বুক রিভিউঃ রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি

"রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসে নি" বইটা যখন পড়তে শুরু করে তখন বইটার ব্যাপারে খুব একটা উচ্চ আশা ছিল না । প্রথম প্রথম পড়তে গিয়েও তেমনটাই মনে হচ্ছিলো । এক ডিবি অফিসার সুন্দরপুর গিয়ে এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করছে কেবল । কিন্তু যখন বইটা শেষ করেছিলাম তখন বড় রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম । মনে হয়েছিল এইটা কি পড়লাম ।
আমি কোন দিন কল্পনাই করতে পারি নি যে বইটা এইভাবে শেষ হবে । এটাই সম্ভবত থ্রিলার লেখকদের সব থেকে বড় সাফল্য । পাঠকে একটা বড় ধাক্কা দেওয়া যা সে কখনও ভাবতেও পারে না ।

এই সিরিজের দ্বিতীয় বই প্রকাশিত হয়েছে এই বই মেলাতে । এবারের বইয়ের নাম "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেন নি" । নুরে ছফা এখনও সেই রহস্যময়ী নারী মুসকান জুবেরিকে খুজে বেড়াচ্ছে । সুন্দরপুর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে কেটে গেছে আরও তিনটা বছর । তিনবছর পরে এক পহেলা বৈশাখে রমনা থেকে ফেরার পথে নুরে ছফা দেখে গাড়িতে করে মুসকান জুবেরিকে যেতে দেখে । কিন্তু রিক্সাতে থাকার কারনে গাড়িটা ধরতে পারে না, এমন কি উত্তেজনার কারনে গাড়ির নাম্বারের দিকে লক্ষ্য করতেইও ভুলে যায় ।
তারপরই তার ডাক পরে দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে । একেবারে প্রধান মন্ত্রীর পিএসের কাছ থেকে । এই পিএসের ভাগনে কেও মুসকান জুবেরি মেরে ফেলেছিলো নিজের খাদ্যের জন্য । পিএসের বড় বোন এখন মৃত্যু পথযাত্রী । মরার আগে নিজের ছেলের কি হয়েছিলো সেটা জানতে চায় । পিএস নিজের বড় বোনের শেষ ইচ্ছে পূরন করার জন্য আবারও নুরে ছফাকে নিয়োগ দেয় । তাকে সব রকম সাহায্য করা হবে, কেবল মুসকান জুবেরিকে খুজে বের করতে হবে ।
পিএসের কাছ থেকে নুরে ছফা আরও একটা অবাক করা ঘটনা শুনতে পায় । পিএসের বড়বোন কাকতালীয় ভাবে এই মুসকান জুবেরিকে চিনতো । যৌবন কালে স্বামীর সাথে যখন আমেরিকাতে ছিল তখন এই মুসকান জুবেরি ছিল তার প্রতিবেশি । সেখান থেকে সে মুসকান জুবেরির একটা ছবি পায় । এবার ছবি নিয়েই খোজ শুরু হয় ।

আবারও নুরে ছফা গিয়ে হাজির হয় সুন্দরপুরে । সেখানে মুসকান জুবেরির বাড়িতে এখন এক বিশাল স্কুল তৈরি করা হয়েছে । আগের সেই হোটেলের স্থানে একটা বড় লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে । সেই স্কুলের হেড মাস্টার রমাকান্তের বাড়ি থেকে ছফা খুজে পায় একটা চিরকুট । মুসকিন জুবেরির চিরকুট । সেই সুত্র ধরেই একটা প্রথমে উকিল পরে সেখান থেকে ডাক্তার আকসার ইবনে সায়িদের কাছে পৌছে যায় । সেখানে সায়িদ তাকে আবার নতুন কাহিনী শোনায় । শুনে ছফা খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে যায় । ডা. আকসারের কাছ থেকে এমন কিছু জানতে পারে যে ছফার ধারনা হয় যে মুসকান এখন আছে কোলকাতায় ।

ছফা এবার গিয়ে হাজির হয় কোলকাতায় । সেখানে খোজ খবর করে জানতে পারে এখানে এসেও মুসকান তার কাজ কর্ম চালিয়ে গেছে । এক প্লাস্টিক সার্জনের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো । ছফার ধারনা হয় মুসকান তার চেহারা বদলে ফেলেছে । সে কোলকাতা থেকে এই ধারনা নিয়ে ফিরে আসে যে মুসকান তার চেহারা বদলে ফেলেছে । এবং সুন্দরপুরেই আছে সুস্মিতা নামে । যখন সুন্দরপুরে স্কুলে গিয়েছিলো সেখানে সে শান্তিনিকেতন থেকে আসা এক শিক্ষিকা দেখেছিলো । তার ধারনা হয় এই সুস্মিতাই হচ্ছে মুসকান । সে পুলিশ নিয়ে হাজির হয় সুন্দরপুরে কিন্তু তার আগেই সুস্মিতা সেখানে পালিয়ে গিয়েছে ।

গল্প এখানেই শেষ নয় । আরও কিছু আছে, আরও চমক রয়েছে তবে সেটা বলে দিলে গল্প পড়ার আগ্রহ থাকবে না অনেকের ।

মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিনের লেখা নিয়ে কোন কথা নেই । সুন্দর এবং সাবলীল লেখা । এই বইয়ের আরেকটা ভাল দিক হচ্ছে লেখার ভেতরে কোন ধেই হারানো ব্যাপার নেই । হাতে গোনা কয়েকজন বাদ দিয়ে ইদানিং কালের সবার লেখার ভেতরেই একটা ধেই হারানো ব্যাপার থাকে । এই বইতে সেটা মোটেই নেই । তবে একটা ব্যাপার এই বইতে ইনফর্মার আতর আলীর আচরন এবং কথা বার্তা আমার কাছে খুব বেশি হটকারি মনে হয়েছে । লেখক চাইলে হয়তো আরও একটু ভাল ভাবে আতরের চরিত্রটাকে আরও স্বাভাবিক করতে পারতেন ।


বই পড়ে দেখতে পারেন । প্রথম বইটার প্রথম দিকে একটু বিরক্তি চলে আসতে পারে কিন্তু কাহিনীর ভেতরে ঢুকে পড়ার পরে সেটা থাকবে না । আর এই বইটার শুরু থেকেই ভাল লাগবে আশা করছি । সিরিজের দুটো পরপর পড়া লাগবে । আগের টা না পড়লে পরেরটা বুঝতে পারবেন না ।

হ্যাপি রিডিং ।