আফ্রিতা... আধারের সন্ধানে

ছবিঃ আফসার ব্রাদার্স

বইটা একটা অতিপ্রাকৃত ঘরোয়ানার বই । বইয়ের মূল চরিত্র আফ্রিতা নামের এক মেয়ের । বড়লোক বাবার মেয়ে । বাবা মারা গেছেন কিছুদিন আগে । এখন তার দায়িত্ব হচ্ছে বাবার ব্যবসা দেখা শুনা করার কিন্তু সেটা সে না করে, সে ভুতের ওঝা গিরি করে বেড়াচ্ছে । তার বাবারও ঠিক একই স্বভাব ছিল । তবে তারা কেবল নিজের মধ্যেই এই গুপ্ত বিদ্যাটা রেখেছিলেন । কিন্তু আফ্রিতা এই কাজ গুলো করে মানুষের উপকারের জন্য । ফেসবুকে তার ফ্যানপেইজ রয়েছে । মাঝে মাঝে রেডিওতে সে সাক্ষাতকারও দেয় এই অতিপ্রাকৃতি বিষয় গুলো নিয়ে । 


বইতে মোট চারটা গল্প রয়েছে । প্রথম গল্টার নাম ''অপদেবতা'' । একটা তিনতলা বাড়িকে নিয়ে কাহিনী । বাড়ির নাম অর্কিড ভিলা । নতুন বাড়ি । সেখানে তিনটা পরিবার থাকতে এসেছে । থাকতে এসেই নানান ভৌতিক ঘটনার সম্মুখীন হতে থাকে তারা । এক সময়ে ঘটে যায় বড় দুটো দুর্ঘটনা । তারপর সবাই বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যায় । একই পাড়াতে থাকে ইরফান নামের এক ছেলে । সে হচ্ছে আফ্রিতার ভক্ত । তার মাধ্যমেই আফ্রিতা খোজ পায় এই ভিলার । এখানে এসে হাজির হয় এবং বাড়ির রহস্য বের করে । কী ঘটছে এই বাড়িতে এবং কেন ঘটছে । শেষ পর্যন্ত কিভাবে সমাধান করে সেটাই হচ্ছে দেখার বিষয় । 


দ্বিতীয় গল্পের নাম হচ্ছে ''ছলা-কলা'' । এই গল্পে আফ্রিতার বাবার বন্ধুর মেয়ে পুষ্পিতার সাথে একটা সমস্যা সৃষ্টি হয় । সে কেবলই ভুলভাল দেখতে শুরু করে । এই অফিসে গেল, কাজ করলো কিন্তু দেখা গেল সে বাসাতেই রয়েছে । গাড়িতে করে বাসায় ফিরে আসছে কিন্তু কোন ভাবেই রাস্তা খুজে পাচ্ছে না । এমন ঘটনা ঘটতে থাকে । আফ্রিতার কাছে সাহায্য চায় সে । আফ্রিতা তাদের বাসায় যায় এবং সেই সমস্যার সমাধান করে । 


তৃতীয় গল্পের নাম ''আত্মহনন'' । এই গল্পের কাহিনী একটা হোস্টেলকে কেন্দ্র করে । হোস্টেলের একটা রুমে যেই থাকে রাতের বেলা সে তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে । অথচ সেই রুমের জানলা গ্রিল দিয়ে আটকানো । কোন ভাবেই সেখান থেকে বাইরে লাফ দেওয়ার উপায় নেই । এমন কি ছাদের গেটও বন্ধ থাকে । সেখান দিয়েও কেউ লাফ দিতে পারবে না । তাহলে কিভাবে মারা যাচ্ছে মেয়ে গুলো ! এই সমাধান করতেই আফ্রিতা সেই হোস্টেলের সেই নির্দিষ্ট রুমে থাকতে যায় এবং কেন মেয়ে গুলো মারা যাচ্ছে সেই রহস্য বের করে । 


সর্বশেষ গল্পের নাম ''আকাশ-প্রতীম'' । এই গল্পের প্রেক্ষাপট আমেরিকার কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের শহর কেস্টভিল । এই শহরেই আফ্রিতাদের একটা ছোট বাড়ি রয়েছে । ছুটি কাটাতে তারা এখানে আসে । আগে বাবা মায়ের সাথে আসলে এইবার সে একাই এসেছে । বছর দেড়েক আগে একটা ভৌতিক কেস সমাধান করে আফ্রিতা এখন সবার পরিচিত মুখ । যাই হোক এবার সে এখানে ছুটি কাটাতে আসলেও একটা কেসে জড়িয়ে পড়ে । এই কেস্টভিলে ভয়ানক ভাবে মানুষ খুন হওয়া শুরু হয় । খুনী তার ভিক্টিমকে প্রবল কষ্ট দিয়ে মারে । প্রবল শক্তিধারী সেই খুনী । ভিক্টিমের দেহ থেকে হাত পা ছিড়ে ফেলে । সবার শেষে মাথাটা আলাদা করে ফেলে । শহরের সেরিফ যখন একই ভাবেই মারা পরে তখন পুরো শহর জুড়ে এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে । আফ্রিতা তারপর এগিয়ে আসে এবং এই খুনীকে কে এই পৃথিবীতে ডেকে এনেছে সেটা বের কর । 


এই মোট চারটা গল্প । প্রথম গল্পটাই বেশি বড় আকারে লেখা হয়েছে । শেষ গল্প টা মাঝারি আকারে আর মাঝের দুটো ছোট আকারে লেখা হয়েছে । যারা আসলে সিরিয়াস সাহিত্য খুজবেন তাদের জন্য এই বই না । আমি যেহেতু অতিপ্রাকৃত বই পছন্দ করি তাই আমার কাছে মোটামুটি ভালই লেগেছে । তবে অবশ্যই বলবো না যে আমি একেবারে পুরোপুরি সন্তুষ্ট । সময় কেটে যাবে আর কি ! আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে লেখকে আরও বেশি মনযোগ দেওয়া উচিৎ লেখার দিকে । প্রথম গল্পে এমন দুইটা জায়গা আছে যেখানে লেখক নিজেই একজনের বউকে অন্যজনের সাথে যোগ করে দিয়েছে । স্বামী স্ত্রীর নাম উল্টাপাল্টা করে ফেলেছে । এমন ভুল লেখার মান খুবই কমিয়ে দেয় ! আর ভুতের গল্পের ভক্ত না হলে এই বই না পড়াই ভাল । 

বইয়ের প্রচ্ছদটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে । সেই সাথে বইয়ের বাঁধাই বেশ মজবুত । পৃষ্ঠার মানও ভাল বেশ । এই কারণে বইটর দাম একটু যেন বেশি । 


বইয়ের নাম আফ্রিতা... আধারের সন্ধানে

লেখক লুৎফুল কায়সার 

২৫৬ পৃষ্ঠার একটা বই, দাম ৪০০ টাকা