আজকের পড়া বইয়ের নাম ''অম্যুইং'' । অম্যুইং একটা মারমা শব্দ । যার অর্থ উত্তরাধিকার । গল্পটার কাহিনী বিস্তার করেছে কাপ্তাইয়ে অবস্থিত একটা কাল্পনিক মারমা সমাজকে কেন্দ্র করে । জমাদ্দার টিলার নিচে কিছু দিন পরপরই একটা লাশ পাওয়া যেতে শুরু করে। ঠিক লাশ বললে ভুল হবে, একটা কাঁটা মাথা পাওয়া যেতে শুরু করলো । জমাদ্দার টিলার অপর পাশের অংশের রাস্তাকে নিরাপদ রাখতে সেনাবাহিনীর তৈরি একটা দেওয়াল রয়েছে সাদা চুনকাম করা । খুনের আগে সেই সাদা দেওয়ালে আজানা ভাষায় কিছু লেখা ফুটে ওঠে । প্রতিটি লেখা ফুটে ওঠার অল্প দিনের ভেতরে একটা খুন হয় । খুন হয় খুবই ভয়ানক ভাবে । খুন হওয়া ব্যক্তির শরীর পড়ে থাকে তার বাসভবনের আশে পাশে এবং তার কাঁটা মাথা পাওয়া যায় জমাদ্দার টিলা সংলগ্ন শ্মশানে । প্রশাসন অনেক চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু কোন ভাবেই খুন গুলোকে আটকাতে পারছে না ।
অন্য দিকে মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করে যে তাদের দেবী রোওয়াশ্যাংমা তাদের উপরে রুষ্ট হয়েছেন এবং এই কারণেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক। কিন্ত স্থানীয় প্রশাসন সেটা মানতে নারাজ । বিশেষ করে থানার ওসি সাহেব বিশেষ ভাবে লেগে গেলেন খুনীকে ধরতে । কিন্তু ঠিক কদিন পরেই স্বয়ং ওসি সাহেবই খুন হয়ে যান ।
এরপর আমাদের গল্পের প্রধান চরিত্র জুলকারনাইন ইসলামের প্রবেশ । পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী যুবক যুবতীদের সাইকো সোস্যাল সাপোর্ট এবং মেন্টাল ওয়েলবিং বৃদ্ধি বিষয়ক লেকচার দিতে সে হাজির হয় রাঙ্গামাটিতে । সেখান থেকে জেলা প্রশাসক এবং এক মারমা যুবকের অনুরোধে সেই খুনগুলোর তদন্ত করতে মারমা গ্রামে যেতে রাজি হয় ।
জুলকারনাইন গ্রামে হাজির হয় এক এনজিও কর্মী হিসাবে । তার তদন্ত কাজ শুরু করে । আস্তে ধীরে গ্রামের আবহ পরিবেশের সাথে মিশতে শুরু করে । কৌশলে এর ওর সাথে নানা ব্যাপারে জানতে শুরু করে । যখন খুন গুলো আটোপশী রিপোর্ট হাতে আসে তখন জুলকারনাইন খুনের আসল কারণ জেনে বেশ অবাক হয় । এর পেছনে যে প্রভাবশালী কারো হাত রয়েছে সেটা বুঝতে তার কষ্ট হয় না । এরই মাঝে তার পরিচিত এক তান্ত্রিক শৈলেন বিশ্বাস এসে হাজির হাজির গ্রামে । শৈলেনের কাছে সে জানতে পারে যে কর্ণ পিশাচিনী হাত রয়েছে এই খুন গুলোর পেছনে । জুলকারনাইনের জন্য অনেক বড় বিপদ অপেক্ষা করছে । এভাবে ঘটনা এগিয়ে যায় সামনে । এবং এক সময় তা শেষ হয় !
গল্পের শুরুতে কাহিনীটা যতখানি জমজমাট ভাবে শুরু হয়েছিলো, গল্প যত এগিয়ে যেতে থাকে সেই ভাবটা আর পাওয়া যায় নি । এই ধরনের গল্পে যে টানটান উত্তেজনার একটা ব্যাপার থাকে সেটা এই বইয়ে মিসিং মনে হয়েছে আমার কাছে । সব থেকে হতাশার ব্যাপার হচ্ছে বই শেষ করার আগেই যদি বইয়ের এন্ডিং অনুমান করে ফেলা যায় এবং সেটা শেষে মিলেও যায় তাহলে বইয়ের প্রতি একটা বিরূপ মনভাব সৃষ্টি হয় । এই বইয়ের বেলাতেও তাই হয়েছে ।
লেখকের নজরবন্দী বইয়ের কথা লিখতে গিয়ে বলেছিলাম, এখানেই সেই এক ব্যাপারে বলতে হচ্ছে । যে কোন গল্প উপন্যাসে অতিরিক্ত ফ্যাক্ট লেখা গল্প পড়ার আগ্রহ কমিয়ে দেয় । যেমন উদাহরন দিয়ে যদি বলি, গল্পে গ্রামে হেডম্যান কারবারির সাথে জুলকারনাইনের দেখা হয় । হেডম্যান কে কি করে এই ব্যাপারে অল্প কথায় বলা যেত । কিন্তু লেখক এখানে দুই তিন পৃষ্ঠা ভরে হেডম্যান কারবারি সম্পর্কে লিখেছে যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় । বিশেষ করে গল্প উপন্যাস লেখার ব্যাপারে এই ফ্যাক্ট গুলো যত কত ভাবে লেখা যায় তত ভাল । আরেকটা হচ্ছে লেখক ''নাই'' শব্দটা ব্যবহারে । চলিত ভাষায় ''নাই'' এর বদলে ''নি'' ব্যাবহার করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত ! আশা করি পরবর্তি লেখায় লেখক এই ব্যাপারটা খেয়াল করবেন ।
বইয়ের নাম অম্যুই
লেখকের নাম আসাদ রহমান
বেহুলা বাংলা থেকে প্রকাশিত
মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা ১২৮