পে দেখা যায় প্রবল নিরাপত্তা বেষ্ঠিত একটি বাড়ি । বাড়িটি মিস্টার ড. জাফরের । এই . জাফর হচ্ছে আমাদের আগের গল্পের মি. হাসানের বাবা । সেই বাড়িতে তারিক আজিজ নামের একজন ঢুকে পড়ে । এবং ড. জাফরকে তার ছেলের মৃত্যুর কারণ জানায় । কিন্তু শেষে দেখা যায় সে তারিখ আসলে সব টুকু সত্য বলে নি । পরের গল্পের নাম কুইন অব হার্টস । এই গল্পে মাহবুব সাহেব তার স্ত্রীকে খুন করার জন্য একজন ভাড়াতের সাথে দেখা করতে যায় তার বন্ধুআলমের মাধ্যমে । কিন্তু খুনী তাকে জানায় যে তার স্ত্রীর পরকীয়া চলছে আসলে তার বন্ধুর সাথেই এবং আলম তাকে পাঠিয়েছে মাহবুব সাহেবের সাথে দেখা করতে নয় বরং তাকে খুন করতে । এখন টাকা না দিলে এখানেই তাকে খুন করবে । মাহবুব তাকে টাকা দিয়ে দেয় । এই গল্পটা আমি আগেও পড়েছি । এই গল্পটার থিম ইন্ডিয়ান সিআইডি সিরিয়ালের একটা এপিসোডের সাথে হুবাহু মিলে যায় । এরপরের গল্পটা কিং অব স্পেডস, এই গল্পের পরের পর্ব । জীবনান্দের হাসি গল্পটা আমি আগে পড়েছি বলে মনে পড়ে না । এই গল্পতে ডক্টর মাসুদের কাছে একজন অদ্ভুত রোগী আসে । এবং তাকে উল্টাপাল্টা কথা বলে রাগিয়ে দেয় । মাদুক তাকে আঘাত করতে পিস্তল বের করে । এবং গুলি চালায় । তবে সেটা উপরের দিকে । কিন্তু পরে জানতে পারে সব টুকুই সাজানো । এই গল্পটার প্লট সাজানোর ভেতরে খুব বড় গলদ রয়েছে । বিশেষ করে যেভাবে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞকে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই দিকটা । গল্পে বলা হচ্ছে ডক্টর মাসুদ বড় ও বিখ্যাত ডক্টর অথচ তার আচরণে সেটা মোটেই মনে হয় নি । একজন মনের ডাক্তার যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সে কোন কালেই বিখ্যাত হতে পারে না । আরো বুদ্ধিমত্তার সাথে এখানে মাসুদকে উপস্থাপন করা দরকার ছিল । বাগিচা আর্মি গল্পটা ভাল হতে পারতো। এখানে একজন লেখককে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় । কারণ একটা ব্যাংক ডাকাতির সাথে তার লেখা একটা বইয়ের হুবাহু মিল । লেখক ঠিক যেভাবে যেভাবে বর্ণনা দিয়েছে সেভাবেই ডাকাতিটা হয়েছে । এবং এই কারণে পুলিশ ধরে নেয় যে ডাকাতিটা লেখকই করেছে । বড় হাস্যকরল একটা কারণ বাংলাদেশের পুলিশ এতো বোকা তো না ! একবার ভাবুন, একজন লেখক একটা বই বের করলো সেই বইয়ের মত করে একটা ডাকাতি হল । তাহলে লেখকে ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশ কি বলবে তুই বেটা বই লিখেছিস তুই ডাকাত ! বইটা হাজার কপি বিক্রি হয়েছে যে কেউ পড়ে ডাকাতি করতে পারে ।  এই রকম আরো কিছু গল্প রয়েছে । 



যারা আগে বাতিঘর থেকে বিভিন্ন গল্প সংকলন পড়েছেন, বিশেষ থ্রিলার সংকলন গুলো পড়েছেন তাদের গল্প গুলো আগে থেকেই পড়া থাকবে । সেখান থেকে গল্প গুলো নিয়ে এই সংকলন টা করা হয়েছে । তাই বই কেনার আগে এটা মাথায় রাখবেন । হয়তো বইয়ের প্রায় সব গল্পই আপনার আগে থেকেই পড়া হয়ে থাকবে । যারা আগে কোন গল্প পড়েন নি তারা পড়তে পারেন । তবে মনের ভেতরে উচ্চ আশা রাখবেন না গল্প গুলোর ব্যাপারে । সাথে মানের থ্রিলার হিসাবে গল্প গুলো ভাল ।