পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ টেল নো ওয়ান

যে কোন মুভির খোজ পেলে আমি মুভি দেখার আগে খুজে দেখার চেষ্টা করি যে মুভিটা কোন বই থেকে এডাপ্ট করা কি না । এডাপ্ট করা হলে মুভি দেখার আগে বইটা পড়ার চেষ্টা করি । এবং প্রতিবারই দেখা যায় একটা মুভি থেকে বই অনেক গুণ ভাল ভাবে কাহিনীটাকে ফুটিয়ে তুলেছে।  এই মুভিটার বেলাতেও এর ব্যতীক্রম নয় ! বইটির নাম টেল নো ওয়ান । লেখক হারলান কোবেন । বইটি প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে । বই থেকে ২০০৬ সালে একই টাইটেল নেম দিয়ে ফ্রাঞ্চ ভাষার একটা মুভি তৈরি হয় !
বইয়ের কাহিনী আগে বর্ণনা করা যাক । 
ডাক্তার ডেভিড বেক এবং এলিজাবেথ ছোট বেলা থেকেই এক সাথে রয়েছে । তাদের বাবারাও বন্ধু মানুষ ছিল । ডেভিডের দাদার কেনা সম্পত্তি লেক চারমেইনে তারা পরিবারসহ আসতো সময় কাটাতে । এক সাথে লেক সাতার কাটতো । তারপর একদিন বেক আর এলিজাবেথ এই লেকের পাশে এক গাছে নিজেদের নাম লিখে এবং প্রথম চুমু খায় । তারপর থেকেই প্রতিবছর একই সময় তারা এই লেক আসে দুজন এনাভার্সারি পালন করতে । 
গল্পের শুরু এমন এক এনিভার্সারির সময় দিয়ে । বেক আর এলিজাবেথ আসে লেকের সাথে । দুজন নাম লেখা স্থানের নিচে একটা ডাক দেয় তারপর লেকে গিয়ে সাতার কাটে । এই সময়ে এলিজাবেথ লেকের উপরে উঠলে বেক কিছু সময় পরে এলিজাবেথের চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় । এলিজাবেথকে বাঁচাতে গেলে কেউ বেকের মাথায় বেজ বল ব্যাট জাতীয় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে এবং তাকে পানিতে ফেলে দেয় । 
পরে এলিজাবেথের লাশ পাওয়া যায় । পুলিশ খুনিকেও বের করে ফেলে । ২১ জনকে খুন করা এক খুনি এলিজাবেথকে খুন করেছে এটাই বের হয়ে আসে । খুনির সাজাও হয় ! 
তারপর আট বছর পার হয়ে গেছে । মুল কাহিনীর শুরু এখানেই । একদিন কাজের মধ্য ডা. বেকের মেইলে একটা মেইল আসে । মেইলটা সে মুছেই দিচ্ছিলো তখনই দেখতে পারে সেখানে সংক্ষিপ্তাকারে বেক আর এলিজাবেথের নামের দুই অক্ষর দেওয়া আছে এবং গুনে গুনে একুশটা দাগ দেওয়া আছে । ঠিকই গাছটার মত যেখানে তারা নিজেদের নাম লিখেছিল এবং প্রতিবছর সেখানে গিয়ে একটা দাগ দিয়ে আসছো । এই বছর সেখানে একুশটা দাগ দেওয়ার কথা ।
ইমেলের নিচে একটা হইপার লিংক দেওয়া থাকে কিন্তু সেটা কোন কাজের না । নিচে কিস টাইম । বেক বুঝতে পারে যে সেই সময়টার কথা বলা হচ্ছে যে সময় প্রথমবারের মত বেক আর এলিজাবেথ চুমু খেয়েছিলো । সেই সময়েই যখন বেক যখন হাইপার লিংকে ক্লিক করে তখন একটা সিসিটিভির ফুটেজের ভিডিও চালু হয় এবং সেই ভিডিও তে সে তার মৃত স্ত্রীকে দেখতে পায় । 
তারপর আরেকটা সংকেত দিয়ে মেসেজ পাঠায় তার মৃট স্ত্রী । তাকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করতে বলা হয় । তার সাথে এও বলা হয় যে কাউকে কিছু না বলতে । কারন ওরা দেখছে ।
বেক বুঝতে পারে না এই ওরা কারা ? কারা দেখছে ! 
এদিকে লেক চাইমেইনের সম্পত্তির পাশে দুজন গুন্ডার মৃত দেহ পাওয়া যায় । তাদের পাশের একটা ভারী বেজবল ব্যাট পায় পুলিশ এবং এই ব্যাটে লেগেছিল বেকের রক্ত । তাদের সাথে পাওয়া যায় একটা লকারের চাবি । লকারের ভেতরে পাওয়া যায় একটা পিস্তল এবং এলিজাবেথের কিছু ছবি । ছবিতে দেখা যায় এলিজাবেথের শরীরে আঘাতের চিহ্ন । সেটা থেকে এফবিআই সন্দেহ করে যে এলিজাবেথকে তার স্বামী বেথই খুন করেছে এবং খুন করে সেই সিরিয়াল কিলারের নাম দিয়েছে । এফবিআই বেকের পেছনে লাগে । একই ভাবে অন্য কেউও বেকের পেছনে লেগে । তাকে অনুসরন করে । 
এরই মাঝে বেক ফেসে যায় আরও এক খুনের ঝামেলায় । এলিজাবেথের পুরাতন এক ফটোগ্রাফার বন্ধুর সাথে বেক দেখা করে এলিজাবেথের সেই ছবির কথা জিজ্ঞেস করে । এবং সেই রাতেই সে খুন হয় ! খুনের পিস্তল আর গ্লোভ পাওয়া যায় বেকের ডাস্টবিনে ! তার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় । 
আর্ত্মসমর্পন করতে বলা হয় তাকে কিন্তু এলিজাবেথ তাকে বিকেল ৫টার সময় দেখা করতে বলা হয়েছে । পুলিশের কাছে ধরা দিলে তো এলিজাবেথের সাথে দেখা হবে না । এখন সে কি করবে ?
এই ভাবে কাহিনী অতি দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে । বেক বুঝতে পারে না যে তার স্ত্রী আদৌও বেঁচে আছে কি না ! নাকি এফবিআই তার সাথে কোন খেলা করছে । এলিজাবেথ যদি দেখাই দিবে তাহলে এতো লুকোচুরি করছে কেন ? কে তাদের দেখছে ? কে তার উপর নজর রাখছে ! এর সাথে জড়িয়ে আছে খুব আর শক্তিশালী কেউ ! কিন্তু এলিজাবেথের আর তার পেছনে কেন লেগেছে তারা ? কি করেছে সে ?
এই সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় শেষ । তবে একেবারে শেষে পরপর দুটো টুইস্ট এসে হাজির হয় ! প্রথম টুইস্টটা আমি পড়তে পড়তেই বুঝে গিয়েছিলাম যদিও কিন্তু একেবারে শেষ টুইস্টটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না ! 
মুভির কাহিনীও মোটামুটি একই রকম ! তবে বইতে যেমন সব কিছু ডিটেইল আকারে দেওয়া মুভিতে সেটা নেই । মুভিতে অনেক কিছু বাদ রয়েছে এবং সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে বইয়ের শেষ টুইস্টটা মুভিতে নেই ।   
অনেক দিন পরে আমি এরকম টান টান উত্তেজনার বই পড়ালাম । বলা চলে একেবারে এক টানে বইটা পড়ে শেষ করেছি । অনেক গল্প থাকে যেখানে বাড়তি অনেক কথা বার্তা লেখা থাকে । এই বইটাতে তেমন কিছু নেই । কিছুই না । প্রতিটা পৃষ্ঠা এখানে দরকারী । একটা পাতাও এড়িয়ে যাওয়ার মত নেই । 
টেল নো ওয়ান মুভি দেখার আগে অবশ্যই বলবো যেন বইটা আগে পড়বেন । ইংরেজি বইটার পিডিএফ পাওয়া যাবে অনলাইনে । বাতিঘর থেকে বইটার অনুবাদও বের হয়েছে ২০১৭ সালে । এটার পিডিএফ পাওয়া যাবে অনলাইনে । তবে বইটা রকমারি থেকে কিনতে পারেন ।  এছাড়া যারা বই পড়তে পছন্দ করেন না তারা মুভিটা দেখতে পারেন । যদিও ফ্রেঞ্চ ভাষায় তবে সাবটাইটেল দেওয়া পাওয়া যাবে সাথেই । টরেন্ট থেকেই মুভিটা নামিয়ে নিতে পারেন ।