পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড

 অতীতে যদি ফিরে যাওয়ার উপায় থাকতো তাহলে আপনি কী করতেন? 

এই প্রশ্নের উত্তর চট করে দেওয়া সম্ভব না । আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু থাকে যা আমরা বদলে ফেলতে চাই । অতীতে ফিরে গেলে আমরা হয়তো সেই সব জিনিস গুলো আমরা বদলে ফেলতে চাই । শহরের একটা নার্সিং হোমের কাছে শান্ত ছোট একটা ক্যাফে । বসার জন্য খুব বেশি জায়গা নেই সেখানে ।

ক্যাফের দেওয়ালে তিনটা ঘড়ি রাখা আছে । তিনটা ঘড়ি তিনটা সময় দেখায় । ক্যাফের ভেতরে কোন এয়ারকন্ডিশনার নেই তবুও ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে সব সময় । তবে এই ক্যাফের একটা বিশেষত্ব হল এই ক্যাফেতে মানুষ অতীতে ফেরৎ যেতে পারে । এই কিংবদন্তী যখন শহরময় ছড়িয়ে পড়লো তখন মানুষজন লাইন ধরে আসতে লাগলো ক্যাফেতে । কিংবদন্তী কোন মিথ্যা না । সত্যিই ক্যাফেতে করে যাওয়া যায় অতীতে । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে অতীত ভ্রমন করার বেলায় । মানুষজন যখন সেই নিয়মের কথা জানতে পারলো তখন ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করলো অতীত ভ্রমনের ব্যাপারে । 


বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড বইটা মূলত চারটা গল্পের সমারহ । চারটা গল্প আলাদা আলাদা হলেও গল্পের চরিত্র গুলো একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত । গল্পের শুরু হয় এক যুগলকে দিয়ে । ছেলেটি চাকরি নিয়ে চলে যায় আমেরিকায় । মেয়েটি অনেক কয়বার বলতে চায় যে ছেলেটিকে যেন না যায় কিন্তু নিজের ঈগোর কারণে বলতে পারে না । ছেলেটি চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে আবারও ফিরে আসে ক্যাফেতে । ক্যাফে মালিককে অনুরোধ করে যেন তাকে এক সপ্তাহ আগে আবারই সেই সময়ে ফেরৎ পাঠানো হয় যাতে সে তার প্রেমিক আমেরিকা যেতে মানা করতে পারে । তখনই ক্যাফে মালিক জানায় যে এই ক্যাফেতে করে অতীতে যাওয়া যায় ঠিকই তবে অতীতে গিয়ে যাই করা যাক না কেন সেটা বর্তমানের কোন পরিবর্তন ঘটাবে না । অর্থ্যাৎ তার প্রেমিক যে আমেরিকা চলে গেছে সেটা কোন ভাবেই বদলানো যাবে না । তারপরেও মেয়েটি চেয়ে চায় অতীতে । ক্যাফে মালিক তখন তাকে জানায় আরও কয়েকটা নিয়ম । সব থেকে গুরুত্বপূর্ন নিয়মটা হচ্ছে অতীতে যাওয়ার আগে তার সামনে দেওয়া হবে এক কাপ গরম কফি । গরম কফি ঢালার সাথে সাথেই সে অতীতে গিয়ে হাজির হবে । এবং অবশ্যই তাকে সেই কফি কাপ ঠান্ডা হওয়ার আগেই কফিটা শেষ করতে হবে এবং বর্তমানে ফিরে আসতে হবে । যদি কোন কারণে কফি ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে সে সারা জীবনে আটকে যাবে ঠিক ঐ সাদা পোশাক পরা মহিলার মত ! সেই মহিলাটা অতীতে গিয়ে স্বামীর সাথে কথায় বলায় এতোই মুশগুল হয়ে গিয়েছিলো যে সময় পার হয়ে গিয়েছিলো । তারপর থেকেই সে এই ক্যাফেতে বসে আছে । মেয়েটি সব জেনে চলে যায় অতীতে । দেখা করে নিজের প্রেমিকের সাথে । কিছুই বদলায় না কিন্তু তারপরেও অনেক কিছু বদলে যায় ফুমিকোর জীবনে । মেয়েটির নাম ফুমিকো ! এই গল্পটার নাম যুগল । এরপরের গল্পটার এক দম্পত্তির । স্বামীটি একটা জটিল রোগে আক্রান্ত । সে আস্তে আস্তে সব কিছু ভুলে যাচ্ছে । এমন কি এক সময়ে সে তার স্ত্রীকেও চিনতে পারে না । সেই সময়ে স্ত্রীটি জানতে পারে যে ভুলে যাওয়ার আগে স্বামীটি তাকে কিছু দিতে চেয়েছিলো । একটা চিঠি । সেই চিঠিআনতেই সে পাড়ি জমায় অতীতে । যখন চিঠিটা সে হাতে পায় তখন সব আদলেই সব কিছু বদলে যায় । এরপর আসে দুইবোনের গল্প । বড়বোন পালিয়ে চলে আসে টোকিওতে তার পারিবারিক ব্যবসা করবে না বলে । কিন্তু ছোট বোন বারবার ফিরে আসে বড়বোনের কাছে । তার সাথে দেখা করতে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে । বড়বোনের ধারণা হয় যে ছোটবোন তাকে কেবল ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে । সে এই জন্য ছোটবোন এলেই লুকিয়ে থাকতো । দেখা করতো না । কিন্তু সেই ছোটবোন একবার টোকিও থেকে ফিরে যাওয়ার পথে কার এক্সিডেন্ট করে মারা যায় । বড়বোন তখন অতীতে ফিরে গিয়ে আরেকবার তার সাথে কথা বলতে চায় । তখনই জানতে পারে যে ছোটবোনটি তাকে কতই না ভালবাসে ! শেষ গল্পটা মা মেয়ের । ক্যাফে মালিকের বউয়ের যখন বাচ্চা হবে তখন থেকেই সে জানতো যে সে বাঁচবে না । ছোট বেলা থেকেই তার হার্ট দুবল । এতো ধকল সে সহ্য করতে পারবে না । তারপরেও সে মা হতে চায় । এবং ঠিক করে যে তার সন্তানের সাথে দেখা করবে ভবিষ্যতে গিয়ে । কেই কি আসলেই ভবিষ্যতে গিয়ে তার সন্তানের সাথে দেখা করতে পারবে?


বইটা শেষ করে আপনার মনে হবে না যে খুব আহামরি কোন বই পড়লাম । মনে হবে না যে এটা কোন আউট অব দ্য বক্স লেখা কিন্তু যখন আস্তে লেখা গুলোর কথা মনে হবে তখন মনের ভেতরে একটা চমৎকার অনুভূতি সৃষ্টি হবে । জাপানি লেখা গুলো এমনই চমৎকার । 

বইয়ের নাম টা বিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড । লেখকের নাম তোশিকাযু কাওয়াগুচির । অনুবাদ করেছেন সালমান হক ।