পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ দরিয়া-ই-নুর

বইটাকে ঠিক উপন্যাস বলা যায় না । এমন কি উপন্যাসিকার বলার ক্ষেত্রেও ছোট হয়ে যায় । সব থেকে ভাল হয় এটাকে বড় গল্প বললে। এই লেখাটি মূলত লেখক লিখেছিলেন ঈদ সংখ্যার জন্য । সেখানে লেখাটি বেশ সমাদৃত হলে লেখক ঠিক করেন যে একই ভাবে কোন পরিবর্তন না করে এটাকে বই আকারে প্রকাশ করবেন । 


দরিয়া-ই-নুর বইটির গল্পটি খুব বেশি জটিল না । গল্পের শুরুতে মির্জা আশেক জেল থেকে বের হয় । জেলার সাহেব তাকে নিজে গেটের কাছে এসে পৌছে দেয় । সাধারনত এমন টা হয় না খুব একটা হয় না সেখানে স্বয়ং জেলার কোন কয়েদীকে গেটের কাছে এসে পৌছে দিতে আসে । তবে মির্জা আশেকের জন্য আসে । জেল থেকে বের হয়ে সে চার্লিকে দেখতে পায় আরো দেখতে পায় তার ভালোবাসার মানুষটিকেও । এই ভাবে গল্পের শুরু । গল্প যত এগিয়ে যেতে থাকে মির্জা আশেকের জীবনের একটা পর্ব আস্তে আস্তে সামনে আসতে থাকে । সিনেমার নায়কের মত চেহারা তার । শখও ছিল সিনেমায় অভিনয় করবে । সেখানেই তার পরিচয় হয় দুদু মাস্টারের সাথে । তার কারণেই কাজও জুটে যায় তবে প্রথম কাজ তার জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে নি । নায়ক আর হয়ে ওঠে না । অন্য পথ দেখে । এবার তার পরিচয় হয় রোজির সাথে । তবে তার ফলে দুজনকেই বের হয়ে আসতে হয় সিনেমা লাইন থেকে । এতে অবশ্য খুব একটা আপত্তি ছিল না দুজনের কারোই । 


তবে ঝামেলা যেন পিছু ছাড়ে না তাদের । মায়ের মত আর্জুমান্দ বানুর চিকিৎসার জন্য টাকা জোগার করতে মির্জা ডাকাতির পথ বেঁছে নয় । সফল ভাবে সেটা শেষ করলেও দুর্ভাগ্যের কারণে তাকে জেলে যেতে হয় । তবে সব থেকে বড় ধোকাটা খায় যখন খুব কাছের মানুষ তাকে ধোঁকা দিয়ে ডাকাতির টাকা নিয়ে চলে যায় । 

জেল থেকে ফিরে তাই জীবনকে গুছিয়ে নিতে শেষবারের মত একটা পরিকল্পনা করে । দরিয়া ই নুর নামের এক অতি দামী রত্ন সে চুরি করবে। সোনালী ব্যাংকের ভল্টে যা পড়ে আছে অনেক দিন । সেই দরিয়া ই নুর বিক্রি করতে তার সাহায্য লাগবে । সাহায্যের জন্য পুরানো বন্ধু পাভেলের কাছে গিয়ে হাজির । পাভেলও টাকার পরিমান শুনে রাজি হয়ে যায় । শেষ পর্যন্ত কী সফল হবে মির্জা আশেক নাকি আবারও তাকে যেতে হবে জেলে?


গল্প হিসাবে দরিয়া ই নুর বেশ চমৎকার । আমি অন্তত যেভাবে শেষ হবে ভেবেছিলাম তেমন করে শেষ হয় নি মোটেও । যদিও আমার মাঝে একটা ক্ষীণ সন্দেহ বারবার মনে হচ্ছিলো এমন কি হতে পারে কোন ভাবে । তবে যখন ঘটনার মোড় নিতে শুরু করে শেষটা একটু বোঝা যাচ্ছিলো । 

এক বসাতেই পড়ে শেষ করে ফেলার মত বই । 


বইয়ের নাম দরিয়া-ই-নুর

লেখক মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিন