পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ একটি জাপানি গল্প ও অন্যান্য এবং আরও তিনটি বই

আজকের পড়া বইয়ের নাম "একটি জাপানি গল্প ও অন্যান্য" । বইটির লেখিকার নাম সালেহা চৌধুরী । মেলা থেকে এই বইটা কিনেছিলাম বইয়ের উৎসর্গ পত্র দেখে । বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আয়শা ফয়েজকে । আমি আয়েশা ফয়েজ নামে কেবল একজনকেই চিনি । হুমায়ুন আহমেদের মা । এই জন্যই বইটা কেনা হয়েছিলো । বইটা থেকে খুব বেশি আশাও ছিল না আমার । তবে আমাকে মোটেই হতাশ করেনি বইয়া । ছোট গল্প সংকলের প্রতিটি গল্পই আমাকে মুগ্ধ করেছে । 

বইয়ের প্রথম গল্পের নাম ''একটি জাপানি গল্প'' । গল্পের কথক একটি কাজে গিয়ে হাজির হন জাপানে । সেখানেই একটা হোটেলে গিয়ে ওঠেন । কফি পান করতে গিয়ে এক সুন্দরী জাপানী মেয়ের সাথে পরিচয় হয় । মেয়েটি এক সময়ে এই হোটেলেই চাকরি করতো । ৭৭৭ নম্বর রুমে এক গেস্ট থেকে এটেন্ড করতে গিয়ে মেয়েটির জীবনটাই বদলে যায় । মূলত এটা নিয়েই গল্প। 
আরেকটা গল্পের নাম অশরীরি । গল্পের নায়ক কিছুতেই ভুতে বিশ্বাস করে না । কিন্তু গল্পের নায়কার আবার এসবে বিশ্বাস খুব । ঠিক হয় নায়ক এক শ্বশানে আর কবরস্থানে গিয়ে হাজির হবে এবং একটা গাছের ডাল নিয়ে আসবে । সেটাই সে করে কিন্তু মাঝ পথে ঘটে অন্য ঘটনা । গতানুগতির ভূতের গল্প হলেও এখানে একটু নতুনত্ব বিদ্যমান । নায়ক নিজে ভুত দেখা না কিন্তু সে ঠিকই অশরীরিতে বিশ্বাস স্থাপন করে । অবশ্য সেটা অন্য ভাবে ।
''আমি রুশি আরতি রেবা আর প্রভার গল্প'' গল্পে ফরিদপুরে গল্পের কথক ফিরে আসে আসে অনেক দিন পরে । তারপর একে একে রুশি আরতি বেবা প্রভাদের গল্প বলতে শুরু করে, তাদের সাথে দেখা করে অতীতে ঘটে যাওয়া কত ঘটনা বলে ।
দাদিয়ার সাদা কালো ছবি গল্পে গল্পের কথক তার দাদার বোনের বাসায় গিয়ে হাজির হয় । দাদার বোন তাই তাকে ডাকে দাদিয়া বলে । সেখানে দাদিয়ার জীবনের নানান কথা হয়, অনেক ছবি দেখে সে । এক সময় একটা ছবি নিয়ে যায় তার বান্ধবীর প্রদর্শনীর জন্য । সেই ছবিটা আবার প্রথম পুরস্কার পায় । 
এই বইয়ের আরেকটা মজার গল্প হচ্ছে ''স্টলটয়ের মৃত্যু এবং একজন ভাঁড়ের স্ত্রী'' এই গল্পে রাশিয়ার একজন বিখ্যাত লেখক তার শেষ সময়ে স্ত্রীর হাতে পালিয়ে যান শান্তিতে থাকার জন্য ।  সাথে থাকে তার এক মেয়ে এবং ডাক্তার কিন্তু পথে লেখকের শরীর খুব খারাপ হয়ে যায় । তাকে এক অখ্যাত স্টেশনে নেমে পড়তে হয় । স্টেশন মা্স্টার তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় একটা গরম বিছানাতে আরাম করে ঘুমাতে দেওয়ার জন্য । কিন্তু লেখকের জাদরেল স্ত্রী ঠিকই খবর পেয়ে যায় এবং সেখানে হাজির হয় । এরপর একে একে সাংবাদিক এবং নানান সাহিত্যানুরাগি এসে হাজির হয় সেখানে । 
আয়না নামের আরেকটা গল্প আছে । এক পুলিশের বউ সিথি । অখ্যাত এক স্থানে স্বামীর সাথে থাকে । রাতে তার ঘুম ভাঙ্গে বারবার । কলপাড়ে একটা নারীমূর্তি দেখে প্রায়ই । এক সময়ে তার বড় বোনের চিঠি আসে । তার মা মারা গেছে । এবং সেখানে একটা কঠিন সতয় লুকিয়ে থাকে । গল্পটা আমার বেশ মনে হয়েছে । এই গল্প পড়ে আরেকটা গল্প লেখার আইডিয়া মাথাতে এসেছে । এই আয়না গল্পটা যেখানে শেষ হয়েছে আমার গল্পটা শুরু হবে সেখান থেকে । যদি কোন দিন ইচ্ছে হয় লিখবো । 
বেড়াল সর্ব শেষ গল্প । এক মহিলার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায় অন্য এক মেয়ের হাত ধরে । তারপর থেকে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে তার বসবাস । মেয়ের বয়স এখন ত্রিশ । এগারো বছর ধরে মিশরি নামের এক বেড়াল আছে তার । বেড়ালকে সে দারুন আদর করে ।এক সময় মেয়ে নতুন ফ্ল্যাটে ওঠে । মহিলা আবার একা হয়ে যায় । মেয়ের ফ্ল্যাটে ইদুরের উৎপাতের জন্য মেয়ে মিছরিকে নিয়ে যেতে চায় । সেদিনই বেড়ালটা ছুটে পালিয়ে যায় । আর ফিরে আসে না । মহিলা আবারও নিসঙ্গ একা থাকে । 

অল্প কয়েকটা গল্পের বর্ণনা দিলাম । বইতে মোট গল্পের সংখ্যা ১৬টা । ১৬০ পেইজের পড়ে আপনার মনের এক চমৎকার আবেশের সৃষ্টি হবে এই টুকু নিশ্চিত করেই বলতে পারি । সিড়ি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত । যদি ছোট গল্প পছন্দ করে তাহলে পড়তে পারেন নিশ্চিন্তে । সময় কাটবে ভাল । 


দ্বিতীয় বইয়ার নাম "ভূতের বাড়ি ভয়ের হাঁড়ি" । লেখকের নাম ইমতিয়ার শামীম । মোট নয়টা ছোট ছোট গল্প আছে বইটাতে । একেবারেই ছোটদের জন্য লেখা বই ! তৃতীয় বইটার নাম "ভয়" ! এইটার লেখক রবিউল ইসলাম ! এই বইটাতেও একেবারে ছোট ছোট গল্প রয়েছে । দুইটা বই আপনি আপনার বাচ্চাদের পড়তে দিতে পারেন । খোজ মেজাজে বিকেল বেলা আপনি নিজেও পড়তে পারেন । ভয়ের থেকে বরং মজাই পাবেন বেশি !
শেষ বইটার নাম "খাদক"। লেখক সালেহ বায়েজীদ । এই বইটাও ছোট গল্প সংকলন ! মোট ১৩টা ছোট ছোট গল্প নিয়ে এই বইটা । অনেক দিন পরে আমি এমন একটা বই পড়লাম । আমার ছোট গল্পের বই পড়তে খুব বেশি সময় লাগে না । ঘন্টা খানেকের ভেতরেই ৮০/৯০ পেইজের একটা বই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারি । কিন্তু এই ৮০ পেইজের বইটা পড়ে শেষ করতে আমার মোটামোটি দুই দিন লেগেছে। এটার মূল কারণ হচ্ছে লেখকের ভাষা জ্ঞান এবং লেখার ধরন । গল্প গুলোর ধরন কিংবা প্লট খুব বেশি আহামরি নয় কিন্তু লেখকের শব্দ জ্ঞান, শব্দ চয়ন এবং উপস্থপন সব কিছু এক কথায় চমৎকার ! এই রকম লেখা আমি অনেক দিন পড়ি নি । আগের বই দুইটা না পড়লেও চলবে তবে এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন ।