পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সত্যটা মিথ্যা

 সত্যটা মিথ্যা বইটা রেজা সিরিজের তৃতীয় বই । সাদাত হোসাইনের অন্যান্য বইগুলো থেকে এই রেজা সিরিজের বই গুলো আমার পড়তে ভালই লাগে । এর প্রধান কারণ হচ্ছে অন্যান্য বইগুলোতে যে অতিরিক্ত প্যাঁচাল থাকে রেজা সিরিজের বই গুলোতে সেসব কম থাকে । তবে এই তৃতীয় বইটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যে একজন লেখক আসলে নিজের লেখার অভ্যাস এবং ধরন থেকে কোন ভাবেই বের হয়ে আসতে পারেন না ।


বনগিরি মানের নামের এক ছোট্ট পাহাড় ঘেরা শহরে রেজার পোস্টিং । এখানে মাদকের আখড়া । অনেক দিন থেকে এক ড্রাগ লেডি এই মাদকের চ্যানেলটাকে নিয়ন্ত্রন করে আসছে । পুলিশ তার কিছুই করতে পারছে না । আতাউর রহমান মিলা ফার্মেসীর মালিক । অনেক দিন থেকেই এই বনগিরিতে আছেন । লোকে তাকে মান্য করেন সম্মান করেন । কারণ বিপদে আপদে এই আতাউর রহমানই সবার সেবা করে থাকেন । একবার থানার ওসি সাহেবের হার্ট এটাক হওয়ার সময় এই আতাউর রহমান  সময় তার চিকিৎসা করেছিলো এবং তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো বলে ওসি সাহেবের আতাউর রহমানের প্রতি আলাদা একটা সফট কর্নার আছে । একদিন ফার্মেসী থেকে ফেরার পথে আতাউর রহমানের উপরে হামলা হল । কেউ তাকে খুন করতে চাইলো । কিন্তু কপাল গুনে রক্ষা পেল সে । রেজার কাছে সে রিপোর্ট করতে গেলে নানান জিনিস তথ্য বের হয়ে এল । 


জানা গেল যে এলাকা বখাটে রবিন তার মেয়েকে খুব ডিস্টার্ব করে । রেজার মনে হল যে রবিন এই কাজ করলেও করতে পারে । বেশ ভাল রাজনৈতিক ব্যক আপ আছে তার । আগে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতো ছিল তবে বর্তমানে কোন একটিভ কেস নেই রবিনের নামে ।  

অন্য দিকে আতাউর রহমানের ফার্মেসীতে কাজ করা রাহীকে কে বা কারা কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল । তাকে কিডন্যাপও করা হল বড় অদ্ভুত ভাবে । ফার্মেসীতে গিয়ে প্রথম দর্শনে মনে হবে যেন তাকে কেউ গলা কেটে হত্যা করেছে । তারপর লাশ নিয়ে গেছে । কিন্তু দেখা গেল যে রক্ত আসলে মানুষের না, কুকুরের । পুলিশকে ঘোল খাওয়ানোর জন্য এমনটা করা হয়েছে । 

ফার্মেসীতে খোজ করতে গিয়ে মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষধ পাঔয়া গেল । এবং পরীক্ষা করে দেখা গেল যে ঐ ঔষধের ভেতরে আসলে মাদক রয়েছে । একটু চাপ দিতেই আতাউর রহমান সব বলে দিল । সে জানালো যে সে ড্রাগ লেডি রুবির সাথে মিলে এই এলাকাতে মাদকের সাপ্লাই চেইন রক্ষা করে চলেছে । সে আসলে বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছে । তার অন্য কোন উপায় ছিল না । রাহী আসলে রুবীরই লোক । তার উপরে চোখ রাখার জন্য রাহী এখানে ছিল । কিন্তু রাহীর চোখ তার মেয়ে মিলার উপরে পড়ে তাতে সে রেগে যায় এবং তাদের ভেতরে সম্পর্ক নষ্ট হয় । পরে রাহীই আতাউর রহমানকে হত্যা করতে চায় । এছাড়া হত্যা করতে চাওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে আতাউর রহমান রবিনের সাথে হাত মিলিয়ে রুবির সকল প্লান তাকে বলে দেওয়ার কথা দিয়েছে । 


রেজা আতাউর রহমানকে গ্রেফতার করতে চাইলে ওসি রেজাকে বাঁধা দেয় । বলে যে আতাউর রহমান যা করেছে বাধ্য হয়ে করেছে । এখন তাকে গ্রেফতার করার দরকার নেই । কিন্তু একদিন আতাউর রহমান বাসা থেকে গায়েব হয়ে যায় । ঠিক তার আগের দিন রবিন এসেছিলো তাদের বাসায় । সিকু নামের রবিনের এক চেলা মিলাকে ডিস্টার্ব করতো । তার কথা জানতে পেরেছিলো মিলার কাছ থেকে । রবিন সিকুর খোজে বের হয় । তারপর থেকে সেও গায়েব । তার কোন খোজ নেই । 


শেষ পর্যন্ত আসলে গল্প কোন দিকে গেল ? ড্রাগ লেডি রুবি কি ধরা পরলো? কিভাবে সে পুরো এলাকাতে নিজের ড্রাগ ব্যবসা চালু রেখেছিলো পুলিশের ধরা ছোঁয়া বাইরে ? আতাউর রহমান গেল কোথায় আর রবিনই বা গেল কোথায় ?

আতাউর রহমানের গায়েব হওয়ার পরে খালা আর মামার পরিচয়ে মিলাকে যে নিয়ে গেল পরে জানা গেল যে আতাউর রহমানের বউয়ের কোন ভাইবোন এই দেশে ছিল না । তাহলে খালা মামার পরিচয়ে মিলা কাদের সাথে গেল আর কেনই বা গেল?


মোটামুটি এই হচ্ছে গল্প । গল্পের প্রথম যে সমস্যা আমার কাছে মনে হয়েছে তা হচ্ছে গল্পের যে স্থানের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । আমি পাহাড়ি এলাকাতে মোটামুটি গিয়েছি । লেখক যে বনগিরির কথা বলেছেন আমার কাছে মনে হয়েছে সেটা আমাদের পরিচিত কোন মফস্বল শহর কেবল সেখানে পাহাড় এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে । লেখক যদি আরও একটু খোজ খবর নিতেন তাহলে বুঝতে পারতেন যেন বাংলার পাহাড় ঘেরা শহর গুলোর চিত্র একটু ভিন্ন রকম । 


গল্পের সংলাপ গুলো বারবার পড়তে গিয়ে আমার মনে হচ্ছিলো যেন বড় মেকি মেকি ভাব । মানে অনন্ত জলিলের অভিনয় আপনাদের কাছে যেমন লাগে, আমার কাছে রেজার সংলাপ আতাউর রহমানের সংলাপ পড়তে গিয়ে বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো পাহাড় এলাকার একটা শহর সেখানে মানুষজন এভাবে কেন কথা বলবে? বলতে গেলে প্রতিটি সংলাপই বড় মেকি মনে হয়েছে শুধু !


আর উপরেই বলেছি কোন লেখকই আসলে নিজের আসল লেখার ধরন থেকে বের হতে পারে না । এই বইতেও তাই ঘটেছে । বইটা আরও কিছু ছোট হলেই বুঝি ভাল হত । বাহুল্য আমার কোন কালেই পছন্দ ছিল না । 

বইতে একটা স্থানে রবিনের জায়গাতে রাহীর নাম চলে এসেছে । পরবর্তি সংস্করনে এই ভুলটা ঠিক করে নেওয়ার অনুরোধ রইলো । 

সাদাত হোসাইন পছন্দ করলে বই পড়তে পারেন । নয়তো পড়ার দরকার নেই ।


বইয়ের নাম সত্যটা মিথ্যা 

লেখক সাদাত হোসাইন 

১৭৫ পেইজের বই । মূল্য ৪০০ টাকা