পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ ম্যাডাম ও মহাশয়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের "ম্যাডাম ও মহাশয়" বইটা আমার কাছে একেবারেই অন্য ধাচের মনে হয়েছে । অন্য ধাচের বলতে কাহিনীর দিক দিয়ে নয় । এই ধরনের গল্প আমি আগেও পড়েছি তবে শীর্ষেন্দু ঠিক যেমন গল্প লেখেন সেটার হিসাব করলে এই বইটা তার অন্যন্য বই থেকে আলাদা, অন্তত আমার পড়ার বইয়ের হিসাব করে বললে ।


বইটার কাহিনী তিনটা পরিবার কিংবা ক্ষেত্রকে নিয়ে গড়ে উঠেছে । তিন দিক দিকে কাহিনীর বিস্তার লাভ করলেও এই তিন ক্ষেত্রের গল্প একে অন্যের সাথে জড়িত বেশ ভাল ভাবেই । গল্পের সুমিতের কাহিনী হল সে একজন সফল মানুষ । নিজের একটা ফ্ল্যাট দুটো গাড়ি গড়ে তুলতে পেরেছে সে । একটা গাড়ি সে নিজেই চাালায় । অন্য গাড়িটা মেয়ে আর বউ ব্যবহার করে । অন্য গাড়ির জন্য ড্রাইভার রাখার জন্য ইন্টারভিউ নিতে থাকে । ড্রাইভার যদিও বেশ দক্ষ তবে তার বয়স মাত্র ২২ । এই জন্যই সে খানিকটা চিন্তিত বোধ করে । এদিকে তার বাবা বছর খানেক আগেই বাসা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে । এটা নিয়েও সে খানিকটা চিন্তিত ।
অন্য ক্ষেত্রের গল্পটা হচ্ছে আয়ুষ্মানের । তার বাবা ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিল । সংসারে তার দুই বোন এবং এক ভাই । মাধ্যমিকে স্টার মার্ক পেয়ে আয়ুষ্মান পাশ করেছিলো কিন্তু বাবার শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার কারনে সে প্রথমে ট্যাক্সি চালায় এবং পরে মানুষের বাসায় ড্রাইভার হয়ে যায় ।
অন্য দিকে গল্পটা হচ্ছে নন্দিনী আর গোপাল সেন । গোপাল সেন আগে কলেজে পড়াতো এবং সেই সাথে সাথে ওকালতি করতো । এক সময় কলেজে পড়ানো ছেড়ে ওকালতি শুরু করে দেয় পুরোদমে । পুরো শহরে তার নাম ডাক পড়ে যায় । অল্প সময়েই সে বেশ ভাল সুনাম অর্জন করে ফেলে । নন্দিনীর সাথে তার প্রেমের বিয়ে ছিল । প্রথমে সম্পর্ক বেশ ভাল থাকলেও ধীরে ধীরে ওকালতির কাজের জন্য সে নন্দিনীকে সময় দিতে পারে না । তখন নন্দিনী গোপাল সেনের বন্ধুর দিকে হাত বাড়ায় । তাদের মাঝে একটা সম্পর্কে তৈরি হয় !

মুলত এই হল গল্পের প্লট । তিন দিকের কাহিনীর হলেও তিনটা দিকই একে অন্যের সাথে সম্পর্ক যুক্ত । গোলাপ সেন সুমিতের বউয়ের সম্পর্কের ভাই হয় । এবং সুমিত গোপাল সেনকে খুবই মান্য করে । এবং আয়ুষ্মানকে ড্রাইভার হিসাবে গোপাল সেনই সুমিতের বাসায় ঠিক করে দেয় ! গল্পের আরও একটা চরিত্র আছে । সেটা হচ্ছে এক গোয়েন্দা । সুমিত তার বাবাকে খোজ করতে এক গোয়েন্দা ঠিক করে । এই গোয়েন্দা অনেক খোজ খবর বের করে ফেলে । এইখানেই সুমিতের পেছনের জীবনের কিছু কথা উঠে আসে । রিপোর্ট দেওয়ার সময় গোয়েন্দা আরেকটা মজার ব্যাপার সুমিতকে বলে যে একজন লোক নাকি তাকে ঠিক করেছিলো তারই পেছনে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য । এবং নন্দিনীকে এই গোয়েন্দাই একজন গুন্ডার খোজ দেয় যাকে দিয়ে সে নিজের কাজটা করাতে পারবে । ঘটনা ক্রমে আবার আয়ুষ্মানও জড়িয়ে যায় । সব কিছু তার চোখের সামনে ঘটে .....

আমি আসলে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের যে ধরনের গল্প পড়ে অভ্যস্ত এই বইটা সেই রকম ছিল না । তবে গল্প পড়ে আমার খারাপ লাগেনি মোটেও । তার লেখা নিয়ে কোন কথা বলার উপায় নেই । কাহিনীর বিস্তার ভাল । প্লট বলবো না যে একেবারে এওয়ান তবে ভাল । আপনাদেরও খারাপ লাগবে না আশা করি । নেটই পাবেন এই বইয়ের ফ্রি পিডিএফ ! পড়ে ফেলতে পারেন !