পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ ক্রসিবল (সিগমা ১৪)

 জেমস রোলিন্সের সিগমা ফোর্স সিরিজের ভক্ত হয়েছিলাম তার ম্যাপ অব বোনস পড়ে । এমন বই তখন আর একটাও পড়ি নি । এরপর একে একে সব বই পড়ে শেষ করেছি । তবে যতই দিন যেতে লাগলো সিগমা ফোর্সের কাহিনী আমার কাছে আস্তে আস্তে পানসে মনে হতে লাগলো । কেন লাগলো, সেটার কোন ব্যাখ্যা জানা নেই । ক্রসিবল সিগমা ফোর্স সিরিজের ১৪তম বই । জেমস রোলিন্সের সিগমা সিরিজের সব বই গুলোই ইতিহাসের সাথে বর্তমান এবং সায়েন্স জড়িত থাকে । এই বইটাও তার ব্যতিক্রম নয় । 

কাহিনী শুরু হয় মারা নামের অসামান্য মেধাবী এক মেয়ের বানানো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম কে কেন্দ্র করে । এমন একটা প্রোগ্রাম যে কিনা নিজের ভেতরে সকল তথ্য নিয়ে নিজে নিজেই সব সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবে । মামার মা মারা গেছে আগেই। মারা তার গ্রাম থেকে তুলে নিয়েছেন শার্লট কারসন নামের এক বিশেষ নারী সংঙ্ঘের প্রধান । তার সাহায্য এবং পৃষ্ঠপোষকতায় মারা নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় । কেবল পৃষ্ঠপোষকই নয়, মারার সাথে যেন কারসন পরিবারের এক আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠলো । তার মেয়ের সাথে মারার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

কিন্তু যেদিন প্রোগ্রামটা চালু করা হল ঠিক সেই দিনই মারাদের উপর হামলা করা হল । তবে কপাল ভাল যে মূল প্রাঙ্গনে মারা উপস্থিত ছিল না । সে লাইব্রেরীর ভেরতে প্রোগাম চালুর কাজে নিয়েছিল । অন্য দিকে নারী সংঙ্ঘের সবাই ছিল এক স্থানে । সেখানেই মারা পড়লো শার্লট কারসন সহ দলের আরও শীর্ষ কর্মীরা । ততক্ষণে প্রোগ্রাম কিছু অংশ চালু হয়েছে । কিন্তু মারা প্রোগ্রামটাকে রক্ষা করার জন্য সেটাকে নিয়ে পালালো । সুইট অফ করে দেওয়ার আগেই প্রোগ্রামটা মনিটরের একটা অদ্ভুত চিহ্ন ফুটিয়ে তুলেছিল । সিগমা ! 

এদিকে সিগমার কমান্ডার গ্রে আর মঙ্ক ছুটি কাটাচ্ছে পরিবার সহ । গ্রের প্রেমিকা সাবেক আততায়ী সেইচান সন্তান-সম্ভবা । ক্রিসমাসের এক সন্ধ্যার গ্রে আর মঙ্ক বাইরে বের হয় । বাসায় ফিরে এসে দেখে তাদের বাসায় হামলা হয়েছে । মঙ্কের স্ত্রী ক্যাট প্রবল ভাবে আহত তবে প্রাণ রয়েছে অন্য দিকে সেইচান সহ মঙ্কের দুই মেয়ে গায়েব । তাদের কেউ তুলে নিয়ে গেছে । 

সিগমার হেড পেইণ্টার ক্রো গ্রেকে পাঠালো মারার খোজে । মেয়েটার সাহায্য দরকার । কোন ভাবেই তার বানানো এআই প্রোগ্রাম খারাপ হাতে যেন না পৌছায় । এবং এই মারার প্রোগ্রামের সাথেই হয়তো সেইচানের গায়েব হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে । লিসবনে পৌছে তারা মারার দেখা পেল ঠিকই তবে ততক্ষনে প্রোগ্রাম তার হাত ছাড়া হয়ে গেছে । এই প্রোগ্রাম ছিনিয়ে নিয়ে গেছে শত্রুপক্ষ । সেখানে চার্চের এক গুপ্ত সংঙ্ঘের সাথে পরিচয় হয় গ্রেদের । তাদের কাছ থেকেই জানতে পারে আসলে কারা ছিল হত্যা কান্ডের পেছনে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী? সংঙ্ঘের নাম ক্রসিবল । এট ষোলশ সালে প্রচুর নারীকে ডাইনি হওয়ার অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো । এই দলটাই ছিল সেই সব হত্যা কাণ্ডের পেছনে । সেটা এখনও টিকে আছে এবং গোপনে তাদের কাজ করে যাচ্ছে । তাদের এই প্রোগ্রামটা দিয়ে গভীর এক ষড়যন্ত্র রয়েছে যার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ফ্রান্স । সেখানেই হামলা চালায় ওরা প্রোগ্রামটা দিয়ে । গ্রেদের দল ছুটি যায় সেখানে ।

শেষ পর্যন্ত কি গ্রে এবং তার দল হামলা ঠেকাতে পারে প্যারিসে ? ক্রসিবলের হামলা কি কেবল প্যারিসেই থেমে থাকে নাকি তাদের আরও ভয়ংকর কোন পরিকল্পনা রয়েছে ? অন্য দিকে সেইচান আর মঙ্কের দুই মেয়েকে কারা তুলে গিয়েছিলে এবং কেন ? সময় মত কি তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে ?

এই হচ্ছে মোটামুটি ক্রসিবলের কাহিনী । সত্যি বলতে কি কাহিনী কেমন যেন একটা খাপছাড়া ভাব খেয়াল করেছি । অগের গল্প গুলোতে যেমন অতীতের সাথে বর্তমানের একটা সেতু বন্ধন থাকে, এই গল্পে আলগা মনে হয়েছে । মনে হয়েছে যেন এক প্রকার জোর করে অতীতের এই ঘটনাকে বর্তমানের সাথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে । তবে সেটা ঠিকঠাক বসে নি । এছাড়া কাহিনীর বর্ণনা সেই গতি সেই আগের মতই, গল্পে আসলে কোন নতুনত্ব খুজে পাই নি কেন জানি । পড়ার সময়ে মনে হয়েছে আরে এমনই তো হবে । এমনই হওয়ার কথা ! সিগমা সিরিজ পড়ার যে প্রবল আগ্রহ ছিল সেটা এখন আর অনুভব করছি না । এটাও একটা কারণ হতে পারে বইটা পানসে লাগার পেছনে ।


বইটা অনুবাদ করেছেন আদনান আহমেদ রিজন । তার অনুবাদের হাত ভাল । তবে বই ফন্ট সাজানোতে একটু সমস্যা হয়েছে । পড়তে গিয়ে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করা গেছে একটা শব্দের সাথে আরেকটা শব্দ জোড়া লেগে গেছে । এটা একটা দৃষ্টিকটু ব্যাপার । 


ক্রসিবল (সিগমা সিরিজ ১৪)

জেমস রোলিন্স

অনুবাদ আদনান আহমেদ রিজন

আদী প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত 

মুদ্রিত মূল্য ৫২০ টাকা 

মোট পাতার সংখ্যা ৩৬৮