দ্য ডার্ক প্রিন্স (পর্ব এক)

সিগনাল জ্যামটা যে কখন ছাড়বে সেটা কেউ জানে না । মিতু অনেকটা সময় সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । যদিও ওর খুব একটা তাড়াহুড়া নেই । আজকে ওর কোন ক্লাস নেই । স্কুটি নিয়ে এমনিই বের হয়েছে । যদি কোন রাইড পেয়ে যায় এই আশাতে । স্কুটিটা কেনার পর একদিন ইচ্ছে করেই রাইড শেয়ার এপসে সাইনআপ করেছে । ভেবেছিলো যে যাওয়ার কিংবা আসার পথে যদি কাউকে পাওয়া যায় তাহলে উঠিয়ে নিবে । কিন্তু এখন ও কাজটাতে বেশ মজাই পায় । ক্লাসে যাওয়া আসা ছাড়াও মাঝে মাঝেই রাইড শেয়ার করে । 

আজকেও এই জন্য স্কুটি নিয়ে বের হয়েছিলো । কোন দিকে যাবে ঠিক বুঝতে পারছিলো না । জ্যামে বসেছিলো চুপচাপ । ওর পাশে কয়েকটা বাইক দাড়িয়ে আছে । ওর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে । মিতু অবশ্য সেদিকে খেয়াল দিচ্ছে না । খেয়াল দিলেই এই ছেলে গুলো পেয়ে বসবে ।
এমন সময় একটা রাইড কল চলে এল । একবার ভাবলো যে এক্সসেপ্ট করবে না কিন্তু করে ফেলল । কাস্টমারই ফোন দিল । একটা মেয়ে ! মিতু মেয়েদেরকেই রাইড দিতে পছন্দ করে । ছেলেদের খুব একটা দেয় না ।
-আপনি কোথায় আছেন ?
-আমি পান্থপথ সিগনালে বসে আছি । আপনি তো কাছেই আছেন নাকি ?
ওপাশ থেকে কিছু সময় কোন কথা শোনা গেল না । তারপর মেয়েটা বলল
-আপনার স্কুটি নাম্বার কি ঢাকা ক ৫২-৪৬৫৫?
-হ্যা । আপনি কোথায় ?
-আপনাকে দেখতে পেয়েছি । স্যার যাচ্ছেন আপনার কাছে !
এই বলে ফোন কেটে গেল । মিতু খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে গেল । স্যার যাচ্ছেন বলতে মেয়েটা কি বলতে চাইলো । ছেলে হলে সাধারনত মিতু সেটা এক্সেপ্ট করে না । এই স্যার মানে কোন স্যার !
মিতু যখন এই সব ভাবছিলো তখনই তার পাশে একটা স্যুট টাই পরা যুবক এসে দাড়ালো । চোখে কালো চশমা ! মিতু চেহারার দিকে তাকাতেই একটু সংকুচিত হয়ে গেল । যুবকের চেহারা খুবই কর্তৃত্বপরানয়ন । এই বয়সে ছেলেদের চেহারাতে এতো ডোমিনেটিং ভাব থাকে না যদি না সে এখনই জীবনে খুব সফল হয়ে ওঠে ।
যুবক ওর কাছেই এসেই বলল
-আপনিই মিস মিতু ?
কন্ঠ শুনেও মিতুর ভেতরে সেই সংকুচিত ভাবটা আরও একটু বেড়ে গেলে যেন । ছেলেটার কন্ঠে সত্যিই কিছু ছিল । কি ছিল সেটা মিতু বলতে পারবে না । মিতু কোন কথা বলতে পারলো না । কেবল মাথা ঝাকালো । যুবক বলল
-আমার পিএ আপনাকে ফোন দিয়েছে একটু আগে ।
-জি ।
তারপর যুবক আর কোন কথা না বলে ওর স্কুটের পেছনে ওঠে বসলো । তারপর আবারও সেি কর্তৃত্ব পরায়ন কন্ঠে বলল
-আমি আপনাকে আধা ঘন্টা সময় দিচ্ছি । এর মাঝে আপনি আমাকে মতিঝিল নিয়ে যাবেন । কোন ট্রাফিক রুল যদি ভাঙ্গতে হয় ভাঙ্গবেন কোন সমস্যা নেই, যত ফাইণই হোক সেটা পুরন করা হবে । আমার সাড়ে এগারোটার ভেতরে মতিঝিল পৌছানো খুবই জরুরী । ঠিক আছে !
মিতু কিছুতেই এই কন্ঠটাকে উপেক্ষা করতে পারছে না । যুবকের কন্ঠের মাঝে কি এমন আছে সেটা সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না । দুমিনিটের কম সময় ছেলেটাকে সে দেখছে কিন্তু এরই মাঝে ছেলেটা ওকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলেছে । মিতুর কেবল মনে হচ্ছে তার পেছনে বসা ছেলেটার কথা তাকে শুনতেই হবে ।
আচ্ছা ছেলে কি হিপনোটিজম জানে ?
অনেক মানুষই জানে !
মিতু সিগনালের জন্য আর অপেক্ষা করলো না । একটু চিন্তা করে দেখলো এখন কোন রাস্তায় গেলে জ্যাম কম পড়বে । তারপর গুগল ম্যাপটা আরও একটু ভাল করে দেখে নিল কোন রাস্তায় গাড়ির চাপ কেমন । নিজের মনেই একটা পরিকল্পনা সাজালো । তারপর সিগনাল ছাড়াই আগেই স্কুটিটা চালিয়ে দিল ।
প্রায় বছর খানেক মিতু ঢাকা শহরে স্কুটি চালাচ্ছে । ওর মনে পড়ে না ও খুব একটা ট্রাফিক আইন ভেঙ্গেছে কি না । কিন্তু আজকে বলতে গেলে সব আইন ভেঙ্গে ফেলল । কয়েকবার ফুটপাতের উপর স্কুটি তুলে দিল । কয়েকবার রং সাইড দিয়েও চলল । যখন মতিঝিল নির্দিষ্ট অফিসটার সামনে পৌছালো তখন ঘড়িতে এগারোটা ২৮ । পেছনের যুবক স্খুটি থেকে নামতে নামতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-ভেরি ওয়েল ডান মিস মিতু ! আপনি আমাকে সময়ের দুই মিনিট আগেই পৌছে দিয়েছেন !
তারপর নিজের মানিব্যাগটা বের করে একটা এক হাজার টাকার নোট করে মিতুর হাতে দিল । মিতু বলতে যাবে যে ওর কাছে ভাংতি নেই কিন্তু তার আগেই দেখলো যুবক পেছন ঘুরে হাটা দিয়েছে । মিতু নির্ধারিত ভাড়ার একটা টাকাও নিতে পছন্দ করে না । কিন্তু আজকে ও কিছু বলতেই পারলো না । ও যে পেছন থেকে যুবককে ডাক দিবে সেই কাজটা করতে পারলো না । কেবল বোকার মত কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো । ভাড়াটা হয়েছে দুইশ একচল্লিশ টাকা আর যুবক ওকে এক হাজার টাকা দিয়ে গেছে ।
মিতু আরও কিছু সময় চুপচাপ বসে রইলো স্কুটির উপর । স্কুটিটা স্টার্ট দিতে যাবে তখনই দেখতে পেল ওর স্কুটির কাছে একটা চমৎকার ভিজিটিং কার্ড পরে আছে । সেটা নিচু হয়ে তুলে নিল । সম্ভবত টাকা বের করার সময় কোন ভাবে ঐ যুবকের মানব্যাগ থেকে পড়ে গিয়েছে। কার্ডে নাম লেখা ফারাজ চৌধুরী !
মিতু চোখ কপালে উঠলো । ওর পেছনে এতো সময়ে ফারাজ চৌধুরী বসে ছিল। এই নামের সাথে সে পরিচিত । ফারাজ চৌধুরী হচ্ছে আরবাজ চৌধুরীর ছেলে । এদেশের সব থেকে শিল্পপতিদের একজন সে । তাদের ক্লাস থেকে একবার ফ্যাক্টরী ভিজিটে নিয়ে গিয়েছিলো এই আরবাজ চৌধুরীর ফ্যাক্টরীতে । এতো বড় যে মিতুর চোখ কপালে উঠে গিয়েছিলো । তারপর শুনেছিল এখন তার ছেলে ফারাজ চৌধুরী সব ব্যবসা সামাল্লছে । আর সেই ছেলে আজকে তার স্কুটির পেছনে বসেছিল ।
মিতু আরও কিছু সময় বসেই রইলো কার্ডটা হাতে নিয়ে । কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না । ফারাজদের মত মানুষদের কাছে ১০০০ হাজার টাকা কোণ টাকাই না । কিন্তু ওর কাছে অনেক টাকা । বিশেষ করে এতো গুলো টাকা বেশি নিতে তার আত্মসম্মানে বাঁধছিলো । তারপর ঠিক করলো যে ভেতরে যাবে সে । বাকি টাকা ফেরৎ দিয়ে আসবে ! স্কুটিটা একটু ঘুরিয়ে সে অফিস বিল্ডিংয়ের দিকে নিয়ে গেল ।