ভালোবাসার গল্পের ভেতরে একটা আলাদা শক্তি রয়েছে । সেটা মুহুর্তের ভেতরে সব কিছু কেমন বদলে দিতে পারে । মনকে এই সিক্ত করে তুলতে পারে আবার এই যেন আনন্দিত করে তুলতে পারে । আকাশ গঙ্গার তারা সেই রকম একটা ভালোবাসার গল্পের বই । গল্পের বইটাতে মোট ১২টি গল্প রয়েছে যার বেশির ভাগই ভালোবাসার গল্প । আমি মূলত ছোট গল্পের পাঠক । যে কোন ধরনের ছোট গল্প পড়তে আমার ভাল লাগে । সেটা যদি ভুত কিংবা রোমান্টিক হয় তাহলে তো কথায় নেই । বইয়ের লেখক খন্দকার নাইমুল ইসলাম । আমাদের সামু ব্লগের
একজন ব্লগার ।প্রথম গল্পটার নাম আকাশ গঙ্গার তারা । কোন এক অখ্যাত স্টেশনে বসে স্বপ্নীল আর শ্বেতা গল্প শুরু । এক সাথে বসে চাও খাওয়া আর সামনের দিনের স্বপ্ন নিয়ে কথোপকথন । গল্প শেষ হয় বিশ বছর পরে সেই একই স্টেশনে । তবে তখন অনেক কিছু বদলে গেছে স্বপ্নীলের জীবনে। জ্যোতিষী গল্পটা পড়তে গিয়ে প্রথমে ভেবেছিলাম কোন সাদামাটা জীবনের গল্প হবে কিন্তু গল্পটা শেষ করে মনের ভেতরে কী অদ্ভুত এক আদ্রতা অনুভব করলাম । কী তীব্র অপেক্ষা আর ভালোবাসার গল্প এই জ্যোতিষী । জাঙ্ক ইমেইল গল্পটা ঠিক ভালোবাসার গল্প না । আবার ভালোবাসার গল্পও । গল্পের কথক দুর্ঘটনায় আটকে পড়া এক মেয়েকে উদ্ধারে সাাহয্য করে । তারপর সেই সেই মেয়েটি কিভাবে আবারও তার জীবনে ফিরে আসে সেই গল্প । ভেজাল গল্পটা বেশ মজার । মোবারক কাজটা কিভাবে করতে চেয়েছিলো আর কোন কাজে ঘটনা ঘটে এই নিয়ে গল্প । প্রিয়বরাসু গল্প হচ্ছে আরেকটা কষ্টের গল্প । শ্বেতাকে লেখা এমন একটা চিঠি যা কোন দিন শ্বেতা জানবে না । তবে সেই চিঠি পড়ে পাঠকের মনে এক হুহু কষ্টের আগমন ঘটবে ঠিকই। পরিচয় গল্পটা আসিফ আর শ্বেতার । আমেরিকায় পড়তে এসে কাজের চাপ থেকে সাময়িক বিরতির জন্য আসিফ সোস্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট খোলে । সেখানে পরিচয় হয় শ্বেতার সাথে । আসিস শ্বেতাকে দেখে ভাবে মানুষ এতো সুন্দর হয় কিভাবে । সেই পরিচয় থেকে প্রনয় এবং বিয়ে । কিন্তু যখন শ্বেতা আমেরিকাতে আসিফের কাছে আসে তখন একটা অজানা সত্য আসিফের সামনে আসে । উৎসব গল্পটা এই বইয়ের বস থেকে চমৎকার গল্প গল্প গুলোর একটা । আসলে লেখকদের এমনই হওয়া উচিৎ । নিজের লেখার মাধ্যমে সমাজে হওয়া অনাচারের একটা চিত্র ফুটিয়ে তোলা । এই গল্পটা তেমনই একটা গল্প । সেলফোন আরেক টা কষ্টের গল্প । প্রিয় মানুষটাকে হারানোর কষ্ট আর এক না শেষ হওয়ার অপেক্ষার গল্প । হ্যালুসিনেশন গল্পটা খানিকটা মনস্তাত্ত্বিক গল্প । এক রাজনৈতিক নেতা হ্যালুসিনেশনের সমস্যা নিয়ে আসে এক মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে । তিনি যথা সম্ভব সেই রোগটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন । এই গল্পের সব চেয়ে চমৎকার দিকটা হচ্ছে গল্পে লেখক খুবই চমৎকার ভাবে সমাজের কয়েকটা অনাচারের দিক ফুটিয়ে তুলেছেন । জলছবি গল্পটাও ভালোবাসার গল্প । মিতুল আর শ্বেতার । অনেক দিন পরে প্রিয় ব্লগে ঢুকে একটা গল্প পড়ে মিতুল । তারপর বুঝতে পারে আসলে গল্পটার লেখক কে ! নোটবুক গল্পটা শুরু হয় শ্বেতা অনেক দিন পরে নিজের বাবার বাসায় আসে । নিজের পুরানো নোটবুক খুলে দেখে । ওর একটা স্বভাব ছিল নোটবুকের প্রথম পাতায় কবিতা লিখে রাখা । সেটা নিয়ে টানাটানি করতো অন্য বন্ধুরা । সেই নোটবুকেই নিজের পুরানো ইমেল আর পাসওয়ার্ড খুজে পায় । সেখানে লগিন করতেই বছর পাঁচেক আগে আসা স্বপ্নীলের একটা ইমেল দেখতে পায় সে । ভালোবাসার ঘ্রাণ এই বইয়ের আমার সব থেকে পছন্দের গল্প । গল্পটা একই সাথে আনন্দের এবং কষ্টের । স্যাম আর লিজার ভালোবাসার গল্প মূলত । তবে সেই সাথে গল্পের কথক আর শ্বেতার ভালোবাসার গল্পও রয়েছে ।
এই বইয়ের প্রতিটা গল্পই আমার পছন্দ হয়েছে । ছোট ছোট সব গল্প আবেগে ভরা । তবে একটা ব্যাপার হচ্ছে প্রায় প্রতিটা গল্পের নায়িকার নাম একই । গল্পের চরিত্র যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন নাম গুলো আলাদা হলেই সম্ভবত ভাল হত । আমি যখন প্রথম গল্প লিখি তখনকার প্রায় সব গল্পের নায়িকার নাম একই থাকতো । সম্ভবত লেখকের এই নাম প্রতি আলাদা কোন আকর্ষন রয়েছে । এছাড়া প্রায় গল্পের প্লটে লায়ক বাইরে পিএইচডি করতে গিয়েছে, নাইন ইলেভেন কারণে আটকে গেছে এই ব্যাপার গুলো এসেছে । যদি এটা না থাকতো তাহলে গল্পের বৈচিত্রতা মনে হয় আরও বেশি সুন্দর হত ।
যারা ছোট গল্প পড়তে পছন্দ করেন নির্দ্বিধায় বইটা পড়তে পারেন । সময় ভাল কাটবে আশা করি ।
বইয়ের নাম আকাশ গঙ্গার তারা ।
লেখক খন্দকার নাইমুল ইসলাম
প্রকাশিত হয়েছে চৈতন্য থেকে । মোট পাতা সংখ্যা ১২০ ।