ইফ ক্যাটস ডিসাপিয়ার্ড ফ্রম দ্য ওয়ার্ল্ড

একবার চিন্তা করেন তো ব্যাপারটা?

আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন যে পৃথিবী থেকে বেড়াল গায়েব হয়ে গেছে ! কেমন হবে ব্যাপারটা? যারা হয়তো বেড়াল পছন্দ করেন না তাদের কাছে মনে হয় ভালই হবে কিন্তু যাদের পোষা বেড়াল রয়েছে কিংবা যারা বেড়াল পছন্দে করেন তাদের কাছে মোটেই ব্যাপারটা ভাল হবে না । আবার ধরেন কেবল বেড়াল না অন্য যে কোন একটা জিনিস একেবারে গায়েব হয়ে গেল তখন ব্যাপারটা কেমন হবে? ব্লগ জিনিসটা গায়েব হয়ে গেল পৃথিবী থেকে । কোন দিন যেন ব্লগ বলে কিছু ছিলই না এমন ! তখন ব্যাাপরটা কেমন হবে? মানুষের জীবন চলবে ঠিকই কিন্তু কেবল সেখানে ব্লগ বলে কিছু থাকবে না । কিংবা কোনদিন ছিলও না এমন একটা ব্যাপার হবে ।  


ইফ ক্যাটস ডিসাপিয়ার্ড ফ্রম দ্য ওয়ার্ল্ড বইটা জাপানিজ লেখক গেনকি কাওয়ামুরার প্রথম বই । বইটা প্রকাশের সাথে সাথে খুব সাড়া পড়ে যায় পুরো জাপান জুড়ে । পরে আরও বেশ কয়েকটি ভাষাতেই অনুবাদ প্রকাশ হয় । বইয়ের কাহিনীটাও বেশ চমৎকার । অনেকদিন পরে কোন বই একবসাতেই পড়ে শেষ করতে পারলাম । 


মাত্র ত্রিশ বছর বয়স্ক বইয়ের নায়ক জানতে পারে যে তার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই । ব্রেন টিউমার হয়েছে । ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে যে খুব বেশি সময় নেই । বড়জোর সে আর ৬ মাস বাঁচবে । হঠাৎ করেই যুবকের কাছে সব কিছু অর্থহীন মনে হল । অবশ্য এমনটা হওয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক নয় । আপনি যদি জানতে পারেন যে আপনি আর কদিন মাত্র বাঁচবেন তখন আপনার কাছে এই দুনিয়ার সব কিছুই অর্থহীন মনেভবে । 


অবশ্য যুবকের জীবনে খুব বেশি কিছু নেই ও । তার মা মারা গেছে তিন বছর আগে । বাবার সাথে তার কথা হয় না আরও অনেক আগে থেকেই । প্রেমিকার সাথে ব্রেক হয়ে গেছে । নিজের বলে যুবকের কেবল আছে একটা বেড়াল । এই ছাড়া আর কিছুই নেই তার জীবনে । সে মারা গেলেও আসলে কিছু যায় আসে না । সে ঠিক করলো যে মরার আগে একটা বাকেট লিস্ট তৈরি করলো । এই কাজ গুলো সে করতে চায় মরার আগে । কিন্তু এক সময়ে বুঝতে পারে যে এই সব কিছুই সে চায় না । 

এই সময়ে যুবকের সাথে দেখা হয় তার মতই চেহারার একজনের সাথে । মূলত এই তার মত চেহারার মানুষটা হচ্ছে শয়তান । সে তার কাছে আসে একটা অফার নিয়ে । সে প্রথমে জানায় যে ছয় মাস নয়, আগামীকালই সে মারা যাবে । তবে এই যুবক চাইলে শয়তান তাকে জীবন দান করতে পারে । কিন্তু বিনিময়ে তাকে এই পৃথিবী থেকে একটা জিনিস গায়েব করতে হবে । একটা দিনের আয়ুর বিনিময়ে একটা জিনিস পৃথিবী থেকে উধায় করে দিতে হবে । যুবক প্রথমে ঠিক করে যে পুরো পৃথিবী থেকে মোবাইল ফোনটা গায়েব করে দিবে । কিন্তু ফোন গায়েব করার আগে একটা শেষ ফোন সে করতে পারে । যুবক তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে ফোন করে এবং পরের দিন দেখা করতে চায় । সকালে উঠে যুবক খেয়াল করে যে তার সেলফোনটা আর নেই । পুরো দুনিয়া থেকে গায়েব হয়ে গেছে সেলফোন । যুবক যখন বাইরে বের হল বাসের ভেতরে দেখা গেল আগের মত মানুষজন আর নিজের ফোনের ভেতরে ডুবে নেই । কেউ হয়তো বই পড়ছে কিংবা কেউ হয়তো বাইরের দৃশ্য দেখছে । ঠিক মোবাইল ফোনের আগের যুগে চলে গেছে । 

এইভাবে পরের দিন সে গায়েব করে দেয় সকল মুভি । তারপর ঘড়ি । যখন পছন্দের বেড়াল টা গায়েব করে দিতে বলে শয়তান তখন যুবক বেঁকে বসে । কিন্তু তার জীবনের থেকে বেড়ালের জীবন তো কোন ভাবেই বড় নয় । শেষ পর্যন্ত কী আসলেই বেড়াল গায়েব করে নিজের আয়ু আরও একটা দিন বাড়িয়ে নেয় সে ?

শেষ টুকুর না হয় নাই বললাম । এটা বই পড়ে জানতে পারবেন !  


এমন কিছু বই থাকে না যার কাহিনী এমন আহামরি কিছু নয়, কোন টুইস্ট নেই, সাধারণ কাহিনী নিয়ে লেখা তারপরেও বই গুলো পড়ে মনের ভেতরে আলাদা একটা ছাপ পড়ে । এই বইটাও ঠিক এমন । বইটা পছন্দ হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে বইয়ের যুবকের সাথে আমার নিজের একটা মিল খুজে পেয়েছি আমি ।