পুরুষ, পিতৃত্ব ও অন্যান্য গল্প

 আমি শেখ পরিবার কে নিয়ে অনেক লেখা পড়েছি । তবে তার প্রায় পুরোটাই হচ্ছে নন ফিকশন কাহিনী । আমার কাছে প্রায়ই মনে হয়েছে যে কেন শেখ পরিবারকে নিয়ে ফিকশন গল্প লেখা হয় না? এটা অবশ্য এখন জানি যে তা নিয়ে লেখাটা বেশ বিপদজনক । হয়তো লেখক জেলে চলে যেতে পারে । তাই হয়তো কেউ লেখে না । অনেক দিন আগে ইমন জুবায়ের ভাই রাসেলকে নিয়ে একটা কাল্পনিক লেখা লিখেছিলেন ব্লগে । এতো চমৎকার হয়েছিল লেখাটা যে বলার অপেক্ষা রাখে না । 


গতবছর বইমেলা থেকে রাজীব নূর নামের একজন লেখকের বই কিনেছিলাম । সেই বইয়ের শেষ গল্পের নাম ''যখন কান্নায়ও আড়াল তুলতে হয়েছিল'' । গল্পটার প্রথম লাইন হচ্ছে ''রাসেল প্রায়ই আসতো আমাদের বাড়িতে ।'' আমি গল্প শুরু তখনও ঠিক বুঝতে পারি নি যে এই রাসেল আমাদের শেখ রাসেল। গল্পের পটভূমি ছিল মুক্তি যুদ্ধ এবং তার পরের সময় । জমজ ভাইবোন থাকতো রাসেলদের বাড়ির পাশেই । মাঝে একটা দেওয়াল । সেই দেওয়ালে বাসা বেঁধেছে টুনটুনি । এই নিয়ে জমজ ভাইবোন আর রাসেলের আগ্রহের শেষ নেই । সবার বয়স ৫ এর আশে পাশে । 


যুদ্ধের সময়ে পরিবারটি চলে যায় গ্রামে তারপর আবার যুদ্ধ শেষ করে ফিরে আসে । রাসেলের সাথে তার কত খেলা গল্প এক সাথে ঘোরাঘুরি । গল্পটা শেষ হয় ১৫ই আগস্টের হামলার পরদিন সকাল বেলা । তখনও জমজ ভাইবোন বিশ্বাস করতে পারে না যে রাসেলকে মেরে ফেলা হয়েছে । 


গল্পটা পড়ে কী যে এক বিষণ্ণতা এসে ভয় করলো মনে সেটা বলে দেওয়ার মত না । মোট ৯টা গল্প রয়েছে । রাসেলকে নিয়ে এটা বইয়ের শেষ গল্প । প্রথম গল্পের নাম পুরুষ । পুরুষ গল্পের কাহিনী এক চর দখলকে কেন্দ্র করে । চর দখলের সময় পুরো একটা হিন্দু পাড়াকে উচ্ছেদ করে একজন চেয়ারম্যান । তার রয়েছে নিজেস্ব লাঠিয়াল বাহিনী । সেই লাঠিয়াল বাহিনীর একজনকে খুন করে সেই চেয়ারম্যান দোষ চাপায় হিন্দু পাড়ার লোকেদের উপরে । তারপর লাঠিয়ালের সুন্দরী বউকে বিয়ে করে । লাঠিয়ালের ছেলে রমজানকে বাড়ি থেকে বিদায় করে । সেই ছেলেকে আশ্রয় সে হিন্দু মালো পাড়ার সাধন । সেখানেই সে বড় হয় । দক্ষতা অর্জন করে বাপের মত বর্ষা নিক্ষেপে । এভাবেই কাহিনী এগিয়ে চলে । এক সময়ে আবারও সেই চর দখলের যুদ্ধ শুরু হয় ।  রমজানকেও নামতে হয় যুদ্ধে । 


পরের কাহিনীটার নাম পিতৃত্ব । পরপর সাত মেয়ে জন্মানোর পরে আরেকটা যখন মেয়ে হয় তখন মালতী পাড়ার মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মোতালেব তার মেয়েকে খুন করে । তাকে জেলে পাঠানো হয় । রিমান্ডে সে সব কিছু স্বীকারও করে নেয় । তার আর রক্ষা পাওয়ার আর কোন উপায় নেই । নিশ্চিত ফাঁসি হবে । কিন্তু তখন তাকে রক্ষা করতে দৃশ্যপটে হাজির হয় রমলা মাসি । মোতালেপকে অদ্ভুত এক প্রস্তাব দেয় সে । তার পাড়ার জন্য অনেক গুলো মেয়ে দরকার । আর মোতালেবের তো কেবল মেয়ে হওয়ার রেকর্ড রয়েছে । তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেশ্যাপাড়ায় । তারপর সেখানে থাকা বেশ্যাদের চারজনের সাথে বিয়ে দেওয়া হয় । তার কাজই কেবল সন্তান তৈরি করার জন্য স্পার্ম দেওয়া । সে অনেক কয়বার পালাতে চায় কিন্তু পারে না । এভাবে কাহিনী শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যায় । শেষ পর্যন্ত কি মোতালেব পারবে পালাতে ঐ নষ্ট পাড়া থেকে ? সেই সাথে কি পারবে নিজের সদ্যজাত সন্তানের পিতার ভূমিকা পালন করতে ! গল্পের শেষেৎা জানা যাবে । 


এই তিনটা বাদ দিয়েও আরও চারটা গল্প রয়েছে । গল্প গুলো পড়েকেবল এই কথাই মনে হয়েছে যে লেখকের লেখার উপর ভাল দক্ষতা রয়েছে । তার লেখার হাত দক্ষতা প্লটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে সে একজন চমৎকার কথা শিল্পী । সামান্য একটা ঘটনাকে এতো চমৎকার করে বর্ণনা করতে পারা নিঃসন্দেহে দক্ষতার কাজ । ছোট গল্প যারা পছন্দ করে তারা এই বই অবশ্যই পড়তে পারে । 



বইয়ের নামঃ পুরুষ, পিতৃত্ব ও অন্যান্য গল্প
লেখকঃ রাজীব নূর
বাতিঘর থেকে প্রকাশিত