পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ মেঘেদের দিন

বইয়ের নাম "মেঘেদের দিন" । লেখক সাদাত হোসাইন ।

বইয়ের কাহিনী আগে শোনা যাক । গল্পের শুরুটা হয় বুড়িকে দিয়ে । বুড়ি হচ্ছে হানিফ করাতির মেয়ে । এগার বছরের মত বয়স । বৃষ্টির দিনে তার হাসের বাচ্চা খুজতে বের হয় । এমন সময় তার দেখা হর হারু ব্যাপারীর সাথে । হারু ব্যাপারী তার বাবার সাথে কাজ করে । হারু ব্যাপারী তাকে নৌকাতে তুলে নেয় হাঁসের বাচ্চা খুজতে সাহায্য করবে বলে । কিন্তু নৌকাতে তুলে নিয়েই সে বুড়ির শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিতে শুরু করে । বুড়ির তখন পালানোর পথ খুজতে থাকে কিন্তু আশে পাশে কাউকেই দেখতে পায় না ।

যখন বুঝতে পারে যে তার আর রক্ষা নেই তখনই খালে আরেকটা নৌকা ঢুকে পড়ে । হারু ব্যাপারি সেই নৌকা দেখে বুড়িকে ছেড়ে দেয় আর বুড়ি সুযোগ বুঝে তখন হারুর নৌকা থেকে লাফ দেয় । সাঁতরে যেতে থাকে নতুন নৌকার দিকে ।

নৌকাতে চড়ে মারুফ আর তানিয়া মারুফের নানা বাড়ি যাচ্ছিলো । মারুফ ২৫ বছর পরে তার নানা বাড়ি আসতেছে । হঠাৎ ছুটি পাওয়ার কারণে সে বউকে নিয়ে মামাদের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছে । তানিয়ার খুব বর্ষাকাল পছন্দ । তানিয়াকে নিয়ে বৃষ্টি দেখবে । এই সময়ে নৌকাতে করে চলে আসার কারনে বুড়ি মেয়েটা হারুর হাত থেকে রক্ষা পায় !

মামা বাড়িতে পৌছে মারুফ যেমনটা সমাদর পাবে আশে করেছিল তেমনটা পায় না । তার দুই মামা আলাল আর দুলাল কেমন শীতল আচরন করে । এমন কি মারুফরা কোন ঘরে থাকবে সেটা পর্যন্ত ঠিক করে দেয় না । যাই হোক পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায় ।

কাহিনীর আরেক টা চরিত্র হচ্ছে বুড়ির মা শাফিয়া । তার আবার বাচ্চা হবে । এখন তার মেজাজ একেবারে চিড়চিড়ে থাকে । বুড়ি হারু ব্যাপারীর ব্যাপারটা তার মায়ে বলে দেয় ভয়ে ভয়ে । তার মা অস হায়ের মত কিছুই করতে পারে না । কারন হারু হচ্ছে তার স্বামী হানিফের বন্ধু মানুষ । দুইজনেই একই সাথে আলাল খাঁ অর্থ্যাৎ মারুফের মামার করাত মিল আর চালের আড়তে কাজ করে । দুজনে অনেক কুকাজও এক সাথে করে । হানিফ করাতি হারুর ব্যাপারে কিছু শুনতে চায় না । হারুর চোখ আগে শাফিয়ার দিকেও ছিল ।

মারুফের মা এদিকে ছেলের হাত দিয়ে তার আলাল আর দুলাল খাঁয়ের কাছে একটা চিঠি আর জমির দলিল পাঠায় । আলাল দুলাল হচ্ছে মারুফের সৎ মামা । মারুফের নানার দ্বিতীয় বিয়ে মারুফের মা কোন দিন মেনে নিতে পারে নি । তাই মারুফের মাকে খুশি করতে মারুফের নানা অনেক চেষ্টা করেছে । শেষে মরার আগে সম্পত্তির অনেকটা অংশ লিখে দিয়েছে মারুফের মায়ের নামে । সেই কথাই মারুফের মা লিখে পাঠায় । মারুফের একটা ছোট ভাই আছে, প্রতিবন্ধী । মারুফের বাবাও মারা গেছে । তাই এখন মারুফের মা সম্পত্তির নিতে চায় ।

মুখে মুখে হাসিখুশি কথা বললেও মারুমের মামা মারুফ আর তানিয়াকে মেরে ফেলার বুদ্ধি আটে । দুজনের কেউই সাঁতার জানে না । তাই আলাল খাঁ হানিফ আর হারুকে ঠিক করে যেন যাওয়ার দিন মারুফদের নৌকা যেন ডুবিয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু হারুর মাথায় থাকে অন্য বুদ্ধি । সে ঠিক করে ডুবিয়ে দেওয়ার আগে সে তানিয়াকে ভোগ করবে । সেই বুদ্ধি মাফিকই মারুফ আর তানিয়াকে ধরে আবারও শ'মিলে নিয়ে আসে ।

কিন্তু ঝামেলা শুরু হয় অন্য দিক দিয়ে । খবর আসে যে শাফিয়ার অবস্থা বেশ খারাপ । হানিফ বউয়ের কাছে ছুটে যায় । শাফিয়া মারা যায় বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে । মরার আগে সে হানিফকে বলে যায় হারু ব্যাপারীর কথা । গল্পের শুরুতে হারু ব্যাপারী বুড়ির শরীরে হাত দিয়েছিল সেই ঘটনা । হানিফ আবার ফিরে আসে এবং হারুকে সে রামদা দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে ।

মারুফ আর তানিয়াকে উদ্ধার করা হয় । তার দুই মামাকে ধরা হয় । গ্রামের অনেকে আলাল দুলাল খাঁয়ের নামে নানান অভিযোগ দিতে শুরু করে । এমন কি মারুফের নানীও বলে যে আলাল দুলাল নাকি তার বাবাকে মেরে ফেলেছে ।

সব ঝামেলা মিটাতে এক সময় মারুফের মা গ্রামে আসে । বুড়ি আর তার ছোটবোনকে নিয়ে মারুফ আর তানিয়া সহ সবাই আবার ঢাকা ফিরে যায় । হ্যাপি এন্ডিং !

যে কোন বই শুরুতেই যখন কিছুটা পড়া শুরু হয় তখন পাঠকের মনে সামনের সম্ভব্য ঘটনার একটা ছক মাথায় চলে আসে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাঠকের সেই আগেই চিন্তা করা ছক মিলে যায় । তখন সেই গল্প যতই ভাল হোক পাঠকের কাছে মনমুগ্ধকর মনে হয় না। গল্প শুরুতেই যখন মারুফ গ্রামে আসে তখনই আমার মাথায় একটা এন্ডিং এসেছিলো যে নিশ্চয়ই এখন জমি জমার কথা উঠবে এবং মারুমের মামারা তাকে হত্যা করতে চাইবে । এবং কোন ক্রমে সে বেঁচে যাবে। চিরায়িত গল্পের প্লট ! গতদিনের পড়া বইটার মতই সহজ সরল আর ভেজালহীন এবং উত্তেজনা বিহীন কাহিনী ! এমন অনেক গল্প আছে যা পাঠককে চুম্বকের মত আকর্ষন করে । একটা চ্যাপ্টার পড়ার পরেই সামনের চ্যাপ্টারে কি হবে সেটার জানার জন্য মন আকু পাকু করে । এই বইতে এমন কিছুই ছিল না । পড়ার সময়ে আমার কেন জানি বারবাই মনে হয়েছে এর পরে আসলে কি হবে আমি জানি । আগের মত বলবো যারা লেখকের ফ্যান কেবল তাদের কাছেই মেঘের দিন ভাল লাগবে অনেক । কিন্তু যারা তার লেখার ব্যাপারে কোন আবেগ অনুভব করে না (বলছি না তার লেখা অপছন্দ করে, কেবল অন্য আট দশটা লেখকের মতই ভাবে, আমার মত মানুষ) তাদের কাছে এই গল্প ভাল লাগার কোন কারণ নেই ।