বাসি বকুলের ঘ্রাণ


১. 

চিঠি আমাদের জীবনের  একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ । বর্তমান সময়ে মানুষ এই কাগজে লেখা চিঠির সাথে সম্পর্ক একেবারে শেষ করে দিলেও ইলেক্ট্রনিক চিঠির সাথে সম্পর্কে টিকে আছে বেশ ভাল ভাবেই । প্রিয় মানুষটিকে মনের কথা টুক করে জানিয়ে দেওয়া যায় সহজেই । কিন্তু আগে মানুষ চিঠি লিখতো তারপর সেটা প্রিয় মানুষের কাছে পাঠিয়ে অপেক্ষা করতো দিনের পর দিন । ঠিক মত চিঠি পৌছালো কিনা, সেই চিঠি সঠিক হাতে গেল কিনা অন্য কেউ পড়ে ফেললো কিনা ! কিন্তু যদি চিঠির ঠিকানাই ভুল হয় ? একজনের চিঠি গিয়ে হাজির হয় অন্য জনের কাছে ? উড়ো চিঠির গল্পটাও ঠিক এমনই । হলের ভুল বিল্ডিংয়ের ঠিকানাতে চিঠি আসে শোয়েব নামের এক ক্যাডেটের । কত আবেগ দিয়ে সে চিঠি লিখেছে তার

প্রিয় মানুষটিকে অথচ সেই চিঠি পৌছিয়েছে ভুল মানুষের দরজায় ! 


গল্প পড়ে আমার মনে বড় ইচ্ছে হল যে শোয়েব কি অবশেষে তার আসল মুনিরার কাছে যেতে পেরেছিলো? আমার গল্প হলে দেখা যেত যে ক্যাডেট শোয়েবের সাথে অন্য মুনিরার একটা প্রেম হয়ে গিয়েছে । কিন্তু বাস্তব তো আমার গল্প না । বাস্তবে এসব আসলে কিছু হয় না ! 


 ২. 

কেবল হত যদি আমাদের ব্যবহৃত পছন্দের জিনিস পত্র গুলোও আমাদের কাছে তাদের অভাব অভিযোগ করতো ! আমাদের উপরে অভিমান করতো । তখন হয়তো দেখা যেত আমার ল্যাপটপ আমাকে প্রতি নিয়ত অভিযোগ করছে যে তাকে কেন আমি এতো অবহেলা করছি ! কেন আমার এন্ড্রোয়েড মোবাইলকে বেশি সময় দিচ্ছি । বাটন ফোনটা তো তাহলে কান্নাকাটি করে শেষ হয়ে যেত । পিসি অবশ্য খুব বেশি অভিযোগ করতো না । নিয়মিত তাকে ঠিকই সময় দিচ্ছি । দেখা শুনা করছি । কোন এক রাতে ঘুম ভেঙ্গে আমি হয়তো দেখতে পেতাম তারা নিজেদের ভেতরে কথা বলছে । আমার অবহেলা কষ্ট দেওয়া নিয়ে নিজেদের মাঝে দুঃখ বিলাশ করছে । এমন সব দুঃখ বিলাশের গল্প হচ্ছে পড়ুয়া প্যাচালি --- খন্ডটা । একটা লাইন আমার কাছে বেশ মজার লেগেছে । লেখিকা সেখানে লিখেছেন - বেশ একটু অভিমানের স্বরে ম্যাককে শান্তনা দিচ্ছে কমপ্যাক । 

দেশে ফেরার পরে সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে লেখিকার । সব আস্তে ধীরে গুছিয়ে নিয়ে আসতে আসতে লেখালেখি থেকে নিজেকে দুরে রেখেই চলেছেন অথবা রাখতে হয়েছে । আশা করি এক সময়ে সব গুছিয়ে নিয়ে এসেছে আবারও নিয়মিত তার ম্যাক আর কমপ্যাকের মনের দুঃখ গুলো দুর করবেন । সনি ভাইও যেন রাত জেগে আর কান্নাকাটি না করে সেটার দিকেও খেয়াল দিবেন । 


৩. 

লেখিকার যাপিত জীবনের গল্প গুলো পড়তে পড়তে আমার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছিলো যে এযেন আমারই গল্প আমি পড়ছি । ছোট বেলা তো এভাবেই কেটেছে আমাদের । বাবার বদলির চাকরি, এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে যাওয়া । নতুন বন্ধু নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো । ঈদ কিংবা অন্য ছুটির দিনে নানা/দাদা বাড়ি বেড়াতে যাওয়া । কাজিনদের সাথে হুটিপুটি রাতে ভুতের গল্প, ঝড়ে এক সাথে আম কুড়ানো, বড়দের বাড়ি ফেরার তাগাদা । এসব তো আমার সাথেও ঘটেছে । আমিও তো একই ভাবে এই জীবন পার করে এসেছি অতীতে । হঠাৎ করেই তাই বইটাকে বড় আপন মনে হতে থাকে আমার । মনে হতে থাকে যেন এগল্প গুলো যেন আমার বড় পরিচিত । আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা ! 


৪. 

আমাদের সবার জীবনেই বলার মত কিছু না কিছু গল্প থাকে । প্রতিদিনকার ছোট ছোট গল্প নিয়েই মূলত আমাদের একটা জীবন তৈরি হয় । কারো কারো জীবনের এই গল্প গুলো না বলাই থেকে যায় । কেউ আবার বলার জন্য কাউকে খুজে পায় না আবার কেউ কেউ হয়তো সে গল্প গুলো কিভাবে বলবে সেটা বুঝতে পারে না । বাসি বকুলের ঘ্রাণ বইতে লেখিকা তার সেই জীবনের গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন । উপরে সেই গল্প গুলোর কয়েকটা গল্পের ব্যাপারে কেবল বলা হয়েছে । যদি পুরো বইয়ের গল্প গুলো নিয়ে বলতে যাই তাহলে দেখা যাবে বইয়ের থেকে পোস্টের দৈর্ঘ লম্বা হয়ে যাবে । একটু আগেই বললাম যে সবার জীবনের কিছু গল্প থাকে কিন্তু সবাই সেই গল্প বলতে পারে না । আবার আমাদের মাঝে কেউ কেউ থাকে যারা নিজেদের জীবনের এই গল্প গুলো খুব চমৎকার ভাবে বলতে পারেন । কারো কারো মুখ অতি সাধারণ ঘটনাও বড় বেশি মধুর শোনায় । মানুষ তন্ময় হয়ে সেই গল্প শুনতে থাকে । বাসি বকুলের ঘ্রাণও সেই তেমনই তন্ময় হয়ে শোনার গল্প । একবার শুরু করলে তা শেষ না করে ওঠার উপায় নেই । বিশেষ করে যখন আপনি বই পড়তে পড়তে ভাববেন যেন আরে এতো দেখি আমার কিংবা আমার পরিচিত মানুষেরই গল্প ! 



৫.

বইটি আজই সংগ্রহ করে পড়ে ফেলতে পারেন । লেখিকার লেখার হাত নিয়ে কোন কিছু বলার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না । সেটা সম্পর্কে সকল ব্লগারদের একটা পরিস্কার ধারণা থাকা স্বাভাবিক ! কোন এক বর্ষণ মুখ বিকেলে বই পড়া শুরু করবেন । অলস বিকেলে চা কিংবা কফির সাথে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়তে গিয়ে আপনার এক অনাবিল আনন্দবোধ জাগভে । মনে হবে যে মানুষের জীবনে কত চমৎকার সব ঘটনা ঘটে । আপনি নিজেও উপলব্ধি করতে পারবেন যে আপনার জীবনটাও কিন্তু কম চমৎকার নয় । বিশেষ করে লেখিকার জীবনের সাথে যখন নিজের জীবনের একটা মিল খুজে পাবেন । আপনার শৈশব কৈশোর কিংবা যুবক বয়সের সাধারণ ঘটনা গুলো নিয়ে আপনি আবার ভাবতে বসবেন একটু । মুখে তখন আপনা আপনি চলে আসবে একটা সুখস্মৃতির হাসি !