পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ অগোচরা

বইয়ের নাম অগোচরা । বইতে লেখক বলেছেন স্নাইপার শব্দের বাংলা হচ্ছে অগোচরা । ঘটনা চক্রে আমাদের গল্পের নায়ক হয়ে যায় গুপ্তঘাতক । স্নাইপার কন্ট্রাক্ত কিলার । সহজাত সুটার সত্ত্বা ছিল তার ভেতরে । পাড়ার বড় ভাইয়ের সাথে একদিন স্যুটিং ক্লাবে গিয়ে হাজির হয় সে । তারপর সেখানে পরপর একই স্থানে লক্ষ্য ভেদ করে সবাইকে অবাক করে দেয় । জন্ম হয় তার বিশ্বসেরা স্যুটার হওয়ার স্বপ্ন । কিন্তু ক্ষমতার বলে এক মন্ত্রীর ভাগ্নেকে পাঠানো হয় । স্বপ্ন ভেঙ্গে পড়ে । তারপর সে নিজেও । নেশায় বুদ হয়ে যায় । বাবা মা মরা ভাইয়ের বাসার থাকতো আশ্রিত হয়ে ।

নেমে পড়ে নিজের ভাগ্যের সন্তানে । রাজনীতির মার প্যাচে পড়ে হয়ে ওঠে খুনী । পাড়ার সজল ভাই তাকে মোটা টাকার অফার করে ক্যাম্পাসের একজনকে খুন করার জন্য । তখন তার টাকার দরকার খুব । বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে অনেক আগেই । হাতে কোন টাকা নেই । বন্ধুর ঘাড়ে বসে আর কত খাওয়া যায় । নিজের কিছু আয় রোজগার দরকার তার। তারপর রাজি হয়ে যায় । আর যাকে মারতে হবে সে হচ্ছে সেই মন্ত্রীর আত্মীয় যার কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিলো নির্বাচন থেকে । তাই খুন করতে রাজি হয়ে গেল সে । নির্ধারিত দিন হাজির একটা বড় বিল্ডিংয়ের উপর সজলের সাথে হাজির হয় । স্নাইপার রাইফেল দিয়ে তাক করে থাকে আর খুজতে থাকে সেই মন্ত্রীর আত্মীয়কে । কিন্তু তাকে দেখতে পায় না কোথাও । তার বদলে গেটের সামনে দেখা যায় এলাকার আরেক রাজনীতির নেতা বিদুধা । সজল তখন তাকে বিদুধাকে গুলি করতে হবে । অবাক হয় সে । কিন্তু কিছুই করার থাকে না তার । কারণ সজল ততক্ষণে পিস্তল বের তার মাথায় তাক করেছে । যদি গুলি না করতো তাহলে সজল তাকে গুলি করে দিতো । বাধ্য হয়ে গুলি চালায় সে । মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বিধুদা । তবে মারা যায় না । 

বুদ্ধিমান বিধুদা ঠিক ঠিক বুঝে যায় তাকে কে খুন করতে পারে আর কেন খুন করতে পারে । তাকে গুলি কে গুলি করেছিল । তাকে হাজির করা বিধুদার সামনে । বাধ্য হয়ে সব খুলে বলে বিধুদা কে । বিধুকে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয় । মাসে মাসে মাসোয়ারা দিতে থাকে আর কয়েকদিন পরপর কন্ট্যাক্ত কিলিংয়ের কাজ চলে আসে ! এভাবে যখন ভাল চলছিলো সব কিছু তখন বিধুদা খুন হয়ে যায় !

 সে এবার নিজেও থাকে ভয়ে । পরবর্তী নম্বর যে তার সেটাও সে জানে ! জান বাঁচাতে অবস্থা এমন হয় যে হয় মারো নয়তো মর এমন অবস্থা । নিজের অস্তিত্ব টিকে রাখতে করতে হবে খুন । নয়তো নিজেই খুন হয়ে যেতে হবে । সবাইকে খুন করার পরে যখন মনে হয়েছিলো এবার বুঝি শান্তি মিলল তখনই আবার আবিস্কার করলো যে মুক্তি তার নেই । 

নতুন প্রেম এসে হাজির হল । ভিন্ন দেশেও গিয়েও মুক্তি হল না । সেখানেও হাজির হল পুরানো জীবনের কৃতকর্ম । এবারও সেই একই অবস্থা হয় মারো নয়তো মর । শেষ পর্যন্ত অগোচরা আসলেই মুক্তি পাবে ! স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে? 

এই গল্প নিয়েই হচ্ছে আমাদের অগোচরা ! 





বইটি যখন পড়া শুরু করি তখনই মনে হচ্ছিলো যে বইটা আমি আগেও পড়েছি যেন । পড়ে টের পেলাম আসলেই বইটা পড়া । তবে সম্পূর্ণ নয় । বইয়ের দুইটা অংশ । প্রথম অংশ টুকু পড়া আমার আগেই । পত্রিকাতে ছাপা হয়েছিলো । পরের অংশ টুকু পড়া হয় নি । 

বইটা এক বৈঠকে পড়ে ওঠার মত বই । হালকা মেজাজারের বই । এই বই পড়ার পরে মনে হবে যে সব কিছু যেন একটু বেশিই সিম্পল । সব কিছু বড় দ্রুত সহজ ভাবে শেষ হয়ে গেল যেন । নায়ক যখন যতবারে বিপদে পড়ে তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে যেন সব কিছু ওভাবে কেউ বসিয়ে দেয় । যখন যা দরকার সেই জিনিস সেখানে এসে হাজির হয় ! সব সমাধান হয়ে যায় সহজে । 


হালকা মেজাজের বই হিসাবে ভাল । 


বইয়ের নাম অগোচরা

লেখক মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিন ।