দ্য ডার্ক প্রিন্স (পর্ব আট)


মাইক্রোবাসটা দ্রুত এগিয়ে চলছে । একটু আগেও খানিক সময়ের জন্য সেটা একটু জ্যামে পড়েছিলো । মিতুর খুব ইচ্ছে করছিলো চিৎকার করে মানুষ ডাকতে । কিন্তু সেটার কোন উপায় ছিল না ওর কাছে । ওকে মাইক্রোবাসের মাঝের সিটে বসিয়ে রাখা হয়েছে । ওর দুটি হাত এক সাথে করে পেছন দিক দিয়ে বাঁধা । মুখে একটা মেডিক্যাল টেপ দিয়ে আটকানো । সিট বেল্ট দিয়ে আটকানো সিটের সাথে ।


মিতুর চোখ কেবল ওর পাশে বসে থাকা মানুষটার দিকে । এতো দিনের পরিচিত মানুষটা ওর সাথে এমন করতে পারে মিতু সেটা ভাবতেও পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে আকাশ ওর সাথে এমন কেন করছে ?
ওকে কেন তুলে নিয়ে যাচ্ছে !

যখন আকাশের কন্ঠস্বর ও শুনেছিলো বিস্ময়ে ওর চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিলো কেবল । কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না । মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারে নি । আকশের খুনে দৃষ্টির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো । এতো কেয়ারিং একজন মানুষ এই ভাবে হিংস্র ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে সেটা মিতু ভাবতেও পারে নি । 

যখন ঘোর কাটলো কোন ভাবে বলার চেষ্টা করলো ওকে ছাড়তে । কিন্তু এর বেশি কথা সে বলতে পারে নি । তার আগেই মিতুর হাত বেঁধে তারপর মুখে টেপ দিয়ে আটকে দিয়েছে । 

পুরো মাইক্রোবাসে মিতু ছাড়া আরও তিনজন মানুষ আছে । একজন ড্রাইভার সামনে মাইক্রবাস চালাচ্ছে । মাঝের সিটে আকাশের সাথে আরও একজন ছিল । ওকে তুলে নেওয়ার জন্য আকাশকে সাহায্য করেছিলো । এখন সেই মানুষটা পেছনের সিটে বসে আছে । আকাশ বসে আছে মিতুর পাশে । বেশ কিছুটা সময় গাড়িটা চলেছে এক ভাবে । মিতু গাড়িটার চারিপাশে তাকিয়ে দেখেছে । গ্লাসটা কালো রংয়ের । বাইরে থেকে কিছু দেখা যাবে না । আর এখন রাতের বেলা । একটু আগে বৃষ্টি হওয়ার কারনে রাস্তা ঘাটে খুব একটা মানুষ নেই । 

মিতুর বুকের ভেতরটা ভয়ে কাঁপতে লাগলো । কি হবে ওর সাথে মিতু এখনও জানে না । আকাশকে ওর বড় বেশি অপরিচিত মনে হচ্ছে ! আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কেবল । 
আকাশ হঠাৎ বলল, এতো বড় সাহস তোমার, মেয়ে মানুষ হয়ে আমাকে রিজেক্ট কর ? আমার থেকে তোমার চাকরি বড় হয়ে গেল ? আজকে তোমাকে চাকরির মজা বুঝাবো ! 
মিতুর চোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগলো । মুখ দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না । আকাশ আবার বলল, আমার মা বাবার সামনে আমাকে অপমান ! এই অপমানের মূল্য আজকে তোমাকে দিতে হবে ! 

মিতুর বুকের ভেতরে আবারও সেই ভয়টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । প্রথমে একবার মিতুর মনে হয়েছিলো আকাশ ওকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে হয়তো জোর করে বিয়ে করার জন্য । এই রকম ঘটনা মাঝে মাঝেই হয় । ক্ষমতাবান কোন মানুষ যদি কোন মেয়েকে পছন্দ করে এবং মেয়েটা যদি রাজি না থাকে তাহলে প্রায়ই মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে । এই রকম উদাহরন অনেক আছে । কিন্তু এখন আকাশের কথা শুনে মনে হচ্ছে ওকে মোটেই বিয়ে করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না । অন্য কিছুর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । কথাটা ভাবতেই মিতুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল ! 

ঠিক সেই সময়েই মিতুদের গাড়িটাকে বাঁ দিক থেকে আসা একটা হ্যামার জোড়ে ধাক্কা মারলো । ধাক্কাটা লাগলো গাড়ির একেবারে সামনের দিকে । ড্রাইভারের উপর ধাক্কার ফলটা বেশি পড়লো । মিতুর খুব জোরে ঝাকি খেলেও সিট বেল্ট বাধা থাকার কারনে খুব একটা ক্ষতি হল না ওর । তবে বাকি দুজন মানুষ গাড়ির ভেতরেই কয়েকবার এদিক ওদিক দেওয়ার সাথে ধাক্কা খেল প্রবল ভাবে ।  কয়েকবার এদিক ওদিক ঘুরে গাড়িটা থেমে গেল রাস্তার পাশের একটা ফাঁকা স্থানে । 

গাড়িটা থেমে যাওয়ার পরে মিতু কিছুটা সময় তখনও স্থির হতে পারে নি । গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে দেখলো । আকাশের অবস্থা বেশ খানিকটা খারাপ । মাথা ফেটে গেছে । রক্ত বের হচ্ছে । তখনই গাড়ির দরজা খুলে গেল । দরজার ওপাশে দাড়ানো মানুষটাকে দেখে মিতু আজকের দিনে দ্বিতীয়বারের মত চমকে গেল । 
ফারাজ !
ফারাজের চোখের দিকে তাকিয়ে মিতুর মনে হল এই অন্ধকারের ভেতরেও চোখ দুটো দাউদাউ করে জ্বলছে । একবার মিতুর দিকে তাকালো । তারপরই ওর চোখ গেল আকাশের উপর । আকাশ তখনও পুরোপুরি সুস্থির হতে পারে নি । ফারাজ আকাশের জামার কলার চেপে ধরলো । কলার চেপে ধরেই আকাশকে বের করলো গাড়ি থেকে । মিতু গাড়ির দরজা দিয়ে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে । ফারাজ তখন কলার ছেড়ে দিয়ে আকাশের গালে একটা জোড়ে চড় বসিয়ে দিল । 

মিতু চোখ বড় বড় তাকিয়ে দেখলো ফারাজের চড় খেয়ে আকাশ কম করে হলেও চার ফুট দুরে গিয়ে পড়লো । কারো চড়ে যে এতো শক্তি থাকতে পারে- মিতু সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতো না । মিতুর পেছনে থাকা মানুষটাও সেটা পরিস্কার দেখতে পেয়েছে । ফারাজ যখন আবারও মাইক্রোটার কাছে চলে এল পেছনের লোকটা সামনে তো এলোই না বরং সিটের কোনার দিকে সরে গেল । ফারাজ তাকে ধরতে গেল কিন্তু মাঝ পথেই থেমে গেল । মিতু দেখলো ফারাজ কিছু সময় আবার গাড়ি থেকে মুখ তুলে বাইরে তাকালো । দ্রুত মিতুর সিটবেল্ট টা এক টানে ছিড়ে ফেলল । খোলার চেষ্টাও করলো না । এতো শক্ত সিটবেল্ট এতো স হজে ছেড়া সম্ভব ? ফারাজ এতো শক্তিশালী !!

মিতুকে বের করে নিয়ে ওর হ্যামার গাড়িটার সামনের সিটে বসিয়ে দিল । সিট থেকে ওর চোখ গেল মাটিতে পড়ে থাকা আকাশের দিকে । গাড়ির আলোতে মুখটা দেখা যাচ্ছে । মুখটা কেবল বেঁকে আছে । ফারাজ ততক্ষনে ওর পাশে এসে বসেছে । গাড়ির ইঞ্জিন চলছিলই । দ্রুত গাড়ি চালিয়ে আবারও ঢাকার দিকে রওয়ানা দিয়ে দিল । 

যখন বেশ খানিকটা দুরে চলে এসেছে তখন ফারাজ ওর মুখের টেপটা খুলে দিল । তারপর বলল, তুমি ঠিক আছো ? ব্যাথা লাগে নি তো !
মিতুর হাত তখনও বাঁধা । মিতুর একবার বলতে ইচ্ছে হল যে ওর হাতের বাঁধন খুলে দিতে কিন্তু মুখ দিয়ে সেটা বের হল না । ফারাজ বলল, পানি খাবে ?
মিতু একটু মাথা ঝাকালো । ফারাজ নিজেই বোতলের মুখ খুলে ওর মুখের কাছে এনে ধরলো । মিতুর হঠাৎ ব্যাপারটা অদ্ভুদ মনে হল । ওর সাথে এই সব কেন হচ্ছে ? পাশে বসা মানুষটা ওর সাথে এই ভাবে জড়িয়ে কেন যাচ্ছে ! 

যখন গাড়িটা মিতুদের বাসার সামনে এসে দাড়ালো তখন বেশ রাত হয়ে গেছে ।  ফারাজ মিতুকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করলো । তখনও মিতুর হাত বাঁধাই রয়েছে । মিতু একবারও সেটা খোলার চেষ্টা করে নি, এমনকি খুলতে বলেও নি । কেন বলে নি সেটা মিতু নিজেও বলতে পারবে না । ফারাজ ওর দিকে হঠাৎ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর এগিয়ে এসে ওর কপালে একটা চুমু খেল । মিতুর পুরো শরীরটা যেন আবারও কেঁপে উঠলো । তবে এই কেঁপে ওঠার পেছনের অনুভূতি ওর কাছে একেবারেই অজানা । 

ফারাজ বলল, তোমার কিছু হবে না । আমি আছি তোমার সাথে !

কথাটা শোনা মাত্র মিতুর মাঝে কি হল সেটা ও বলতে পারবে না । নিজেকে ফারাজের আরও কাছে নিয়ে এল ও । যেন খুব নিশ্চিত একটা আশ্রয় ও খুজে পেয়েছে এতোদিন পরে । ফারাজ ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো কেবল । মিতু সেটা করতে পারলো না । ওর হাত তখন পেছন দিক দিয়ে বাঁধা। ফারাজ সেটা বুঝতে পেরে ওর হাত খুলে দিল। বেশ শক্ত করেই বাঁধা হয়েছিল। 

মিতু যখন সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলো তখনও ও যেন একটু ঘোরের ভেতরে ছিল । গত তিন ঘন্টায় ওর সাথে কি কি হয়েছে সেটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না যেন । ঠিক মত বিশ্বাসও করতে পারছে না । আকাশ ওকে জোর করে ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, অনেকটা সফলও হয়েছিলো কিন্তু মাঝে পথে কোথা থেকে ফারাজ এসে পৌছালো । কিভাবে ওকে উদ্ধার করে নিয়ে এল আর সব থেকে বড় ব্যাপার ফারাজ ওকে চুমু খেয়েছে পরম যত্নে । এই সবই মিতুর কাছে স্বপ্নের মত মনে হল কেবল । মনে হল যেন এখনই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে । সে জেগে উঠবে । 

পরদিন মিতুকে অফিসে দেখতে পেয়ে ফারাজ অবাক হয়ে বলল, আজকে অফিসে এসেছো ? তোমার বিশ্রামের দরকার । কই হাতের অবস্থা দেখি? 
মিতু হাত টা এগিয়ে দিল । গতকালের দড়ির দাগটা এখনও পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে । লাল হয়ে আছে । ফারাজ বলল, এখানে ভাল করে ঔষধ লাগাবে । ঠিক আছে !
মিতু মৃদু স্বরে বলল, জি ।
-আর এখন বাসায় চলে যাও । সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নাও । 

মিতু কিছু বলতে পারলো না । তবে ওর মাঝে কিছু একটা পরিবর্তন এসেছে সেটা ও ঠিকই বুঝতে পারলো । 

আজকে অবশ্য ও বাসায় গেল না । স্কুটি নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলো । দুপুরের দিকে একটা রেস্টুরেন্টে খাবার খেল । তারপর যখন আবারও স্কুটির কাছে ফেরৎ এল দেখতে পেল দুজন মানুষ সেখানে দাড়িয়ে আছে । মিতু ওদের এড়িয়ে নিজের স্কুটির কাছে পৌছাতে যাবে তখনই একজন ওর পথ রোধ করে দাড়ালো । অন্য সময় হলে ও একটু ভয় পেত কিন্তু আজকে কেন জানি ওর ভয় লাগলো না । ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার ?
বয়স্কজন মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, মিতু আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে একটু !
মিতু বলল, কেন ? আপনারা কেন ?
-আমরা পুলিশের লোক !
-রিয়্যালি ? আমার মনে হচ্ছে না । দেখুন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনারা পুলিশের লোক । আর আমাকে জোর করলে ফল ভাল হবে না আগে থেকে বলে দিচ্ছি ! 
কম বয়স্ক লোকটা কঠিন মুখ নিয়ে বলল
-দেখুন আমরা চাইলে আপনাকে জোর করে ধরে নিয়ে যেতে পারি !
-নিয়েই দেখুন ! একবার কেবল চেষ্টা করে দেখুন ! 

কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না । মিতু বলল, আমার জানা মতে আমি এমন কোন কাজ করি নি যেটার জন্য পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাবে । আর যদি করেও থাকি আমাকে আপনারা এই ভাবে ধরে নিয়ে যেতে পারবেন না । লেডি পুলিশ লাগবে ! তাদেরকে নিয়ে আসুন আমি যাবো ! সবার সামনে দিয়ে । বুঝেছেন !
কম বয়স্কলোকটা কিছু বলতে গেল । কিন্তু বয়স্কলোকটার জন্য বলতে পারলো না  খানিকটা নরম কন্ঠে লোকটা বলল, মিস মিতু আপনার ভালর জন্যই বলছি । আপনার সাথে আমাদের কথা বলা দরকার । আচ্ছা আপনি আমাদের সাথে যেতে চান না ভাল কথা । উপরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি । কয়েকটা কথা বলা সত্যিই দরকার । একটু বোঝার চেষ্টা করুন ! 

মিতু এবার একটু নরম হল । তারপর বলল, এটা আগে বললেই ভাল হত না । সব জায়গায় ক্ষমতা দেখানোর দরকার আছে কি ?

মিতু আবারও সেই রেস্টুরেন্টে ফিরে এল । এবার ওর সাথে দুইজন পুলিশ অফিসার ছিল । যদিও এখনও ওর মনে খানিকটা সন্দেহ আছে যে ওরা আসলেই পুলিশের লোক কি না ! কোনার দিকে একটা টেবিলে বসলো ওরা আবার ! 

মিতুর দিকে তাকিয়ে বয়স্ক লোকটা বলল, আমার নাম হারিস আহমেদ । এ আমার এসিসট্যান্ট রুপম । আমরা দুইজনই ডিবিতে আছি । 
মিতু কিছু বলল না । দুজনের মুখের দিকে তাকালো কিছু সময়ের জন্য । তারপর বলল, তা আমার কাছে কি দরকার ?
-আমাদের যেমন আপনাকে দরকার আছে ঠিক তেমনি আপনারও দরকার আমাদের !
-মানে বুঝলাম না । 
-বলছি ।
এই বলে নিজের মোবাইল বের করে কিছু টেপাটেপি করে মিতুর দিকে বাড়িয়ে দিল সেটা । তারপর বলল
-মোট ছয়টা ছবি আছে এখানে । দেখুন তো কাউকে চিনতে পারেন কি না? 
মিতু ছবি গুলো দেখতে লাগলো । প্রথম পাঁচটা ছবির কাউকেই সে চিনতে পারলো না । শেষ ছবিটা দেখার সাথে সাথেই চিনতে পারলো ! নাতাশা ! ফারাজের আগের পিএ ! 
মিতু বলল, একজন কে চিনি । নাতাশা । ফারাজ স্যারের পিএ ছিল আগে ! 

হারিস আহমেদ কিছু সময় চুপ থেকে বলল, এই ছয়জন মেয়ে গত এক বছরে গায়েব হয়েছে । তবে কেউ কোন কমপ্লেইন করে নি । 
মিতু বলল, কেন ?
-কারন ওদের কারোও খোজ নেওয়ার মত কেউ ছিল না । এতিম বলতে পারো । আত্মীয়দের বাসায় মানুষ হয়েছে । চাকরি পাওয়ার পরে একা একা থাকতো । 
মিতু বলল, সবাই ?
-হ্যা সবাই । এবং আরেকটা মিল আছে এদের মাঝে !
মিতু বলল, কি মিল ?
-মিলটা হচ্ছে এরা সবাই আপনার বসের আন্ডারে চাকরি করতো !
-আপনি কি বলতে চান ?
-আমরা আসলে কিছুই বলতে চাই না । কেবল একটা সন্দেহ জেগেছে আমাদের মনে । এবং আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন আপনার প্রোফাইলের সাথে আগের ছয়টা মেয়ের প্রোফাইল একেবারে মিলে যায় । কেবল আপনি এখনও আপনার মামার বাসায় থাকেন । এটা বাদ দিয়ে সব কিছু । আর যদি আমাদের প্রেডিকশন ভুল না হয়ে থাকে তাহলে কিছুদিন পরে হয়তো আপনিও গায়েব হয়ে যাবেন । তাই এটা ঘটার আগেই আপনাকে সাবধান করলাম । এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই আগের মেয়ে গুলোর কি হল সেটা জানার জন্য ! 

মিতু কথা গুলো ঠিক হজম করতে পারলো না । কিছু সময় লাগলো সুস্থির হতে । তারপর বলল, তাহলে আপনারা ফারাজ চৌধুরীকে ধরছেন না কেন ?
রুপম বলল, অন্য কেউ হলে হয়তো আপনার কথা মত কাজ করতাম । কিন্তু ফারাজ চৌধুরী সাধারন কেউ নয় ! তার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানেন খুব ভাল করে ! নিরেট প্রমান ছাড়া কিছুই করতে পারবো না আমরা ! এমন কি জিজ্ঞাসাবাদের অনুমুতিও হয়তো পাবো না । বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই !
মিতু মাথা নাড়ালো । তারপর বলল, এখন আমার কাছে কি চান ?
হারিস আহমেদ বলল, এনি থিংক ! এমন যে কোন কিছু যা আগের ছয়জন মেয়ের সাথে রিলেটেড হয় । আপনি যেহেতু সব সময় তার সাথে থাকেন, তার পিএ আপনি, তার ফাইল পত্রে এক্সেস আছে আপনার ! আছে না ? 
মিতু বলল, সব কিছু নেই তবে আছে । 
হাসির আহমেদ বলল, সেটাই হোক । যা পারেন আমাদের সাহায্য করুন প্লিজ । আপনার নিজের জন্যই করুন ! আমরা কোন ভাবেই চাই না আপনার কোন ক্ষতি হোক । কোন ভাবেই না !
-আচ্ছা আমি জানাবো !

মিতু ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবারও নিজের স্কুটির দিকে হাটা দিল । ওর মন ভরে গেছে দ্বিধায় । পুলিশ লোক গুলোর কথা সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । আবার ফেলেও দিতে পারছে না ! তবে সবার আগে মিতুর কাজ হবে ছবি গুলো ভ্যারিফাই করা । মেয়ে গুলো আসলেই ওদের অফিসে কাজ করতো কি না সেটা দেখা । নাতাশাকে সে চিনতো কিন্তু আগের ৫ জনকে চিনে না । 

বাসায় যাওয়া বদলে আবারও অফিসে গিয়ে হাজির হল । দোয়া করলো ফারাজ যেন অফিসে না থাকে । কারন ফারাজ যদি ওকে জিজ্ঞেস করে যে কেন এসেছে আবার ও হয়তো তাকে মিথ্যা বলতে পারবে না । সত্যিই বলে দিবে ! 
কোম্পানির মেইন সার্ভারে প্রবেশ এপ্লোয়ি লিস্টে নাম গুলো লিখতেই একে একে চেহারা গুলো ফুটে উঠতে লাগলো । সত্যিই তারা সবাই এই অফিসেই চাকরি করতো ! কিছু সময় কেবল চুপ করে বসে রইলো । তাহলে কি লোক দুটো সত্যি কথা বলছে ? ফারাজের কোন হাত আছে এই ব্যাপারে !

ফেসবুক