পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ আজাজিল

আমার ভালোবাসার গল্প পড়তে সব বেশি ভাল লাগে । গল্পে নায়ক নায়িকার জন্য কিংবা নায়িকা নায়কের জন্য কতখানি ত্যাগ স্বীকার করবে, নিজের ভালবাসা প্রকাশ করবে সেটা পড়তে ভাল লাগে । বাস্তবে যদিও এসব হয় না, তবুও পড়তে ভাল লাগে আর কল্পনা করতে ভাল লাগে যে এমন ঘটনা আমার সাথেও কোন দিন ঘটবে । ফরহাদ চৌধুরী শিহাবের সব বই গুলোর জনরা একই সাথে অনেক । প্যারানরমাল, মিস্ট্রি, সাইফাই, ফ্যান্টাসী হলেও আমার এই সবের মাঝে সব থেকে বেশি যেটা

আকর্ষণ করে সেটা হচ্ছে প্রেম । ভালোবাসা । তার গল্পের চরিত্রগুলো যেভাবে ভালোবাসে তার কোন তুলনা হয় না । সব কিছু ঝাপিয়ে আমার চোখে মনে কেবল তাদের ভালোবাসাটাই দাগ কেটে রাখে ।

আজাজিলের গল্পও ফ্যান্টাসী সুপারল্যাচারাল টাইপ হলেও এখানে আমার কাছে এটা একটা ভালোবাসার গল্প । গল্প যখন শেষ করলাম তখন কেবলই মনে হয়েছে আহা যদি এই ভালবাসা কেউ আমার জন্য অনুভব করতো ! গল্পের কাহিনী নায়ক রিহান সরোয়ার এবং সানিয়াকে নিয়ে । রিহানের মাঝে অদ্ভুত এক শক্তি বিদ্যমান । এমন এক শক্তি যা হয়তো কেউ কল্পনা করতে পারবে না । 

গল্প শুরু হয় রিহান আর সানিয়ার ভিডিও কলের মাধ্যমে । অনেক দিন রিহানের সাথে সানিয়ার যোগাযোগ নেই। রিয়ান পেশায় একজন ভাস্কর । মির্জাপুরের এক বিশাল বাড়িতে সে একা থাকে । নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে । খুব একটা মানুষের সাথে সে মেশে না । তার নামে বন্ধু এবং পরিচিত মহলে নানা রকম কথা প্রচলিত । সানিয়া বেশ কিছুদিন স্বামীর সাথে বিদেশ ছিল । এখন দেশে ফিরে এসেছে । রিহানের সাথে কয়েকদিনের চেষ্টার পরে যোগাযোগ হয়েছে। এইটা গল্পের প্রথম চ্যাপ্টার । এরপর কাহিনী চলে গেছে ফ্ল্যাশ ব্যাকে । ছোট বেলাতে কিভাবে রিহান আর সানিয়ার পরিচয় হল সেইটা থেকে শুরু ।

ছোট বেলা থেকে রিয়ান মূর্তি বানাতে পছন্দ করে ছবি আঁকতে ভালোবাসে । পাহাড়ে ঘেরা একটা এলাকাতে বাবা মা আর ছোট বোনকে নিয়ে তার বসবাস । একদিন ঠিক তাদের পাশেই বাড়ি কিনে সানিয়া এবং তার বাবা মা থাকতে এল । সানিয়া এবং তার কুকুরটি নানা ভাবে রিহানকে জ্বালাতন করতো । রিহানের বানানো মূর্তি গুলো ভেঙ্গে দিত নয়তো রিহানের পেছনে কুকুরটি লেলিয়ে দিয়ে রিহানকে বিলের ভেতরে ফেলে দিতো । চঞ্চল সানিয়া এইভাবেই রিহানকে জ্বালাতন করতো । কিন্তু একদিন সানিয়ার সেই কুকুরটি মারা গেল । মেয়েটি যেন একদম নির্জীব হয়ে গেল । এই কুকুরকেই রিহান ফিরিয়ে নিয়ে এল । 

এরপর সময়ে সানিয়া তার বন্ধু হয়ে গেল । তারপর থেকে সব সময় রিহান সব সময়ই সানিয়াকে আগলে রেখেছে । সব সময়ে চেয়েছে সব থেকে ভাল কিছুই যেন সানিয়ার সাথে ঘটুক । এক সময় সানিয়াদের স্কুলে এক জমজ ভাইবোন এসে হাজির হ্ল । ফারদিন আর নাতাশা । ফারদিনের সাথে সানিয়ার দারুন ভাব হয়ে গেল । এই দৃশ্য রিহানকে পীড়া দিলেও সে নিজে চুপ করেই রইলো । নিজের ভালো লাগা সানিয়াকে জানালো না । কয়েকটা ঘটনা পরে ফারদিন আর নাতাশাকে নতুন স্কুলে চলে যেতে হয়েছিল । তারপর সানিয়া আবারও কোন ঝামেলাতে পড়লো এবং সেই বারও রিহানই ছিল তার পাশে । তারপর এক সময়ে সানিয়ার বিয়ে হয়ে যায় নিয়াজের সাথে । বিয়ে করে সে বিদেশ পাড়ি জমায় !

গল্পের দ্বিতীয় ভাগে রিহানের সাথে সানিয়ার আবারও যোগাযোগ হয় । কিন্তু দুর থেকে সানিয়াকে যতখানি সুখী মনে হয় ভেতরের কাহিনী অন্য । সানিয়ার উপকার করতে গিয়েই বড় বিপদে ফেলে দেয় রিহান । এবং নিজেও সেই বিপদে আটকে যায় । নিজের শক্তি প্রয়োগ করে সে সানিয়াকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করে কিন্তু তাতে নিজের বড় বিপদ ডেকে আনে । গল্পের শেষের দিকে নিজের আসল শক্তি সম্পর্কে সে ধারণা পায় যে শক্তির কথা সে নিজেও জানতো না । এতোদিন কেবল নিজের শক্তি এক দিক সম্পর্ক অবগত ছিল । বিপরীত দিক সে সেটাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে সেটা সে জানতে পারে একেবারে শেষের দিকে । 

গল্পের শেষটা কি হয়েছিলো সেটা বলে দিলে হয়তো গল্প পড়ার মজা নষ্ট হয়ে যাবে । তাই এটুকু নাই বা বললাম ।

আগেই বলেছি ফরহাদ চৌধুরীর শিহাবের গল্পের ভেতরে আমি আলাদা ভালোবাসার গন্ধ খুজে পাই যা অন্য কারো গল্পে থাকে না । আজাজিলও তার ব্যতিক্রম নয় । বছরের প্রথম বই হিসাবে তাই আজাজিলই বেঁছে নিয়েছিলাম যতে প্রথম বইটা আমাকে হতাশ না করে । হতাশ করে নি । তার এটা শ্রেষ্ঠ লেখা আমি বলবো না কিংবা মাস্টারপিচও না, তবে বই শেষ করে একটা শান্তির ঢেকুর তুলেছি । 

কিছুটা খারাপ দিক বলতে চাই । গল্পটা পড়তে গিয়ে লেখকের প্রথম বইয়ের গল্পের কথা আমার মনে পড়ছিলো বারবার । বন্ধুকে ভালোবাসা, বন্ধুর অন্য কোথায়ও বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং আবিউসিভ স্বামী । এই এলিমেন্ট গুলো এই গল্পেও ছিল । এছাড়া গল্পের শেষ অধ্যায়টা যেন একটু তাড়াহুড়া করে শেষ হয়ে গেল । আরও একটু বিস্তারিত ভাবে হয়তো বর্ণনা করা যেত । আর হ্যা আরেকটা ব্যাপার । অনেকে নাম দেখে হয়তো ধরেই নিতে পারে যে এর ভেতরে ধর্মীয় কোন ব্যাপার রয়েছে কিন্তু সেরকম কিছুই না । 

বইয়ের কাগজটা বেশ চমৎকার । কাগজের মান ভাল । বাঁধাইটা মজবুত তবে আরও একটু ভাল করা যেত । 

বইয়ের নামঃ আজাজিল

লেখকঃ ফরহাদ চৌধুরী শিহাব 

আদী প্রকাশ থেকে প্রকাশিত । মোট পাতার সংখ্যা ১৫২, মুদ্রিত মূল্যঃ ২৭০ টাকা