ভালোবাসার পরাজয়ের থেকে বড় পরাজয় আর কিছু নেই । সারা পৃথিবী জয় করে আসার পরেও যখন ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একজন প্রত্যাখ্যাত হয় তখন সব কিছুই তার কাছে মূল্যহীন মনে হয় । এই একটা কারণেই মানুষ আমূল বদলে যেতে পারে । কঙ্কাবতীর কথা বইটায়ের কাহিনীও সেই কাহিনী বর্ণনা করে? হয়তো আবার হয়তো না । কঙ্কাবতীর কথা বইটা মূলত একজন মেয়ের জবানীতে বর্ণনাকৃত তার জীবনের একটা অংশবিশেষ ।
মেয়েটির মা অসম্ভব সুন্দরী একজন মেয়ে । কিন্তু তার বাবা দেখতে মোটেও সুন্দর নয় । মেয়েটির দাদু পছন্দ করে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন এমন সুন্দরী মেয়ের সাথে কিন্তু তাদের সংসারে মোটেই সুখ ছিল না । এক সময়ে মেয়েটির বাবা তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং আর ফিরে আসে না । এক সময় জানা যায় সে দেশ ছেড়েছে এবং তার মাকে তালাক দিয়েছে ।
মেয়েটির দাদু তার পুত্রবধুকে আবারও বিয়ে দিলেন । মেয়েটিও মায়ের সাথে চলল তার নতুন সংসারে । নতুন বাড়িতে মেয়েটিকে কেউই কাছে টেনে নিল না । নেওয়ার কথা না । সব থেকে আপন তার নিজের মায়ের কাছেই যেন মেয়েটি সব থেকে বেশি অবাঞ্জিত । সে যে একই বাড়িতে রয়েছে এই কথা যেন বাড়ির অন্য সবাই ভুলেই গেল ।
এক সময়ে মেয়েটি পড়তে হাজির হয় শান্তিনিকেতনে । কিন্তু সেখানে সে সন্ধান পায় এক স্বর্গীয় সুখের । সব কষ্ট সব বঞ্চনা ভুলে গিয়ে সেই সুখের পেছনে সে দৌড়াতে থাকে । কিন্তু সেই সুখ কি তার কপালে জোটে ?
জীবনের আরেক অধ্যায়ে তার পরিচয় হয় আরবাজের সাথে ।প বিদেশে পিএইচডি করছে । দেশে এসেছে বিয়ে করতে । মেয়েটিকে আরবাজ জানায় যে ঠিক ঠিক যেমন মেয়ের স্বপ্ন আরবাজ দেখতো সে একদম সেই রকম । তার জন্য সে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে । আবারও যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চায় মেয়েটি । কিন্তু কোথায় যেন একটা বাঁধা চলে আসে । কী যেন তাকে আটকে দিতে চায় ।
সব কিছু ছেড়ে মেয়েটি এবার নতুন পথে পাড়ি যায় । দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে সে তার দাদু বাড়ি গিয়ে কটাদিন কাটিয়ে আসতে চায় । সেখানে পড়ে রয়েছে তার মা বাবার কত স্মৃতি যার বেশির ভাগই সুখস্মৃতি নয় যদিও । সেখান থেকে মেয়েটি একটা অজানা সত্য জানতে পারে । অনেক চিন্তার পরিবর্তনও আছে ।
তারপর দুর দেশে পাড়ি দিয়ে সে । মেয়েটির গল্প বলা শেষ হয় । গল্পটা মূলত ছিল তার ছোট বেলার জীবন থেকে বর্তমান জীবনে কী ঘটেছে সেটার একটা বর্ণনা । হয়তো সামনে কোন দিন লেখিকা এই বর্তমান সময় থেকে সামনের দিনের কাহিনী বর্ণনা করবেন ।
আমাদের বর্তমান সময়ে বিয়ের পর ছাড়াছাড়া একটা সাধারন বিষয় হয়ে গেছে । এই বইতে মূলত ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা কিভাবে, কত কষ্ট নিয়ে বড় হয় সেটা দেখানোর একটা চেষ্টা করা হয়েছে । বলা যায় লেখিকা এখানে অনেকটাই সফল । লেখা পড়তে গিয়ে কখনই বিরক্তির ভাব আসে নি । বরং মাঝে মেয়েটির জন্য মনের ভেতরে একটা অজানা কষ্ট এসে যেন দলা পাকাচ্ছিলো । মেয়েটির কষ্ট যেন আমি নিজেই অনুভব করতে পারছিলাম । বলবো না যে একেবারে কালজয়ী উপন্যাস এটা । তবে সময় কাটানোর জন্য এমন একটা বই মন্দ নয় !
বইয়ের নাম কঙ্কাবতীর কথা ।
লেখিকা শায়মা হক
এক রঙ্গা এক ঘুড়ি থেকে প্রকাশিত । মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৬।