দি অ্যাপ্রেন্টিস

 টেস গেরিটসেনের দ্য সার্জন বইটার কাহিনী আমার পুরোপুরি মনে ছিল না । ভাসা ভাসা কিছু কাহিনী মনে ছিল, আরেকবার একটু মনে করিয়ে নিতে হল এই বইটা পড়ার আগে ! দি অ্যাপ্রেন্টিস হচ্ছে দ্য সার্জন গল্পের পরের পর্ব । সার্জন গল্পটা যেখানে শেষ হয়েছে তার বছর খানেক পর থেকে এই গল্পটা শুরু হয়েছে । 

গল্পের শুরুতে দেখানো হয়েছে যে সিরিয়াল কিলার হয়েট জেলে সাজা কাটছে, সেখানে একজন কয়েদীকে কেউ ছুরি মারে । সার্জন আহত কয়েদীর রক্তের ধারার দিকে তাকিয়ে থাকে । সেখানেই ইঙ্গিত থাকে যে সার্জনের মত সিরিয়াল কিলার আসলে একজন না । আরও রয়েছে । দি অ্যাপ্রেন্টিস সেই অন্য খুনির গল্প নিয়ে । 

বোস্টন শহরে আবারও এক সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব হয় । ভয়ংকর আর বিকৃত একটা খুনী । সার্জন যেমন কেবল অসহার ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের তার শিকার বানাতো, তারপর তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে কাটা ছেড়া করতো, এই খুনী শিকার বানায় দম্পত্তিদের । ঘুমন্ত স্বামী স্ত্রীর উপরে সে হামলা করে । তারপর স্বামীটিকে বেঁধে রেখে তার চোখের সামনেই স্ত্রীর উপর নির্যাতন করে । স্বামীকে সেই দৃশ্য দেখতে বাধ্য করে । পরে স্বামীটিকে হত্যা করে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যায় । কয়েকদিন পরে পাওয়া যায় স্ত্রীর লাশ । এভাবেই একের পর এক খুন করে চলেছে খুনী ! 

খুনের তদন্তের দায়িত্ব এসে পরে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের উপরে । ডিটেক্টিভ জেন রিজোলি প্রধান ডিটেক্টিভ হয়ে তদন্ত শুরু করে । রিজোলী এই খুনের সাথে সাদৃশ্য খুজে পায় সার্জনের খুন গুলোর সাথে । কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে অন্যেরা এর সাথে দ্বিমত পেষণ করে । তাদের ধারণা যে রিজোলি এখনই গত বছরে ঘটে যাওয়া সার্জনের ট্রোমা থেকে বের হতে পারে নি । তাই সে সব কিছুর সাথেই সার্জনের মিল খুজে পাচ্ছে। সত্যিই তাই, সার্জনের ভীতি থেকে রিজোলি তখনও মুক্ত হতে পারে নি ঠিকঠাক মত । 

এরই মধ্যে এফবিআই থেকে এক এজেন্ট এসে হাজির হয় তদন্তের পরামর্শদাতা হিসাবে । রিজোলির ব্যাপারটা ঠিক পছন্দ হয় না । একটা সিরিয়াল কিলিংয়ের কেসে কেন এফবিআই আগ্রহ দেখাবে ! এছাড়া এজেন্ট গ্যাবরিয়াল ডিনের পেট থেকে কোন কথা বের হয় না । সে রহস্যময় আচরন করে । সে যে কিছু লুকাচ্ছে সেটা বুঝতে জেন রিজোলির মোটেও কষ্ট হয় না । কিন্তু এজেন্ট ডিনের সুপারিশ এসেছে অনেক উচু স্থান থেকে । কোন ভাবেই তাকে কেস থেকে হটানোর উপায় নেই । সাথে নিয়েই কাজ করতে হয় ।

ঠিক এই সময়ে জেলখানা থেকে তিনজনকে খুন করে পালিয়ে যায় সার্জন । এরপর দুইজন সিরিয়াল কিলার এক জোট হয়ে পরের খুন করে । স্বামীকে খুন করে স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় । পরবর্তিতে স্ত্রীর লাশটি এমন ভাবে তাতে বুঝতে কষ্ট হয় না যে কাজটা সার্জনের । রিজোলির জন্য সে লাশ সাজিয়ে রেখে গেছে। সার্জন এবং তার সহযোগী এক হয়ে কাজ করছে ।  আগে তো একজন খুনীর শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো এখন দুজন সিরিয়াল কিলার এক জোট হয়ে শহরের ঘুরে বেড়াচ্ছে । 

তদন্ত করতে গিয়ে রিজোলি অন্য এক শহরে গিয়ে হাজির হয় । যেখানে ঠিক একই ভাবে খুন হয়েছিলো আরও এক স্বামী-স্ত্রী ! একসময় ডিন নিজেই তার এই কেসের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সকল ঘটনা বর্ণনা করে । তখন রিজোলি বুঝতে পারে এই খুনী সাধারণ কেউ নয় এবং এটা সম্প্রতিকালে শুরু হওয়া কোন ঘটনা না । অনেক আগে থেকেই চলে আসছে এই খুনের সিলসিলা । এখন এই দুই খুনী রিজোলির পেছনে পরেছে । অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তারা দুজন এগিয়ে আসছে রিজোলির দিকে !

শেষ পর্যন্ত রিজোলি কি দুই খুনির হাতে ধরা পরে যায় ? নাকি রিজোলিকে নিজেদের শিকার বানানোর আগেই রিজোলি ওদের শিকার বানিয়ে ফেলে ! 

সিরিয়াল কিলিংয়ের গল্প গুলো আমাকে ঠিক টানে না । টানে না কারণ বেশির ভাগ গল্পেই খুনী হঠাৎ করে আবির্ভাব হয় । পুরো গল্পে তার উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে । অন্য থ্রিলার গল্পে যেমন পরিচিত চরিত্রের মাঝেই নেগেটিভ চরিত্র থাকে । ডিটেক্টিভ নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে তাকে খুজে বের করে । এই গল্পে সার্জনের বেশ কিছু আবির্ভাব রয়েছে । বলা যায় গল্পের শুরু আর শেষ তাকে দিয়েই । কিন্তু অন্য খুনী একেবারে শেষে উপস্থিত হয় । তখন সব গুলো খুনের সাথে তার সুত্র খুজে পাওয়া যায় ! কিভাবে সে খুন গুলো করতে পেরেছে । 

গল্পে জেন রিলোজির মনস্তাত্তিক অবস্থাটা খুব বেশি ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । একজন নারী পুলিশ অফিসার হয়ে সব সময় নিজেকে পুরুষের সামনে প্রমান করে আসার যে স্ট্রাগল সেটা খুব ভাল ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । সেই সাথে গল্পের প্লটের যে টেনশন সেটা বলা চলে প্রতিটা পাতায় পাতায় ভরপুর ছিল । পড়ার সময় আবার বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি এল, এখনই বুঝি দেখা গেল । মানে সত্যি যদি শহরে কোন সিরিয়াল কিলার ঘুরে বেড়ায়, মানুষের মনে যে রকম আতঙ্ক বিরাজ করবে, পড়ার সময় সেই রকম একটা পরিবেশ যেন আমি পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম । এছাড়া আরেকটা বর্ণনা সব থেকে মুগ্ধ করেছে সেটা হচ্ছে ফরেনসিক আলোচনা। একদম সত্যিকারের ফরেনসিক এক্সপার্টটা যেভাবে লাশ এবং লাশের সব কিছু পরিক্ষা করে, বিশ্লেষণ করে সুত্র বের করে এই খানে সেই সবের পরিস্কার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । লেখক একজন ডাক্তার বলেই এই সব বর্ণনা এতো নিখুত ভাবে দিতে পেরেছে । 


বই পড়ে চাইলে পরামর্শ থাকবে যে আগের পর্ব দ্য সার্জনটা যেন পড়ে নেওয়া হয় । তাহলে বইটার পুরোপুরি মজা পাওয়া যাবে । 



বইয়ের নাম দি অ্যাপ্রেন্টিস 

লেখক টেস গেরিটসেন

অনুবাদ করেছেন সান্তা রিকি 

ভূমি প্রকাশ থেকে প্রকাশিত । 

মুদ্রিত মূল্য ৪২০, মোট পৃষ্ঠা ৩৫৭