শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজঃ চারটি বই

প্রথমটার নাম "হেতেমগড়ের গুপ্তধন" !
মাধব বাবু হচ্ছেন একসমযকার হেতেমগড়ের রাজকুমার । হেতেমগড় এক সময়ে বিশাল জমিদারি থাকলেও নদীর তলে হারিয়ে গিয়েছে । মাধব বাবু এখন তার বোনের বাসায় থাকে । খুবই রাগ তার । বিয়ে রাতে তার শালীদের ঠোট্টার কারণে সে সেই যে শশুরবাড়ি ত্যাগ করেছেন আর ফিরে যান নি । এক সকালে সে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায় । এবং তারপর থেকেই নানান কন্ডকারখানা ঘটতে থাকে একেরপর এক । এক সময়ে মাধব বাবু আবারও গিয়ে হাজির হয় সেই হেতেমগড়ের জঙ্গলে । সেখানে গিয়ে আবারও তাদের সেই জমিদার বাড়ি আবিস্কার করেন । বইটা পড়তে পড়তে কতবার যে আমি হেসেছি সেটা ঠিক নেই । ছোটদের বই হলেও আমার বইখানা
খুবই চমৎকার লেগেছে । ছোটদের বই অবশ্য । তবে আপনার ছেলে মেয়েদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোমার জন্য এই রকম মজার বইয়ের কোন বিকল্প নেই ।

পরের বইটার নাম হচ্ছে "গোলমেলে লোক"
বাজার করতে গিয়ে গুরুপদের হঠাৎ পকেট কাটা যায় । গুরুপদ খুজতে থাকে সেই পকেটমারকে । তার কাছ থেকে সে এই পকেট কাটা বিদ্যা শিখবে । সেখানেই পরিচয় হয় বটু সরদারের সাথে । বটু সরদারকে তখন কিছু মানুষ খুজছে মেরে ফেলার জন্য । গুরুপদ তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় । গুরুপদদের বাসাতে অনেক পুরানো এক বাইবেল রয়েছে হিব্রুভাষায় লেখা । শোনা যায় যে তার ভেতরে নাকি গুপ্তধনের নক্সা আছে । সেটা খুজতে বটু সরদার আর গুরুপদ হাজির হয় নির্দিষ্ট স্থানে । কিন্তু তখনই তাদের উপর হামলা হয় । তারা দুজনেই পালিয়ে যায় নক্সা আর বাইবেল ফেলে । পরে অবশ্য আবারও বাইবেল আর নক্সা ফেরৎ নিয়ে আসে বটু সরদার । এক সময়ে বটু সরদারের গুরুপদের বাসায় যাওয়ার আসল কারণ বের হয়ে আসে । সব কিছু মিলিয়ে চমৎকার একটি বই গোলমেলে লোক !

তৃতীয় বইটার নাম "গোঁসাইবাগানের ভূত
বুরুন বার্ষিক পরীকষায অঙকে পেল ১৩ । বাবা তার উপর বেজার রাগ করলো । তার সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিল । বরুন রাগ করে চলে গেল গোঁসাই ডাকাতের বাগানে । সেখানে গিয়ে তার দেখা হল নিধিরাম ভুতের সাথে । নিধিরাম ভুত তাকে যতই ভয় দেখানোর চেষ্টা করে কি না বরুন মোটেই ভয় পায় না । নিধিরামের তো অবস্থা খারাপ । ভুত সমাজে তার আর মান সম্মান থাকে না । তাই সে বুরুনের সাথে চুক্তি করলো । বরুন যদি নিধিরামকে একটু ভয় পায় তাহলে সে বরুনের অনেক কাজে সভায্য করবে । নিধিরামের সাহায্য বরুন অঙ্ক ইংরেজি আর খেলাতে একেবারে চ্যাম্পিয়ান হয়ে উঠলো । এদি হাবু সর্দার জেল থেকে বের হয়েছে । বরুনের দাদুর সাক্ষিতে সে জেলে গিয়েছিলো । এখন জেল থেকে বের হয়ে সে প্রতিশোধ নিবে ! বুরুনকে আর জজ সাহেবের নাতি ভুতুমকে হাবু গোঁসাইবাগানের পাতাল ঘরে আটকে রাখে মন্ত্র পড়ে । সেখান থেকে বুরুনকে উদ্ধার করতে যায় তার মাস্টার মশাই। শেষ পর্যন্ত কিভাবে বুরুনকে উদ্ধার করে সেটাও এক বিরাট ইতিহাস ।

চতুর্থ বইয়ের নাম "পটাশগড়ের জঙ্গলে"
ভজুরাম মেমোরিয়াল স্কুলের সাথে কালীতলা স্কুলের ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে । নামকরা দুই টিমের খেলা দেখতে মাঠে কাতারে কাতারে লোক জড়ো হয়েছে । এই ফুটবল টিমে ভুতুর জাযগা হয় নি ভুতু । ভজুরাম স্কুলের ক্লাস এইটের ছাত্র ভুতু । হেড স্যারের টেবিলের নিচে জ্যান্ত কাকড়া ছেড়ে দেওয়ার অপরাধে তার টিমে জায়গা হয় নি । তাই সে কলু রাগিয়ে খেলার মাঠে ছেড়ে দেয় । কলু হচ্ছে বিশাল শিবের ষাড়। কলু যখন একে ওকে গুতো দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেস সাহেবের প্যান্ডেলের দিকে আসছিলো তখন ভজুরাম মেমোরিয়াল স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক জয়পতাকা সামনে এসে দাড়ায় । দারুন এক বুট ফাইটের খেলা দেয়ায় সে । কিন্তু এক পর্যায়ে সে কলুর পিঠে চড়ে বসে । কলু তাকে নিয়ে পটাশগড়ের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে ।পটাশগড় ভয়ানক জঙ্গল । সেখানে যে একবার যায় সে আর ফিরে আসে না । এক অদ্ভুদ কন্ঠস্বর তাকে তাকে নিয়ে যায় এক রহস্যময় প্রাসাদে । সেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসে না ।
জয়পতাকাকে ফেরৎ নিয়ে আসতে তার দাদু জয়ধ্বনি, দাদুর বন্ধু শ্যাম লাহিড়ী আর পৌরপিতা ব্যোমকেশ বাবু । তারাও এক সময় সেই রহস্যময় প্রাসাদে গিয়ে আটকা পরে । এদিকে সবাই ভুতুকে দোষ দিতে থাকে তার অঙ্কের শিক্ষকের হারিয়ে যাওয়ার জন্য । ভুতু নিজেও পটাশগড়ে গিয়ে হাজির হয় । অদ্ভুত এক কন্ঠের সাথে তার পরিচয় হয় ! নিজের বুদ্ধিতেই সে একাই গিয়ে হাজির হয় সেই প্রাসাদে ! এবং সবাইকে উদ্ধার করে !
এইবইটা পড়ে সব থেকে বেশি মজা পেয়েছি আমি । বইটা একটু অন্য ধাচের । ভুতের বই ঠিক না । বইটা সায়েন্স ফিকশন । ছোটদের পড়ার উপযোগী একটা বই । 

অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বই গুলো একটানে পড়ে ফেলতে পারেন । সময় ভাল কাটবে আশা করি !