পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ শরীরে সূর্যোদয়

 বই মেলা থেকে বইটা কিনেছিলাম এমনিতেই । নেড়ে চেড়ে আর প্রথম কয়েকটা লাইণ পড়ে মনে কিনি । পরিচিত কোন লেখক নয় আমার । লেখকের আগে কোন লেখা আমি পড়ি নি । গল্পটা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতাকে গুলির ভেতর দিয়ে । এক কুয়াশাছন্ন সকালে কামাল নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাকে গুলি করে তারই দলের একজন ক্যাডার । মূলত গুলিটা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা বড় ভাইয়ের নির্দেশে । কারণ হিসাবে দেখানো হয় যে কামাল ইদানীং বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যা বড় ভাইয়ের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয় ।

তবে এখানেই ভুলটা হয়ে যায় । যে ক্যাডারকে দিয়ে কাজটা করানো হয় তার হাত কেঁপে যায় । নির্দেশ ছিল কেবল কাধে কিংবা পায়ে গুলি করা অথচ গুলিটা লাগে বুকে । হাসপাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নেতা । তবে বড় ভাই ঠিক ঠিক সামলে দেয় ব্যাপারটা । নিজ দলের ক্যাডারের গায়ে কোন আঘাত আসে না । তবে মানসিক ভাবে সেই ক্যাডার ঠিকই ভেঙ্গে পড়ে । বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায় একেবারে । অন্য দিকে দলের আরেক কর্মী যে কিনা বড় ভাইয়ের খুব কাছের ।

তাকে ঘিরে কাহিনী এগোতে থাকে । তার রিপন । হিন্দু সে । বড় ভাইয়ের ছোট ছেলেকে সে পড়ায় । সেই সুবাধে তার বাসায় খুব যাতায়াত তার । এবং বড় ভাইয়ের খুব কাছের মানুষ । বড় ভাইয়ের সকল কুকর্মের সাক্ষী সে । সব কিছু জানে রিপন । এছাড়া রিপনকে বড় ভাই তার বউয়ের পেছনে লাগিয়ে রেখেছে কখন কোথায় আর কার সাথে দেখা করে এই খোজ করার জন্য । গল্পের এক পর্যায়ে জানা যায় যে ছাত্রনেতা কামালকে সে কেন খুন করিয়েছিলো । বড় ভাইয়ের আন্ডারে আরও কত ক্যাডার রয়েছে যারা কখন টার্গেট মিস করে না । তাহলে বড় ভাই ইচ্ছে কেন নতুন একজন ক্যাডারকে নিয়োগ দিলেন ঐ কাজের জন্য । এর পেছনের কারণ মূলত রয়েছে তার স্ত্রী লিজা এবং কামালের ভেতরের একটা সম্পর্ক । 

তবে কথায় আসে পাপ বাপকেও ছাড়ে না । বড় ভাইয়ের এতো ক্ষমতা নিজের বউয়ের ব্যাপারে এতো সেন্সেটিভ সে সেই সব কিছু বড় ভাইয়ের হাত থেকে এক সময় চলে যায় । তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে হয় । নিজেদের সন্তান এতো ভালোবাসার বউ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা সব কিছু হারিয়ে যায় তার কাছ । 

মূলত এটাই গল্প । বর্তমান আবর্তে পরিচিত একটা প্লট । তবে এই কথা বলতেই হবে সে লেখক খুব চমৎকার ভাবে তার গল্পকে ফুটিয়ে তুলেছে । পুরো বইতে কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে খুব দ্রুত । একটার পর একটা দৃশ্য এসেছে । চলে গিয়েছে । চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে । পড়তে পড়তে অনেকটাই যেন আমি দৃশ্য গুলো চোখের সামনে দেখতে পচ্ছিলাম চোখের সামনে সব কিছু । শেষটা যদিও খানিকটা প্রেডিক্টেবল ছিল তবে মনের ভেতরে একটা তাড়না অনুভব ঠিকই করছিলাম যে এর পরে কি না কী হয় ! 

আপনারা পড়ে দেখতে পারেন । সময় ভাল কাটবে আশা করি ।   



বইঃ শরীরে সূর্যোদয়
লেখকঃ মনীশ রায় 
পানকৌড়ি থেকে প্রকাশিত