পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ দ্য লাস্ট ওডেসি

হোমারের দুই মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডেসি । ধারণা করা হয়  হোমার এই মহাকাব্য রচনা করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকে । যদিও এই নিয়ে তর্কবিতর্কের শেষ নেই । কিন্তু সব থেকে বড় তর্ক হচ্ছে এই কাব্য কি সম্পূর্ণটাই কাল্পনিক নাকি কোন সত্য ঘটনাকে আশ্রতি করেই এই মহাকাব্য রচিত হয়েছে ? সম্প্রতিকালের কিছু আবিস্কার থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে আসলেই সেই সময়ে বেশ কিছু যুদ্ধ হয়েছিল এবং তা ভূমধ্যসাগরের এলাকাকে গিলে

ফেলেছিল । এটাকেই অনেক ইতিহাসবিদ প্রথম বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ হিসাবে ধরে থাকেন । এই বিশ্ব যুদ্ধে পতন হয়েছিলো ব্রোঞ্জযুগের তিনটা সভ্যতার- গ্রিক মাইসেনিয়ান, আনাতোলিয়ান হিট্টি এবং মিশরীয় সভ্যতা। তবে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন এই তিন সভ্যতা ছাড়াও আরও এক সভ্যতা এই যুদ্ধে অংশ করেছিলো এবং এই তিন সভ্যতাকে ধ্বংস করেছিলো । সিগমা ফোর্সের এইবারের অভিযান এই সভ্যতাকে কেন্দ্র করেই । 

বান্ধবী মারিয়ার আমন্ত্রনে নোটিক্যাল আরকিওলজিস্ট ড. ইলেনা কারগিল মিশর থেকে গ্রিনল্যান্ডে এসে হাজির । সেখানে এক বিশাল বরফ খন্ড সরে যাওয়ার কারণে সুপ্রাচীন এক জাহাজ আবিস্কৃত হয়েছে । সেটা পরীক্ষা করার জন্যই ইলেনার আগমন । সাথে আরও দুই প্রত্নতত্তবিদ রয়েছে । জাহাজ পরীক্ষা করে ওটা দেখতে পায় সেখানে জাহাজের ক্যাপ্টেনের ঘরে স্বয়ং ক্যাপ্টেন এখনও হাজির হয়ে আছেন । ঠান্ডার কারণে এখনও তার দেহ টিকে রয়েছে । তার কাছে পাওয়া যায় একটা আশ্চর্য সোনার মানচিত্র আর সেটা সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য এস্ট্রোল্যাড । আরও কিছু পরীক্ষা করার আগেই তাদের উপর হামলা হয় । এবং ড. ইলেনা কারগিলকে অপহরন করে নিয়ে যাওয়া হয় । সাথে করে নিয়ে যাওয়া হয় সোনার সেই মানচিত্রটাও । তবে জাহাজের কালো তেলের ভেতরে ডুবে থাকা আদিম দানব জেগে ওঠার কারণে এস্ট্রোল্যাডটা তারা নিয়ে যেতে পারে না । তবে পিছুও ছাড়ে না সেটার । বারবার চেষ্টা চালিয়ে যায় সেটা ছিনিয়ে নিতে ।

ইলেনাকে উদ্ধার করতে হাজির হয় মারিয়া সাথে সিগমা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ কোয়ালস্কি । যুক্ত হয় কমান্ডার গ্রে আর শেইচান । দুইজন ছয় মাস হয়েছে একেবারে কাজ থেকে আলাদা, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলো ছেলে জ্যাককে নিয়ে । কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে গ্রেকে আসতেই হয় । ইলেনা কারগিল আর কেউ নয়, আমেরিকার প্রভাবশালী সিনেটার কারগিলের মেয়ে । সিনেটরের খুব সম্ভবনা রয়েছে সামনের বারই তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে । তাই সিগমার উপরে চাপটা বেশী । অন্য দিকে তাদের দলে আরও এসে যোগ দেয় ক্রসিবল বইয়ের ভ্যাটিক্যানের সেই স্পাই যাজক । সাথে প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । সবাই মিলে খুজতে শুরু করে ড. ইলেনাকে আর কারা সেই দল যারা ইলেনাকে অপহরন করেছে, নিয়ে গেছে সোনার মানচিত্রটা । আর সব থেকে বড় প্রশ্ন কেন?

এই দিকে বন্দী অবস্থায় ইলেনা বসে নেই । তার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বনু মুসা নামের প্রাচীন সংঙ্ঘটা খুলে ফেলতে চায় নরকের দরজা । সেই দরজা যেটা খুলেছিলো বনু মুসা পরিবারের চার নম্বর ভাই হুনাইন বিন মুসা, ইতিহাত যাকে ভুলে গিয়েছে, যার নাম পরিবারের ইতিহাস থেকে একেবারে মুছে ফেলা হয়েছে । এই হুনাইন বিন মুসাই হচ্ছে গ্রিনল্যান্ডের জাহাজে পাওয়া সেই ক্যাপ্টেন । 

সিগমা আর বনু মুসা দুইটা দল মুখোমুখী । বনু মুসায় লক্ষ্য যে কোন ভাবে সেই নরকের দরজাটা আবার খুলে ফেলা । এই পৃথিবীতে আবার প্রলয় নিয়ে আসা অন্যদিকে সিগমা চায় আগে সেখানে পৌছাতে । তারা জানতে চায় আসলেই জাহাজের সেই ক্যাপ্টেন হুনাইন নরকের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেছিলো কিনা । করলে সেখানে কি ছিল ! কি সেই প্রাচীন মুসলিম প্রযুক্তি । এবং এই প্রযুক্তি যাতে কোন ভাবেই কোন খারাপ হাতে না পরে । কিন্তু ওদের প্রতিটি পক্ষেপে বাঁধা আসতে থাকে । শত্রু পক্ষে আগে থেকেই সব টের পেয়ে যাচ্ছে বারবার হামলা করছে । কেবল বনু মুসার বিরুদ্ধেই লড়াই নয়, ওদের লড়তে হচ্ছে ভেতরে থাকা অন্য কোন এক শক্তির পক্ষে ! 

শেষ পর্যন্ত গ্রেদের দল কি নরকের দরজা খুলতে পারে? পারলেও সেখান থেকে নিরাপদে বের হতে কি পারে ! 

যথারীতি জেমস রোলিন্সের সিগমা ফোর্সের বই গুলো যেমন হয়, এটাও সেই রকম । প্রাচীন কোন ঘটনার সাথে বর্তমান কালের মিলমিশ ঘটানোটা জেমস রোলিন্সের একটা বৈশিষ্ট্য । এই বইয়ের প্লটটা আমার কাছে সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে । যদি হোমারের ওসেডি পড়া থাকতো তবে হয়তো আরও বেশি চমৎকার লাগতো । বইয়ের শেষে যথারীতি সব ইতিহাস আর বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা তিনি প্রদান করে থাকেন । শুরুতে তুলে ধরেন ইতিহাসের দলিল । এই বইয়ের ভাষা আর বর্ণনা যেন একটু বেশিই কঠিন মনে হয়েছে আমার কাছে । অন্যান্য বই গুলো পড়তে সেই বইয়ের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে কল্পনা করে নিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না কিন্তু এই বইতে মনে হচ্ছিলো যেন আমি অন্ধকার দেখছি । লেখা যেন মাথায় ঢুকছে না, মানস পটে ফুটে উঠছে না । এখন এটা কি লেখকের লেখার কারণে, নাকি অনূবাদকের কারণে নাকি আমার নিজের কল্পনা শক্তি কমে যাওয়ার কারণে সেটা বলতে পারছি না । তবে এটা ক্রসিবল থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে । ক্রসিবলের মত বোরিং মোটেই মনে হয় নি । বিশেষ করে বার কয়েক দেওয়া টুইস্ট গুলো কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বেশ । পড়ে ফেলতে পারেন । 


দ্য লাস্ট ওডেসি

জেমস রোলিন্স

অনুবাদে ফুয়াদ আল ফিদাহ

মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা ৪৪৭, মলাট মুল্য ৪৫০ টাকা