বুক রিভিউঃ স্পন্দন

নায়িকার বাবা জিজ্ঞেস করলো, আমার মেয়েকে কিভাবে খাওয়াবে? নায়ক বলল, ভালবেসে ! আগের বলে নিয়ে নিচের বইয়ের কাহিনীর স্পয়েলার আছে । যদি স্পয়েলার না পড়তে না চান তাহলে এই রিভিউ না পড়াই ভাল। জীবনে এমন অনেক বই পড়েছি যেটা পড়ে আমার মেজাজ গরম হয়েছে। মাথার চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছে হয়েছে । মনে হয়েছে এই বই আমি কেন টাকা দিয়ে কিনে পড়লাম ! কেন কেন কেন !
এমনই এক বইয়ের নাম হচ্ছে "স্পন্দন" । লেখিকার নাম হয় নাই বললাম । বইয়ের কাহিনী আগে বলি ! নায়কের বাবা নাই । নায়ক মাস্টার্স পড়ে । টিউশনী করে সংসার চালায় । ঘরে তার মা এবং বোন আছে । নায়কের নাম অরব। নায়িকার বাবা ব্যবসায়ী । বড় লোক । নায়িকা নায়ককে খুব ভালবাসে । নায়িকার নাম রাত্রী ! অন্য আরেক নায়কের নাম আঁধার । তার এক প্রেমিকা আছে প্রেমিকার নাম কিরন ! আশে পাশে আরও চরিত্র আছে তাদের নাম লিখতে লেখে কাহিনী জটিল হয়ে যাবে । আমি সহজ করে বলি ! রাত্রীর বাবা নায়িকার পরিবার সহ সাজেক যায় বেড়াতে । সাথে যায় আঁধারের পরিবার । আধারের বাবা হচ্ছে রাত্রীর বাবার বন্ধু । তারা আধার আর রাত্রীর বিয়ের পরিকল্পনা করে ! রাত্রী এই বিয়েতে মোটেই রাজি না । সে মাকে পরিস্কার বলে দেয় যে বিয়ে করবে না । কিন্তু না সেই রাত্রীই বলে যে সে বিয়ে করবে । কারন কি ? কারন হচ্ছে তার প্রেমিক অরব তার ফোন ধরে নি । সে রাগ করে বিয়েতে হ্যা বলে দেয় । এদিকে আধারের তো প্রেমিকা আছে । কিন্তু তার বাবা তাকে জোর করে রাত্রীর সাথে বিয়েতে রাজি করায় ! বিয়ে যখন ঠিক তখন রাত্রী বলে যে সে বিয়ে করবে না । কারন অরবের সাথে তার আবার মিলমিশ হয়ে গেছে । সে বলে সে অরবকে ভালবাসে ! রাত্রীর বাবা বলে ঠিক আছে নায়ককে হাজির কর ! নায়ক হাজির হয় কিন্তু নায়ক তো গরীব । নায়িকার বাবার পছন্দ হয় না । রাত্রীকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় ! বিয়ের আগে পালানোর সুযোগ হলেও রাত্রী পালায় না । বরং অরবকে গিয়ে বলে তার বাবা তার ভাল জন্যই এসব করেছে । নায়ক তবুও নায়িকাকে খুব ভালবেসেই যায় ! এদিকে অন্য নায়ক আঁধার এক সময় জানতে পারে যে তার যে কিরন নামের প্রেমিকা ছিল সে হচ্ছে প্রেগনেন্ট ! ভয় নেই । সেই হচ্ছে সন্তানের বাবা । কিরনের আবার রক্ত শূন্যতা । এই ক্ষেত্রে নায়িকা রাত্রীর রক্তের গ্রুপ আবার কিরনের রক্তের গ্রুপের মিল । তাই চল রক্ত দিতে । ঘটনা বাসায় জানা জানি হয়ে । আধারের বাবা খুব রেগে যায় ছেলের উপর । এমন একটা কাজ সে কিভাবে করলো ! তারপর বাক্যবিনিময় । এক সময় আধারের বাবা এবং রাত্রীর বাবা বুঝতে পারে যে তারা ভুল করেছে । সুতরাং আধার এবং রাত্রীর তালাক হয়ে যাক এখনই । সমস্যা যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গল্পে কোন ট্র্যাজেডী হচ্ছে না তা তো হবে না । রাত্রীর সকল সমস্যা যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে সে এখন চাইলেই আবার অরবের কাছে ফিরে যেতে পারে কিন্তু না সে সেটা করবে না । সে বাসে উঠে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল । কিন্তু পথের মাঝে বাস করলো এক্সিডেন্ট ! নায়িকা গেল হাসপাতালে । এবং শেষে মারা গেল । ট্র্যাজিক পরিসমাপ্তি ! এই বই পড়ে নিজের মেজাজটা সত্যি ঠিক রাখা দায় । ফেসবুকে এই গল্প ফ্রিতে পড়তে রাজি নই আমি । বই আকারে কিনেছি বলে খুব কষ্ট করে পড়েছি । প্রকাশক নিজে কি এই গল্প পড়েছিল ? এই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে খানিকটা । গল্পের লেখার হাত খুবই অপরিপক্ক এবং সেই সাথে লেখিকার চিন্তা ভাবনার ভেতরে প্রচন্ড পরিমানে অপরিপক্কতা রয়েছে । লেখিকার আরও বেশি বেশি বই পড়া উচিৎ । কাহিনী বিন্যাস ঘটনার বর্ণনা আর কথোপকথন আমার মনে দাগ তো কাটেই না বরং বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে । অবশ্যই এই বই পড়তে এবং কিনতে মানা করবো !