সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা নিয়ে কিছু বলাই নেই । যারা তার লেখা পড়েছেন তারা সেটা জানেন । গতদিন তার লেখা "ভালোবাসা, প্রেম নয়" বইটা পড়ে শেষ করেছি । অনেক দিন পরে সুনীল গন্ধ্যোপাধ্যায়ের বই পড়লাম । স্কুল আর কলেজে থাকতে ভদ্রলোকের অনেক বই পড়া হয়েছে যদিও তার বেশির ভাগই কিশোর সাহিত্য !
গল্পের কাহিনীর শুরুতে লেখক কামাল নামের এক ভদ্রলোকের পরিচয় তুলে ধরেছেন । এবং বলেছে বইটা মূলত কামাল নামের এই ভদ্রলোকের জীবনের একটা অধ্যায় । কামাল বাংলাদেশী । তবে সে থাকে আমেরিকা, কানাডাতে । কামাল হচ্ছে পরোপকারী । মানুষকে সাহায্য করতে সে সদা প্রস্তুত । কেউ দেশ থেকে আমেরিকা গেছে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করা, তার থাকার ব্যবস্থা করা একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া এই সব নানান কাজে সে সাহায্য করতে থাকে । এমন একবার এয়ারপোর্ট থেকে লেখককে সে রিসিভ করতে যায় । সেখানে থেকেই গল্পে মাধ্যমে নিজের জীবন কাহিনী শোনায় লেখক কে !
কামাল যখন আমেরিকাতে মানুষের উপকার করে বেড়াচ্ছে তখন দেশে যুদ্ধ লেগে গেছে । সেই সময়কার গল্প । কামালরা বড়লোক সম্ভ্রান্ত পরিবার । তার বাবা মা তাকে বিয়ে দিয়ে দিল এক মেয়ের সাথে । মেয়ের নাম জুলেখা । যখন জুলেখা আমেরিকাতে এল তখন কামাল ধীরে ধীরে জুলেখার প্রতি একটা গাঢ় ভালবাসা অনুভব করতে লাগলো । নানান রকম ভাবে সেই ভালবাসা সে অনুভব করতে শুরু করলো । কামাল তখন মানুষের উপকার করেই চলেছে । জুলেখা অনুযোগ করলেও সেটা মেনে নিয়েছে । জুলেখার মা ও ভাইকেও কানাডাতে সেটেল্ড করতে সাহায্য করেছে । এক সময় দেশ থেকে ওমর নামে এক লোক এল পড়ালেখা করার জন্য । একটা থাকার জায়গা দরকার তার । কামাল তাকে নিজের বাসার একটা ঘর ছেড়ে দিলো ।
এটা নিয়ে কমিউনিটিতে বেশ কথা শোনা গেল । কামাল ব্যবসার কাজে বাইরে থাকে । ঘরে একটা জোয়ান ছেলে । অল্প বয়সী বউ ! এই নিয়ে কথা চললেও কামাল এসবে কান দিল না । সে উদার মনের । তবে একটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করলো যে ওমর আর জুলেখার ভেতরে যেন আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । কামাল সেটা অনুভব করতে পারলেও কিছু বলল না । সে তার বউকে বিশ্বাস করে খুব । তারপরই ঘটনা ঘটলো । কামালের বাড়ি থেকে ওর বাবা মা এল । তার মায়ের কাছ থেকেই জানতে পারলো যে বিয়ের পর যখন তার বউ দেশে ছিল তখন টাইগারের (যে কিনা কামালের কাছের মানুষ) তার বউয়ের প্রেম চলছিলো । এখানে আসার পরেও নাকি সে টাইগারকে চিঠি লিখতো । এ কথা জিজ্ঞেস করতেই জুলেখার সাথে কামালের দুরস্ত সৃষ্টি হয় । এক সময় জুলেখা নয়টা ঘুমের ঔষধ খায় । হাসপাতাল থেকে তার মায়ের কাছে চলে যায় । তারপর আর ফিরে আসে না কামালের কাছে । কামাল অনেক চেষ্টা করে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কিন্তু লাভ হয় না । সে ডিভোর্স চায় !
এরপর কামাল আসল সত্যিই জানতে পারে । একটা সময় কামালের মনে হত যে সে তার বউয়ের উপর মিথ্যে সন্দেহ করেছে এই জন্যই হয়তো জুলেখা চলে গেছে কিন্তু সে জানতে পারে যে সত্যিই তার বউ এই কাজ গুলো করেছে । টাইগারের সাথে তার প্রেম ছিল । দেশে সব জানাজানি হয়ে যাবে এই জন্য সে সে আমেরিকাতে চলে এসেছিলো তাড়াহুড়া করে । এরপর এখানে এসে ওমরের সাথেও তার এই অকাজ গুলো চলতে থাকে । ওমরকে সে ভালবাসাতো না । যা ছিল সবই শারীরিক ।
বইটা শেষ করে আমার মনে অদ্ভুদ একটা কষ্ট হতে লাগলো । বলবো না বইটা আহামরি খুব ভাল লেগেছে । খুবই সাধারণ একটা কাহিনী । তবে বইতে কামাল যে তার বউকে ভালবাসে, সেটা পরিস্কার ভাবে ফুটে ওঠেছে । আপনি যখন জানতে পারবেন আপনার ভালবাসার মানুষ মানুষ অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে তখন যে কি তীব্র কষ্ট অনুভব হয় সেটা বইটা পড়ে আমি অনুভব করেছি । বইয়ের একদম শেষে লেখক যখন কামালকে জিজ্ঞেস করলো জুলেখার কথা তার মনে পড়ে কি না ! তখন কামাল বলল, আমার ভালোবাসাটা এক জায়গাতে আটকে ছিল । এখন সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি । তবে বুকটা ফাঁকা হয়ে আছো ! সেখান থেকে মাঝে মাঝে একটা হাহাকার বেরিয়ে আসে । সেটা কার জন্য জানি না !
কি তীব্র হাহাকার রয়েছে এই কথার মাঝে । আমার সব সময় মনে হয় মানুষ জীবনে প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা না পাক ঠিক আছে কিন্তু প্রিয় ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে যেন কোন দিন ধোঁকা না পায় ! আমার সব চেয়ে অপছন্দের মানুষের বেলাতেও যেন এটা না হয় !
বইয়ের নামঃ ভালোবাসা, প্রেম নয়
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বই পড়তে বলবো না আবার পড়তে মানাও করবো না ।
গল্পের কাহিনীর শুরুতে লেখক কামাল নামের এক ভদ্রলোকের পরিচয় তুলে ধরেছেন । এবং বলেছে বইটা মূলত কামাল নামের এই ভদ্রলোকের জীবনের একটা অধ্যায় । কামাল বাংলাদেশী । তবে সে থাকে আমেরিকা, কানাডাতে । কামাল হচ্ছে পরোপকারী । মানুষকে সাহায্য করতে সে সদা প্রস্তুত । কেউ দেশ থেকে আমেরিকা গেছে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করা, তার থাকার ব্যবস্থা করা একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া এই সব নানান কাজে সে সাহায্য করতে থাকে । এমন একবার এয়ারপোর্ট থেকে লেখককে সে রিসিভ করতে যায় । সেখানে থেকেই গল্পে মাধ্যমে নিজের জীবন কাহিনী শোনায় লেখক কে !
কামাল যখন আমেরিকাতে মানুষের উপকার করে বেড়াচ্ছে তখন দেশে যুদ্ধ লেগে গেছে । সেই সময়কার গল্প । কামালরা বড়লোক সম্ভ্রান্ত পরিবার । তার বাবা মা তাকে বিয়ে দিয়ে দিল এক মেয়ের সাথে । মেয়ের নাম জুলেখা । যখন জুলেখা আমেরিকাতে এল তখন কামাল ধীরে ধীরে জুলেখার প্রতি একটা গাঢ় ভালবাসা অনুভব করতে লাগলো । নানান রকম ভাবে সেই ভালবাসা সে অনুভব করতে শুরু করলো । কামাল তখন মানুষের উপকার করেই চলেছে । জুলেখা অনুযোগ করলেও সেটা মেনে নিয়েছে । জুলেখার মা ও ভাইকেও কানাডাতে সেটেল্ড করতে সাহায্য করেছে । এক সময় দেশ থেকে ওমর নামে এক লোক এল পড়ালেখা করার জন্য । একটা থাকার জায়গা দরকার তার । কামাল তাকে নিজের বাসার একটা ঘর ছেড়ে দিলো ।
এটা নিয়ে কমিউনিটিতে বেশ কথা শোনা গেল । কামাল ব্যবসার কাজে বাইরে থাকে । ঘরে একটা জোয়ান ছেলে । অল্প বয়সী বউ ! এই নিয়ে কথা চললেও কামাল এসবে কান দিল না । সে উদার মনের । তবে একটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করলো যে ওমর আর জুলেখার ভেতরে যেন আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । কামাল সেটা অনুভব করতে পারলেও কিছু বলল না । সে তার বউকে বিশ্বাস করে খুব । তারপরই ঘটনা ঘটলো । কামালের বাড়ি থেকে ওর বাবা মা এল । তার মায়ের কাছ থেকেই জানতে পারলো যে বিয়ের পর যখন তার বউ দেশে ছিল তখন টাইগারের (যে কিনা কামালের কাছের মানুষ) তার বউয়ের প্রেম চলছিলো । এখানে আসার পরেও নাকি সে টাইগারকে চিঠি লিখতো । এ কথা জিজ্ঞেস করতেই জুলেখার সাথে কামালের দুরস্ত সৃষ্টি হয় । এক সময় জুলেখা নয়টা ঘুমের ঔষধ খায় । হাসপাতাল থেকে তার মায়ের কাছে চলে যায় । তারপর আর ফিরে আসে না কামালের কাছে । কামাল অনেক চেষ্টা করে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কিন্তু লাভ হয় না । সে ডিভোর্স চায় !
এরপর কামাল আসল সত্যিই জানতে পারে । একটা সময় কামালের মনে হত যে সে তার বউয়ের উপর মিথ্যে সন্দেহ করেছে এই জন্যই হয়তো জুলেখা চলে গেছে কিন্তু সে জানতে পারে যে সত্যিই তার বউ এই কাজ গুলো করেছে । টাইগারের সাথে তার প্রেম ছিল । দেশে সব জানাজানি হয়ে যাবে এই জন্য সে সে আমেরিকাতে চলে এসেছিলো তাড়াহুড়া করে । এরপর এখানে এসে ওমরের সাথেও তার এই অকাজ গুলো চলতে থাকে । ওমরকে সে ভালবাসাতো না । যা ছিল সবই শারীরিক ।
বইটা শেষ করে আমার মনে অদ্ভুদ একটা কষ্ট হতে লাগলো । বলবো না বইটা আহামরি খুব ভাল লেগেছে । খুবই সাধারণ একটা কাহিনী । তবে বইতে কামাল যে তার বউকে ভালবাসে, সেটা পরিস্কার ভাবে ফুটে ওঠেছে । আপনি যখন জানতে পারবেন আপনার ভালবাসার মানুষ মানুষ অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে তখন যে কি তীব্র কষ্ট অনুভব হয় সেটা বইটা পড়ে আমি অনুভব করেছি । বইয়ের একদম শেষে লেখক যখন কামালকে জিজ্ঞেস করলো জুলেখার কথা তার মনে পড়ে কি না ! তখন কামাল বলল, আমার ভালোবাসাটা এক জায়গাতে আটকে ছিল । এখন সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি । তবে বুকটা ফাঁকা হয়ে আছো ! সেখান থেকে মাঝে মাঝে একটা হাহাকার বেরিয়ে আসে । সেটা কার জন্য জানি না !
কি তীব্র হাহাকার রয়েছে এই কথার মাঝে । আমার সব সময় মনে হয় মানুষ জীবনে প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা না পাক ঠিক আছে কিন্তু প্রিয় ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে যেন কোন দিন ধোঁকা না পায় ! আমার সব চেয়ে অপছন্দের মানুষের বেলাতেও যেন এটা না হয় !
বইয়ের নামঃ ভালোবাসা, প্রেম নয়
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বই পড়তে বলবো না আবার পড়তে মানাও করবো না ।