পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ অপরাজিতার খোঁজে

 


ছোট গল্পের বই আমার সব সময় পছন্দের । আমার কাছে একটা উপন্যাসের বই পড়ার থেকেও দশটি ছোট গল্পের বই পড়াটা বেশি পছন্দের । এইবারের বইমেলা থেকে কেনা বইয়ের ভেতরে প্রথম পড়ে শেষ করলাম অপরাজিতার খোজে বইটি । বইটির লেখিকা একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে । বয়সে অনেক ছোট হলেও লেখার হাত তার বেশ ভাল বলা যাবে। বইটিতে মোট ১০টি গল্প রয়েছে । গতকাল সব গুলো গল্প শেষ করেছি ।  প্রতিটি গল্প নিয়ে আলাদা ভাবে অল্প কয়েকটা কথা বলার চেষ্টা করছি । 


বইয়ের প্রথম গল্পের নাম লাবণ্য । প্রথম গল্পটা পড়েই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । এমন হয় না কোন বইয়ের প্রথম কয়েকটা লাইণ কিংবা প্রথম একটা পেইজ পড়েই সেই বইটাকে ভাল লেগে যায় এই গল্পটাও ঠিক তেমন। একজন ব্যাচেলর সকাল বেলা অফিস না গিয়ে একটা পুরানো বই নিয়ে বসে । সেই পুরানো বইয়ের ভেতরেই সে একটা চিঠি খুজে পায় । এই চিঠি লেখকের খোজেই সে বের হয় । বুঝতে পারে যে যার বই হয়তো ভুল করে বইটা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে । নয়তো এতো প্রিয় জিনিস কেউ বিক্রি করতে পারে না । যখন বইয়ের আসল মালিকের কাছে গিয়ে হাজির হয় তখন আসলে শেষ ঘটনা ঘটে । গল্পটা শেষ করে মনটা চট করেই ভাল হয়ে গেল আমার । বিশেষ করে আমার এমন করে ভাবতে ভাল লাগে সব সময় । এমন ভাবে কাছে চলে আসাটা আমার গল্পে খুব হয় । এই কারনেই হয়তো বেশি ভাল লাগলো । 


বইয়ের আরেকটা গল্প হচ্ছে বাড়ি । গল্পের শুরু খুব স্বাভাবিক আর গতানুগতিক ভাবে , অন্য যে সাধারণ ভুতের গল্পের মত মতই । এবং শেষটাও তেমন ভাবেই । তবে এই গল্পের ভেতরেও কোথাও যেন একটা মায়া লুকিয়ে রয়েছে । গল্পে চরিত্রের মনভাবে আমার নিজের ভেতরে এসে সঞ্চালিত হয়েছে । তারপর একটি আত্মহত্যা পরবর্তী গল্প একটা ডিটেকটিভ গল্প । এটা নিয়ে আলাভাবে কিছু বলার দরকার নেই । একটি মেয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা ভাবা হলেও মেয়েটির শিক্ষক যে কিনা আবার একজন শখের গোয়েন্দা সে মাঠে নামে এবং শেষ পর্যন্ত আসল সত্য বের হয়ে আসে । আমি আসলে গল্প শেষ করে বুঝতে পারি নি যে গল্পটা এভাবে শেষ হবে । সেই হিসাবে এটা একটা সফল গোয়েন্দা গল্প সেটা বলা যায়।

''জোছনা ভেজার দিনগুলি'' গল্পটা বলা যায় এই বইয়ের সব থেকে চমৎকার গল্প । পুরো বইটার নাম যদি এই গল্পটার নাম অনুসারে হত তাহলে ভাল হত । এই গল্পটা একটা যৌথ পরিবারের গল্প । গল্পটা একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের জবানিতে বর্ণনা করা হয়েছে । একটা পুরো পরিবারের গল্প । আমাদের খুব পরিচিত একটা গল্প তবুও এই গল্প পড়তে বড় বেশি ভাল লাগে । এই গল্পটা যেভাবে শেষ হয় মনের ভেতরে একটা অচেনা ভাল লাগা কাজ করেছে । এই গল্পের কিছু কিছু দৃশ্যে এমন ভাবে মনে দাগ কেটেছে সেটা আসলে বলে বোঝানোর মত না । 

স্বপনে কিংবা জাগরণে গল্পটার ভেতরে একটা নতুনত্ব রয়েছে । তবে শেষটা আমার কেন জানি পছন্দ হল না । পছন্দ হল না বলতে খারাপ লেগেছে সেটা নয়, গল্পের শেষে সুবিচার পেল না গল্পের চরিত্রটা । অলীক গল্পটা এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধর গল্প । এই মেঘলা দিনে একলা গল্পটা পড়ে শেষ করে বেচার জন্য বেশ হাসলাম মনে মনে । এই রকম একটা বাস্তব ঘটনা মনে পড়লো অনেকদিন আগের । গিনি গল্পটা আরও একটু ভাল হতে পারতো । থিম ছিল চমৎকার কিছু শেষটা আরও ভাল হতে পারতো।

সর্বশেষ গল্প অপরাজিতার খোঁজে গল্পটা আমি আরও একটু অভিনব আশা করেছিলাম । বিশেষ করে এই বই অনুসারে যেহেতু পুরো বইয়ের নাম করণ করা হয়েছে এই গল্পটা হওয়ার দরকার ছিল সব থেকে চমৎকার । তবে গল্পটা অন্য গল্পের মতই । এই গল্প নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বললাম না । তবে একটা ব্যাপার একটু খটকা লাগলো সেটা হচ্ছে একজন ২৮ বছরের যুবকের আধিপত্য একটু বেশিই অবাস্তব করে তুলে ধরা হয়েছে । আর কয়েক বছর পার হলে এমনটা সম্ভব হত ।


সব মিলিয়ে লেখিকার প্রথম বই হিসাবে বইটা আমার ভাল লেগেছে । যারা আমার গল্প পছন্দ করেন তাদের কাছেও বইটা ভাল লাগবে সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । 


বইয়ের নামঃ অপরাজিতার খোঁজে । 

লেখিকাঃ সুমাইয়া আমান নিতু

মোট ১১২ পৃষ্ঠা । মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা