বুক রিভিঊঃ আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান

সায়ক আমানকে আমি চিনি ইউটিউবের মাধ্যমে । তার একটা স্টোরী চ্যানেল আছে । সেখানকার নিয়মিত শ্রোতা আমি । সেখান থেকেই তার প্রথম বইটার খোজ পাই । "তার চোখের তারায়" বইটা চমৎকার ভাবে শুরু হলেও শেষটা আমার ঠিক পছন্দ হয় নি । মনে হয়েছিলো হয়তো আরও একটু ভাল হতে পারতো । তাই তার পরের বইটার ব্যাপারে একটু কম আশাবাদী ছিলাম । অনেকদিনের চেষ্টার পর তার বই "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" বইটা হাতে এসেছে । 

বইটা একই সাথে ফ্যান্টাসি, আরবান ফ্যান্টাসি এবং এভভ্যাঞ্চার ক্যাটাগরিতে পড়ে । তাই বই পড়ার আগে নিজের মনকে এই ভাবে ঠিক করে নিতে হবে যে এই বইটা পড়তে গেলে যুক্তির থেকে আপনার কল্পনা শক্তির ব্যবহার বেশি করতে হবে । নয়তো পুরো গল্পের আসল মজা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন । 


গল্পের শুরু হয় এক ছোট্ট মেয়ে দিয়ে । বস্তিতে থাকে সেই মেয়ে তার বাবার সাথে । তার মা বস্তির ঘরে আগুন লেগে মারা গিয়েছিলো । এক রাতে মেয়েটা নির্জন রাস্তায় দিয়ে বাসায় ফেরৎ আসার সময়ে কিছু মানুষের হাতে পড়ে । যখন মেয়েটির সাথে নির্মম কিছু হতে যাবে তখনই মেয়েটির হাতে একটা রড জাতীয় লম্বা দন্ড এসে পড়ে । আশ্চর্য ঘটনা ঘটে তখন । তারপর আসে এক আিটি সেক্টরে কাজ করা যুবকের । যে মাসে অন্তত একদিন কোলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় মাতাল হয়ে । বাস্তবতা থেকে নিজেকে আড়াল করে রাস্তায় রাস্তায় হাটে । সেই ছেলে একদিন রাতে হঠাৎ করে পড়ে যায় একটা জলাশয়ে । সাতার না জানা থাকায় যখন ছেলেটা মরতে যাবে তখনই একটা হাত এসে তাকে টেনে তুলে নিয়ে যায় । সেই মানুষটার খোজ করতে গিয়ে ছেলেটা জড়িয়ে যায় আরও বড় কিছুতে । আর আছে এক প্রোফেসর যে দুনিয়ানার নানান স্থানের কেভ পেইন্টিন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন । বিয়ে থ করেন নি । সারাটা সময় পড়াশুনা করে কাটিয়ে দেন । সেই এই অভিযানের সাথের সাথে জড়িত । এর পর আসে আরও একজন । ২৫/২৬ বছরের এক মেয়ে । এমন এক মেয়ে যার জন্ম এই পৃথিবীতে নয় । অদ্ভুত তার চরিত্র আর অশ্চর্য তার ক্ষমতা । শরীরে পানি পড়লেই তার শরীর থেকে আলো পড়তে থাকে । 

এই হচ্ছে গল্পের চরিত্র গুলো । এই গল্পটা আরও ভাল ভাবে পরতে হলে আপনাকে নর্স মিথোলজি সম্পর্কে একটু জ্ঞান থাকা দরকার । তাহলে বইটা আরও ভাল ভাবে বুঝতে সুবিধা হবে । গল্পনা মূলত আদিম এক অপদেবতা উত্থানকে কেন্দ্র করে । নর্স মিথোলজিতে মোট জগত আছে নয়টা । আদিম অপদেবতার সরসরার এই সব গুলো জগতই দখল করতে চায় । সেই ঘটাতে থাকে একের পর  নৃশংস হত্যাকাণ্ড । আর যতই হত্যাকাণ্ড হতে থাকবে মানুষের মনে সেই বিশাল অতিকায় সাপ সরসরারের  ভয় বাড়তে থাকবে, বাড়তে থাকবে তার ক্ষমতাও । কিন্তু ইগড্রাসিল এই অদেবতাকে রুখে দেওয়ার জন্যই তার নিজের সন্তানকে পাঠিয়ে দেয় এই পৃথিবীতে । সাথে যুক্ত হয় এক উপরের চরিত্র গুলো । চারজন গিয়ে হাজির হয় হেলহেইম নামের এক অবলুপ্ত প্রাণীদের জগতে । যুদ্ধ শুরু হয় ! এখন শেষ পর্যন্ত মেয়েটি কি পারবে অপদেবতাকে হারাতে ? তাহলেই কেবল পৃথিবীর সাম্যবস্থা ফেরৎ আসবে ! 


গল্পের কাহিনী বর্ণনা নিয়ে কোন কথা হবে না । সায়ক আমানের গল্প বলার ধরনটা খুবই সাবলিল আর চমৎকার । পড়তে পড়তে একটু বিরক্তি আসবে না বরং আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে । বইটা পুরো পুরিই একটা ফ্যান্টারি গল্প । আপনারা এটাকে আধুনিক রূপকথাও বলতে পারেন । চরিত্রের উপস্থাপন, তাদের পারস্পারিক সংলাপ সবই আমার কাছে চমৎকার লেগেছে । বইয়ের মাঝে মাঝে কিছু ছবি এই গল্পটাকে যেন আরও একটু বেশি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছে, কল্পনার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে । বলা যায়বই পড়ার পুরো সময়টা কেটে চমৎকার । 
আপনাদেরও পড়ার জন্য অনুরোধ করবো ! 

কিন্তুটা বইটা এই দেশে পাবেন কি না সন্দেহ আছে । ইন্ডিয়ান রাইটারের বই । এই দেশের কোন লাইব্রেরীতে পাবেন কিনা জানি না । তবে অনলাইনে কিছু পেইজ আছে যারা ইন্ডিয়া থেকে বই নিয়ে আসে । তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন !