পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ মরণোত্তম

গতকালকের পড়া বইয়ের নাম "মরণোত্তম" । যার বাংলা করলে দাড়ায় মরণ ই উত্তম । লেখক সাদাত হোসাইন । গল্পের কাহিনী সরল এবং সোজা । গল্পের মূল চরিত্রের নাম আজিজ মাস্টার । তিনি দবির খাঁ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক । সেই স্কুলের অবস্থা করুণ । তিনি ঢাকাতে যাচ্ছেন স্কুলকে এমপিও ভুক্ত করার দাবীতে । সব কিছু ঠিক থাকার পরেও স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের কারনে তার স্কুল এমপিও ভুক্ত হচ্ছে না । তিনি ঢাকার প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করবেন ।


ঢাকাতে এসে তিনি প্রেস ক্লাবের সামনে এসে বসে পড়েন নিজের দাবী নিয়ে । মানুষজন মজা নিয়ে দেখে সব কিছু । কিন্তু কোন লাভ হয় না । এসব দাবী দাওয়া নিয়ে কেউ চিন্তিত হয় না । এই অনশনরত অবস্থায় তার পরিচয় হয় আধুনিক কবি আসাদের সাথে । আসাদ তাকে পরিস্থিতির সত্যতা বুঝিয়ে দেয় । তাকে বুঝিয়ে বলে যে এখানে এই ভাবে অনশন করে আসলে কোন লাভ হবে না । কেউ দেখবেও না । এমন কি সে যদি মরেও যায় তবুও কিছু যাবে আসবে না কারো ।
পরের দিন পুলিশের হাতে মাইর খেয়ে আজিজ মাস্টারের জ্বর চলে আসে । আসাদ তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় । সেখানে জ্বরের ঘোরে অনেক কিছু বলে । তখনই আজিজ মাস্টারের ঢাকা আসার আসল উদ্দেশ্য জানা যায় । কিছুদিন আগে তার স্কুলের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছিলো । তার নাম ছিল কোহিনুর । কোহিনুরকে চেয়ারম্যানের ছেলে এবং তার সাংপাঙ্গোরা খুবই জ্বালাতন করতো । পথের মাঝে তার ওড়না কেড়ে নিয়ে চুমুও খেয়েছিলো সে এবং সেটা মোবাইল ক্যামেরাতে ভিডিও করা হয়েছিলো । এই নালিশ দেওয়া হয়েছিলো চেয়ারম্যানের কাছে । নালিশটা নিয়ে গিয়েছিলো আজিজমাস্টার । প্রথমে চেয়ারম্যান খুব ভাল ব্যবহার করে এবং আজিজমাস্টারকে বলে যেন কোহিনুর নিজে এসে নালিশটা দিয়ে যায় । কোহিনুর তাই দিয়েছিলো । তার দুইদিন পরেই কোহিনুর আত্মহত্যা করে ।

আত্মহত্যা করার আগে কোহিনুর একটা বই দিয়ে যায় আজিজ মাস্টার কাছে । সেখানে একটা চিঠি লেখা থাকে । সেই চিঠি থেকেই জানা যায় যে চেয়ারমান তাকে ধর্ষন করেছিলো তার পরের দিন । আজিজ মাস্টার নিজেকে অপরাধী ভাবেন । মনে করেন যে তিনি যদি নালিশ নিয়ে না যেতেন তাহলে এতো কিছু হত না । তিনি চেষ্টাও করেন বিচার পাওয়ার কিন্তু চিরায়িত ভাবে পুলিশ থাকে চেয়ারম্যানের হাতে । কোন লাভ হয় না । তাই তিনি ঢাকা চলে আসেন । প্রথমে স্কুল এমপিও ভুক্তি করার দাবী নিয়ে দেখতে চান যে অবস্থা কেমন । কিন্তু হতাশ হন । বুঝতে পারেন যে এমন করে হবে না ।

আসাদ তাকে একবার বুদ্ধি দিয়েছিলো যে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে হয়তো লাভ হলেও হতে পারে । আসান সব কিছু শুনে বলে যে এখানে কোন বিচার বে না । আপনি বরং বাসায় ফেরৎ যান । তাকে গাড়িতে তুলে দেয় সে । কিন্তু আজিজ মাস্টার বাড়িতে যান না । সে আবারও ফিরে যান প্রেস ক্লাবে । গায়ে কেরোসিন ঢেলে হাতে মশাল নিয়ে অপেক্ষা করে । বুকে লেখা থাকে যে সে কোহিনুরের বাবা এবং সে কোহিনুর হত্যার বিচার চায় । খুনির নামও লেখা থাকে । ভিড় বাড়তে থাকে । টিভি চ্যানেল চলে আসে । মানুষ ক্যামেরা বের করে ছবি তোলে ভিডিও করে ।

একটা সময়ে আজিজ মাস্টার অসুস্থবোধ করেন এবং হাত থেকে মশাল পড়ে গিয়ে তার শরীরে আগুন ধরে যায় । সে মারা যায় ।

এরপর দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে । চেয়ারম্যান আর তার ছেলের শাস্তি হয় । সেই পুলিশকে গ্রেফতার কর হয় ।

এই হচ্ছে গল্পে । গল্পের কাভার স্টোরি আর প্রথম কিছু অংশ পড়েই পুরো কাহিনী বুঝতে পারার কথা । কোন ভেজাল নাই, নাই কোন উত্তেজনা । গল্প শেষ করে মনে হবে আরে এটাই তো হওয়া কথা । এমনই হবে ! আমার এই কাহিনী রিভিউ পড়লেন আর নতুন করে গল্প পড়ার কোন কারন দেখি না । তারপরেও যদি সাদাত হোসেনের লেখা পছন্দ করে থাকেন তাহলে পড়তে পারেন । যারা তার লেখা নিয়ে আবেগ অনুভব করেন না তারা এই গল্প পড়লে বিরক্ত হবেন । কেবল ফ্যানদেরই এই লেখা ভাল লাগবে !