বুক রিভিউঃ ও টু

কাহিনীঃ সময় টা বাংলাদেশের সূচনা লগ্নে । ১৯৬৯ সাল । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভাষাতত্ত্ব বিভাগের লেকচারার আজগর মালিক । জয়েন করেছে কয়েক মাস হয়েছে । শিক্ষকদের ক্যান্টিনে আড্ডা দেওয়া রত অজয় সাহা সহ আরও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে তার পরিচয় হয় । কথায় কথায় জানতে পারে যে মহেঞ্জোদারো সভ্যাতা থেকে পাওয়া একটা অদ্ভুত ট্যাবলেট রয়েছে তার কাছে । ট্যাবলেট মূলত একজন নভোচারীর দিনলিপি । নভোচারির নাম আলভেরো ওর্তেলা যাকে পাঠানো হয়েছিলো কোন একটা অভিযানে ।  

শিক্ষকের ছোট দলটা আগজর মালিকের কাছ থেকে জানতে পারে যে প্রাচীন কালে আমাদের বর্তমান সভ্যাতা থেকেও অনেক অনেক উন্নতি সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল । এই ট্যাবলেটটাই তার প্রমান । এই ট্যাবলেট থেকে অনুবাদ করে সেই সভ্যতার সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যায় ।
প্রাচীন কালে কোন একটা কারনে পরিবেশের অবনতি ঘটে । পৃথিবী হয়ে ওঠে বসবাসের অযোগ্য । তাই নতুন বসবাসের জন্য একটা গ্রহ খুজতেই পাঠানো হয় হয় আলভেরোকে । কিন্তু এক ব্ল্যাকহোল দূর্ঘটনায় পরে আলভেরোর স্পেপশীপ । সে যখন আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন পার হয়ে গেছে প্রায় ছয়শ বছর । তার পচিচিত সব মানুষ মারা গেছে । আলভেরো ভেবেছিলো হতো ততদিনে পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে গেছে কিন্তু ফিরে দেখতে পায় নতুন সভ্যতা । সেই সাথে আরও দেখতে পায় সেই সময়ের এক ভয়ংকর স্বৈরশাসক গোষ্টী । মানুষের সব থেকে বড় মৌলিক অধিকার এবং বাঁচার সব চেয়ে বড় অবলম্বনটাকে কুক্ষিগত করে তারা পুরো পৃথিবীর মানুষের উপর নিয়ন্ত্রন আনার চেষ্টা করছে । কিন্তু সময় যতই এগিয়ে যাক কিংবা সভ্যতা যত আধুনিক হোক, স্বৈর শাসন অন্যাটের বিরুদ্ধে যুগে মানুষ প্রতিবাদ করেছিলো করে যাবে। সেই সময়েও মানুষ অক্সিরেট নামের সেই স্বৈরশাকম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে যায় । 
শেষ পর্যন্ত কি সেই অক্সিরেটকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিলো ?
হয়তো হয়েছিলো আবার হয়তো হয় নি । সেটা সেই ট্যাবলেটের অনুবাদ করেই জানা যাবে ভাল ভাবে । তবে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর আবার সেই আজগর মালিকের সাথে যোগাযোগ হয়ে আজয় সাহার । আজগর মালিক এক বিস্ময়কর তথ্য জানায় । যা এতো সময় ধরে ভেবে এসেছিলো তার পুরোপুরি উল্টে যায় ! স 

মোটামুটি এই হচ্ছে কাহিনী শান্তির দেবদূত ভাইয়ের দ্বিতীয় সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস "ও টু" । আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো এই বইয়ের প্রথম পাঠক হওয়ার । বেশ কিছুদিন আগেই দেবদুত ভাই এই বইটার পান্ডুলিপি আমার কাছে পাঠিয়েছিলো । আমার মনে আছে যে সব কিছু বাদ দিয়ে আমি বইটা পড়ে শেষ করেছিলাম । এতো তীব্র আগ্রহ জন্মেছিলো যে একটুও দেরি সহ্য হয় নি এবং পড়া শেষে পরিপূর্ন সন্তুষ্ট হয়েছি । অনেক দিন পরে একটা মনের মত সায়েন্স ফিকশন পড়তে পেরেছি বলে আনন্দিত হয়েছি।
একটা ভাল গল্প হওয়ার জন্য যে কয়েকটা ব্যাপার থাকা দরকার "ও টু"র ভেতরে তার সব কিছু আছে । দুর্দান্ত একটা কাহিনী এবং লেখকের সাবলিল ভঙ্গিতে কাহিনীর বর্ণনা । ওটুর সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে এর শক্তিশালী কাহিনী বিন্যাস । এখনকার দিনে লেখা বেশির ভাগ সায়েন্স ফিকশনই গোজামিলে ভরা থাকে । কিন্তু ওটা সেটার বিচারে একেবারেই অন্য রকম । প্রতিটি ঘটনা লাইন পড়ে আপনার মনে হবে যে আসলেই বাস্তবে একটা গল্পই বটে । একেবারে প্রথম অধ্যায় টুকু পড়ার পরে অনেকের মনে হতে পারে হয়তো আরেকটা গতানুগতিক সায়েন্স ফিকশন পড়তে যাচ্ছে তারা কিন্তু যখনই দুই তিন অধ্যায় শেষ হবে তখন পাঠক আবিস্কার করবে যে এমন কাহিনী তারা আগে পড়ে নি । 

যদি সায়েন্স ফিকশন পড়তে আপনি পছন্দ করেন তবে এই বইটি পড়তে পরামর্শ দিব। শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে আপনার সময় কিংবা অর্থের অপচয় হবে না ! 

বইটি প্রকাশিত হয়েছে নালন্দা প্রকাশনি থেকে । বই মেলার প্যাভিলিয়ন ২৬ । অথবা রকমারী থেকেও অর্ডার দিতে পারেন !

বইয়ের নামঃ ওটু 
ধরনঃ সায়েন্স ফিকশন
লেখকঃ মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম 
নালন্দা প্রকাশনী