ইন্দ্রজালঃ হাজার বছরের পিছুটান

গল্পের শুরু এক রোমান চিত্রকর ও প্রত্নতত্ত্ববিদ রোম থেকে জাহাজে করে গ্রীসে এসে হাজির হয় ১৮১২ সালে । চিত্রকরের নাম সায়মন । রোম থেকে তার গ্রীসে আগমনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্যাগানদের মন্দিরের ভেতরটা একটু পরীক্ষা করে দেখা । কিন্তু সেই মন্দিরের পুরোহিতা তাকে সেটা করতে দিতে রাজি হয় না । ফলাফল স্বরূপ সে রাতের আধারে সেই মন্দিরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে একটা বাক্স নিয়ে আসে । বাক্সটা পরীক্ষা করে দেখতে পায় সেখানে একটা দুয়ার সদৃশ্য স্ট্রাকচার রয়েছে ।
পড়াশুনা করে জানতে পারে যে এটা এমন একটা দুয়ার যেটা দিয়ে অতীতে ভ্রমন করা যায় । দেবরাজ জিউস এই বিশেষ দুয়ারটা তার মেয়েকে উপহার দিয়েছিলেন । এবং এর উপর দেবরানী হেরার অভিশাপ আছে । সায়মন যখন দুয়ারের সাথে থাকা চাবি দিয়ে যখন দুয়ারটা খোলে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে যে দুয়ারের ওপাশে কোন দেওয়াল নেই বরং সেখানে রয়েছে অন্ধকার । কৌতুহল নিয়ে যখন দুয়ার দিয়ে এক পা ভেতরে ঢুকায় যখন সে ভেতরে ঢুকে পরে । একটা সময় দুয়ার দিয়ে সে ভেতরে প্রবেশ করে । এবং এখনই তীব্র বিস্ময় নিয়ে খেয়াল করে যে সে হাজির হয়ে গেছে রোমে । সে ছিল গ্রীসে তখন । রোমে কিভাবে হাজির হল ? এবং একটু পরে আরও আবিস্কার করে যে সে হাজির হয়েছে জুলিয়াস সিজারের আমলে প্রায় দুই হাজার বছর অতীতে । সেখানেই তার জীবন কাটতে থাকে । অতীতের সেই রোমান রাজ্য সে তখন নিজের চোখে দেখতে শুরু করে । যে সব কাহিনী সে নিজ ইতিহাতের বই থেকে জানতে পেরেছে সেই সব ঘটনা সে দেখতে শুরু করে নিজের চোখে । সেখানে নিজের চিত্রকলা দক্ষতা দিয়ে মানুষের কাছে পরিচিত পেতে থাকে এটাই হয় তার জীবিকা নির্বাহের উপায় ।
এই অতীত জীবনে সায়মন দেখা পায় ইজাবেলের, যার প্রথম দর্শনেই সায়মনের সব কিছু উলটপালট হয়ে যায় । সে এই মেয়েটির পেছন পেছনে ঘুরতে থাকে । একটা সময়ে মেয়ের খুব কাছাকাছিও চলে আসে । কিন্তু সামন সব সময়ই নিজেকে ইজাবেলের কাছ থেকে দুরে রাখতে চায় কারন তার বিশ্বাস একদিন সে তার সময়ে ফিরে যাবে এবং সেখনে ইজাবেলের কোন অস্তিত্ব নেই । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি ইজাবেলের কাছ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারে?

গল্পের সাথে ইতিহাসের মিশ্রনটা লেখিকা বেশ চমৎকার ভাবে উপস্থপন করেছেন । ইতিহাসের সাথে গল্প এগিয়ে নেওয়াটা সেখানে নিজের সৃষ্ট চরিত্রটা বসানো কাহিনীর সাথে সামঞ্জস রাখাটা বেশ কষ্টকর এবং দক্ষতার কাজ । এইকাজটা লেখিকা করেছে চমৎকার ভাবে । লেখার ফ্লো আছে । তবে একটা খারাপ দিন আমার মনে হয়েছে যে লেখিকা যেন একটু তাড়াহুড়া ভাব দেখিয়েছেন লেখায় । লেখায় সংলাপের পরিমান উল্লেখযোগ্য ভাবে কম । সংলাপ যুক্ত দৃশ্য আরও কিছু থাকলে বইটা হতে পারতো আরও চমৎকার । তারপরেও বই পড়ে দেখতে পারেন । ইন্দ্রজাল এক পড়ে, আমার এর দ্বিতীয় খন্ড পড়ার আগ্রহ জন্মেছে । যে লেখকের প্রথম বই পরে পরের বই পড়তে আগ্রহ জন্মে নিঃসন্দেহে তিনি সফল লেখক ।

বইয়ের নাম ইন্দ্রজাল । লেখিকা জিমি তানহাব । ঐহিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে ।
বইটার একটা দ্বিতীয় পার্ট আছে । এইবার মেলায় বেরিয়েছে । সেটা সংগ্রহ করে পড়তে হবে !