এই বছরে পড়া দ্বিতীয় বই ন-মানুষ । বইটার লেখক আমার একজন সহব্লগার । ব্লগারদের বই পড়তে আমি সব সময়ই পছন্দ করি । কাছের মানুষদের বই মনে হয় ।
বইটা হাতে এসেছে মাস খানেক আগে । তবে ইদানীং বই পড়ার অভ্যাস কমে গেছে । বইটা পড়বো পড়বো করেও শুরু করা হয় নি ব্যস্ততার জন্য। তাই বইটা পড়তে একটু সময় লেগে গেল । অবশ্য পড়ার সুযোগ পেয়েছি মাত্র দুইদিন । সেই দুই দিনে শেষ করেছি । আমার পাঠ পত্রিক্রিয়াতে সব সময় পুরো কাহিনী বলার একটা প্রবণতা থাকে । তবে এই বইটা একেবারে নতুন । এই মেলাতে আসবে । তাই কাহিনী বলা ঠিক হবে না ।
গল্পের শুরু হয় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা দিয়ে । প্রথমে মনে হবে যেন আলাদা আলাদা কোন ঘটনা ঘটেই চলেছে । একটার সাথে অন্যটার কোন সম্পর্ক নেই মনে হবে। তবে গল্পের কাহিনী যত এগিয়ে যাচ্ছিলো ততই আস্তে আস্তে সেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা গুলো একে অন্যের সাথে সম্পর্ক খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো ।
গল্পের শুরু হয় শীতলক্ষ্যাতে একটা মেয়ের মৃত মেয়ের লাশ ভেসে ওঠে । মেয়েটি কে, কোথা থেকে এসেছে আর কিভাবে মারা গেল প্রথমে জানা গেল না । থানার সেকেন্ড মারুফ সাহেবের জীবনে লাশটি নিয়ে এল এক অন্য রকম সমস্যা । তার ঘুম ছুটে গেল একদম । এমনই অবস্থা হল যে তাকে মানসিক অশান্তি দুর করতে মানসিক ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হল । অন্য দিকে সাজিদের জীবন থেকে হঠাৎ করেই সোমা হারিয়ে গেল । একেবারে হাওয়া হয়ে গেল মেয়েটা । এমন ভাবে একটা মেয়ে কিভাবে হারিয়ে যায় । অনেক চেষ্টা করেও সাজিদ সোমার কোন খোজ খবর বের করতে পারলো না । তবে এক সময়ে সোমা আবারও ফিরে এল তার জীবনে । তবে এমন ভাবে ফিরে এল যেটা সাজিদ কোন ভাবে আশা করে নি ।
সুখের সংসার ছিল ফিরোজ আর ফাহরীন । তারপর তাদের মাঝে কি হল যে ফাহরীন মডেল হতে উঠে পড়ে লাগলো । এবং এক সময়ে ফিরোকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেল । এমন কি তাদের ভালোবাসার ফসল একমাত্র ছেলে ফাহমিও মেয়েটিকে আটকে রাখতে পারলো না ।
আরেকদিকে এএসপি শুভর থানায় এসে হাজির হল এক কেস যেখানে বিদেশ ফেরৎ এক স্বামী তার বউকে মারধোর করেছে । কিন্তু থানায় এনে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হল তখন জানা শুভ আর রাকিবের মনে হল যে এই কাহিনীর পেছনে আরও অন্য কাহিনী রয়েছে ।
আবার একটা ফ্লাট থেকে পাওয়া গেল একটা ছেলের মৃত দেহ । সেই মৃত দেহের খোজ খবর করতে গিয়ে উপরের একটা ঘটনার সাথে সংযোগ পাওয়া গেল । এরপর যতই কাহিনী এগিয়ে যেতে লাগলো ততই দেখা গেল উপরের ছোট ছোট আলাদা কাহিনী গুলো একে অন্যের সাথে সম্পর্ক যুক্ত । এক সময়ে সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা গুলো যুক্ত হয়ে এক সাথে ।
গল্পের কাহিনী আপাতত এই পর্যন্ত । এর বেশি আর কিছু না বলি । এবার বলি যে বইটা পড়ে আামর কেমন লেগেছে । সত্যিই কথা বলতে যে বই পড়ে আমি একেবারে আবিভূত হয় নি । তবে বই পড়ে আমি বিরক্তও হই নি । বরং বলা যায় বইটা যত সময় পড়েছি খুব দ্রুত পড়তে পেরেছি । এটা বইয়ের ভাল দিক । পাঠক আশা করি বই পড়তে পড়তে বিরক্ত হবেন না । বরং দ্রুত পড়ে শেষ করতে পারবে । লেখক বইতে সমাজের একটা নগ্ন দিক কঠিন ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । সমাজের চাকচিক্যের আড়ালে একটা ভয়ংকর দিক যে আছে আমরা কজন সেটা জানি । পড়তে আমার বারবার মনে হচ্ছিলো যে আসলেই কি একম কি হয় বাস্তবে !
এই বইয়ের সব থেকেে ভাল দিক আমার কাছে মনে হয়েছে গল্পের ফ্লো । কাহিনী প্রথম দিকে একটু এলোমেলো মনে হবে । কারণ লেখক সেখানে প্রথমে প্লট তৈরি করছেন আস্তে ধীরে । তারপর যখনই ঘটনা গুলোর একটার সাথে অন্যটা যুক্ত হতে থাকবে তখন কাহিনী এগিয়ে যাবে দ্রুত । এই ব্যাপারটা আমার সব সময় পছন্দ । বই পড়তে পড়তে যদি ঝিমিয়ে যেতে হয় সেই বই আমার ভাল লাগে না । সেদিক থেকে এই বইটা চমৎকার । তবে গল্পের শেষটা নিয়ে একটু যেন দ্বিধায় ছিলাম । একবার মনে হচ্ছে শেষ যেন এইভাবে হবে আবার মনে হচ্ছিলো যে এইভাবে হবে না । অন্য শেষ হবে । দুই প্রেডিক্টের একভাবে শেষ হয়েছে । তবে একেবারে শেষ ঘটনাটা লেখকে না দিলেও হয়তো পারতেন । যদিও এটা একান্তই আমার নিজেস্ব মতামত !
বইয়ের খারাপ দিক হচ্ছে বানানে । আমার নিজের বানান ভুল যায় প্রচুর । এই লেখার ভেতরেও বানান ভুল আছে নিশ্চয়ই । তাই আমার অন্যয়ের বানান ভুল ধরা সাজে না । তবে একটা ভাল বইয়ের অন্যতম একটা ভাল হল নির্ভুল বানান । এই ব্যাপারে লেখকে আরও মনযোগী হতে পরামর্শ দেব । বিশেষ করে পড়ি আর পরি বানানের স্পষ্ট গলোযোগ আছে । পরের সংস্করণে অবশ্যই আরও ভাল প্রুফ চেক করতে অনুরোধ করবো । এতে বইয়ের মান আরও বেড়ে যাবে।
বইয়ের পৃষ্ঠার মান চমৎকার । মূল্যের হিসাবে চমৎকার পৃষ্ঠা দেওয়া হয়েছে । বাঁধাই মজবুত ।
সব শেষে বইয়ের জন্য শুভ কামনা রইলো । আপনারা চাইলে বইটা পড়ে দেখতে পারেন । এক বৈঠকেই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারবেন আশা করি ।