নজরবন্দী বইটি আমার কাছে বেশ অনেক দিন ধরেই পড়ে ছিল । শুরু করবো করবো করেও পড়া শুরু করা হয় নি । গতকাল রাতে এক বসায় পড়ে শেষ করে ফেললাম । আগে বইয়ের কাহিনী বলি । গল্পের কথক এক বর্ষণ মুখর রাতে এসে থামে ঘুমপুরে এসে হাজির হয় । সেখানেই তার পরিচয় হয় নৈশপ্রহরী ছোরাব আলীর সাথে । মূলত গল্পের কথক একজন গবেষক । ভুত প্রেত ওঝা নিয়ে যাদের কারবার তাদেরকে নিয়ে সে গবেষণা করেন । একটা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার হয়ে কাজ করে সে । তার গন্তব্য মূলত রূপপুরে । সেখানে একজন কবিরাজের কাছে । নাম
নারায়ন গোস্বামী । প্রতি মঙ্গলবার তার উপরে নাকি দেবী ভর করে এবং সেই দেবীই তার কাছে আসা নানান মানুষের সমস্যার সমাধান করে দেন । বোবা মানুষ কথা বলে ওঠে খোড়া মানুষ হাটা শুরু করে । এই কবিরাজের ব্যাপারে খোজ খবর নেওয়ার জন্যই তাকে যেতে হবে রূপপুরে ।ছোরাব আলী জানায় যে আজকে রাতে আর সেখানে যাওয়ার কোন উপায় নেই । যেতে হবে কাল । রাতে ছোরাব আলী বাজারের দোকান থেকে তার জন্য কিছু খাওয়ার জিনিস নিয়ে আসে । তার সাথে বসে নানান কথা বার্তা বলে । পরিবারের কথা বলে । এক সময়ে তাদের কথা বার্তা আধ্যাতিক দিকে মোড় নেয় । ছোরাব আলী মুখে গুরুবাদী মানব ধর্মের কথা শুনে কথক বেশ অবাক হয়ে যায় । সামান্য েক নাইট গার্ডের মুখে এমন কথা সে শুনতে পাবে সেটা সে মোটেও ভাবতে পারে নি ।
কিন্তু সকালে যখন সেই দোচালা ঘরে তার ঘুম ভাঙ্গে তখন তার সামনে অন্য কিছু অপেক্ষা করছিলো যেন । কাল রাতে এই বাজারে এক দোকানে চুরি হয়েছে । এবং অপরিচিত মানুষ হিসাবে তার উপরেই সন্দেহ যাওয়াটা স্বাভাবিক । তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চেয়ারম্যানের কাছে । সেখানে সে নিজের পরিচয় তুলে ধরে । সেই সাথে একটা বিষয় জেনে অবাক হয় যে যে ছোরাব আলীর কথা সে বলতে সেই ছোরাব আলী নাইট গার্ডের কাজ করতো ঠিকই তবে সে বছর দশেক আগে মারা গেছে ।
গল্পের কথক ব্যাপারটা মোটেই বুঝতে পারেন না । যদি ছোরাব আলী তার মনের তৈরি কোন চরিত্রই হবে তাহলে ছোরাব আলী নিজের পরিবার সম্পর্কে সে তথ্য গুলো ছোরাব তাকে বলেছে সেটা সে কিভাবে জানলো? রাতে তার সাথে ছোরাবের দেখা হয়েছে এই কথা ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের অনেক মানুষ তাকে দেখতে আসে । সে যে ভুত প্রেত নিয়ে গবেষণা করে সেটাও জেনে যায় । সকলের ধারণা হয় যে এইবার ছোরাবের ভুত সে তাড়াতে পারবে ।
চেয়ারম্যান তাকে রূপপুরের নারায়ন গোস্বামীর কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় । এমন কি সেই গ্রামে থাকার একটা ব্যবস্থাও করে দেয় । তবে শরীর খারাপের জন্য সে মঙ্গলবারে সেখানে যেতে পারে না । সে গিয়ে হাজির হয় পরের দিন । সেই দিনেই এক আচানক ঘটনা ঘটে যা কথককে আরও ভড়কে দেয় ।
ফেরার পথে আবারও চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে হাজির হয় তার অনুরোধে । সেখানে চেয়ারম্যানের মেয়ে শ্রাবন্তীর সাথে পরিচয় । এক সময়ে তার প্রতি মায়া জন্মে ।
গল্পের শেষ কি হয় সেটা এখন না বলি । গবেষক সাহেব কি পারবে নারায়ন গোস্বামীর ভন্ডামী বের করতে, নাকি সত্যিই মেনে নিবে যে লোকটার আসলেই ক্ষমতা রয়েছে ।
নরজবন্দী মূলত বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের ভেতরে যে কুসংস্কার রয়েছে সেটার একটা বহিঃপ্রকাশের চেষ্টা । এই চেষ্টায় লেখক সাহেব কতখানি সফল হয়েছে সেটা নিয়ে আমি নিজে খানিকটা ধোঁয়াশার ভেতরে আছি । তবে তার চেষ্টা ভাল ছিল এই টুকু বলতে পারি । এই ধরনের লেখা আরও লেখা হলে হয়তো মানুষের মন থেকে এই ভুত প্রেত জ্বীনে ধরার ব্যাপারে মানুষের সচেনতা বাড়বে। বইয়ের একটা ব্যাপার আমার ভাল লাগে নি সেটা হচ্ছে গল্পের বর্ণার মাঝে মাঝে লেখক কোন একটা ব্যাপার সম্পর্কে যখন জ্ঞান দেওয়া শুরু করেছেন সেটা অনেক বেশি লম্বা হয়ে গেছে যা আমার কাছে একটা বিরক্তির কারণ ছিল । এটা একান্তই আমার নিজের মতামত । ঐতিহাসিক উপন্যাস না হলে সাধারন এই জ্ঞান/ফ্যাক্ট হিস্ট্রির তথ্য গুলো যত সম্ভব কম দেওয়া উচিৎ ।
বইয়ের নাম নজরবন্দী
লেখক আসাদ রহমান
এক রঙ্গা এক ঘুড়ি থেকে প্রকাশি । পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৬।