বই রিভিঊঃ দ্য গার্ল হু প্লেইড উইথ ফায়ার

"দ্য গার্ল উইথ দি ড্রগন ট্যাটু" বইটার কাহিনী যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই "দ্য গার্ল হু প্লেইড উইথ ফায়ার" বইটার কাহিনী শুরু হয়েছে । গল্পের প্রধান চরিত্র লিসবেধ সালান্ডারকে দেখা যায় সে তার পরিচিত সব মানুষের সাথে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে নানান জায়গাতে ঘুরে বেড়ায় । মিলেনিয়াম পত্রিকার সাংবাদিক মিকাইল ব্লমকোভিস্ট তার সাথে অনেক চেষ্টা করে দেখা করার, কথা বলার জন্য, অন্তত এই টুকু জানার জন্য যে সালান্ডার তার সাথে কেন এমন নির্জিব আচরন করছে কিন্তু সে সালান্ডারকে খুজেই পায় না ।
একটা সময় মিকাইল ব্লমকোভিস্ট মেনে নেয় যে সালান্ডার তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে । এরপর কাহিনীতে আসে ড্যাগ ও মিয়া জুটি । ড্যাগ একজন সাংবাদিক অন্যদিকে মিয়া থিসিস করছে সুইডেনের সেক্স ট্রেডের উপরে । ড্যাগ একটা বই অনুসন্ধানমূলক লিখছে সুইডেনের সেক্সট্রেডের উপর এবং বেশ মানুষের নাম উঠে এসেছে সেই বইতে যেখানে জজ, সাংবাদিক পুলিশ সহ অনেকের নাম উঠে এসেছে । এই বইটা সে মিলেনিয়াম থেকে প্রকাশ করতে চায় । মিকাইন ব্লকোভিস্ট এই বই প্রকাশ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং তারা এক সাথে কাজ করতে শুরু করে । তারপর যখন বই প্রকারের মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকে তখনই এই মিয়া এবং ড্যাগ খুন হয় তাদের বাসায় । এবং মূল কাহিনী এখন থেকেই শুরু ।
পুলিশ খুনের স্থানে যে পিস্তল খুজে পায় সেই বিস্তলটা বুরম্যান নামের একজন আইনজীবি । যারা দ্য গার্ল উইথ ড্রাগন ট্যাটু পড়েছেন তারা জানেন এই বুরম্যান হচ্ছে সালান্ডার নিয়োগ প্রাপ্ত গার্জিয়ান । এই পিস্তলে বুরম্যান এবং সালান্ডার হাতের ছাপ পাওয়া যায় । তারপর যখন পুলিশ বুরম্যানের বাসায় গিয়ে হাজির হয় তখন সেখানে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । তাকেও গুলি করে মারা হয়েছে । সকল সন্দেহ গিয়ে পড়ে সালান্ডারের উপর । সেই যেন খুন করেছে । পুলিশ বাহিনী তাকে খুজতে শুরু করে । তার ব্যাপারে আরও অনেক কিছু বের হয়ে আসতে থাকে । একেবারে ছোট বেলা থেকে সে কেমন ছিল আর কি করেছে । সবাই এক প্রকার মেনে নেয়ই নেয় সালান্ডারই খুন করেছে ।
কিন্তু মিকাইল ব্লমকোভিস্ট এটা বিশ্বাস করে না । সে মনে করে সালান্ডা খুন করতে পারে না । সে শুরু থেকেই পুলিশকে বলে আসতে যে মিয়া আর ড্যাগ যে বইটা লিখছিলো সেটাই আসলে তাদের মৃত্যুর কারন । সেখানে অনেকে মুখোশ খুলে পড়তে যাচ্ছিলো । তাদের কেউ হয়তো এই কাজটা করেছে ।
একটা সময় কম্পিউটারের মাধ্যামে সালান্ডারের সাথে তার কথা হয় । সে নিশ্চিত হয় যে সালান্ডার খুন করে নি । সালান্ডার তাকে কিছু ক্লু দেয় । সংবাদ পত্রে এরই মধ্যে সালন্ডার জীবনের প্রায় সব কিছু সামনে চলে আসে কিন্তু ১৯৯১ সালে তার নামে একটা পুলিশ রিপোর্ট হয়েছিলোস এটা বাইরে আসে না দেখে সালান্ডার বেশ অবাক হয় । সেটা অনুসন্ধান্ধান করতে বলে ব্লকোভিস্টকে। নাম বেরিয়ে আসে আলেকজান্ডার জালাচেঙ্কোর যে কিনা জালা নামে পরিচিত । এই জালার ব্যাপারে ড্যাগও খোজ খবর করছিলো । আস্তে আস্তে জালার সাথে সালান্ডারের সম্পর্ক বের হয়ে আসে । এই ভাবে কাহিনীর পরিনতির দিকে এগিয়ে যায় !

দ্য গার্ল হু প্লেইড উইথ ফায়ার হচ্ছে মিলেনিয়াম সিরিজের দ্বিতীয় বই । যখন এই সিরিজের প্রথম বইটা পড়েছিলাম তখন খানিকটা অবাক হয়েছিলো যে বইয়ের নাম দ্য গার্ল উইথ দ্যা ড্রাগন ট্যাটু হলেও এই বইতে সালান্ডারের ভূমিকা ছিল অপ্রধান । পুরো বইটা ছিল মূলত ব্লমকোভিস্টকে নিয়ে কিন্তু এই বইতে সালান্ডারই হচ্ছে আসল কেন্দ্র । এই বই সালান্ডারকে খুব ভাল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । তার একেবারে ছোট বেলার কাহিনী থেকে শুরু করে তার জীবন যা যা হয়েছে সব কিছু ।

বইয়ের খারাপ দিক হচ্ছে এই বইটা প্রথম দিকে মারাত্বক স্লো । ১৬৮ পৃষ্ঠা লেগেছে বইয়ের কাহিনীর মুল অংশ ঢুকতে । এই ১৬৮ পাতা পড়তে আমার মোটামুটি গোটা বিশ দিন লেগেছে । আমার কোন বই পড়ে এতো সময় আর কখনই লাগে নি । যখন ড্রাগন ট্যাটু পড়ছিলাম তখনই বইটা প্রথম দিকে বেশ স্লো ছিল এটা মনে আছে । কিন্তু যখনই বইটার মুল কাহিনীতে ঢুকে পড়লাম তখন কাহিনী এগিয়ে গেছে দ্রুত । বাকি সাড়ে তিনশর মত পেইজ পড়তে আমার সময় লেগেছে দুইদিন মাত্র । বইয়ের কাহিনীর ভেতরে একবার ঢুকে গেলে সেখান থেকে বের হওয়া মুলত মুশকিল । কিন্তু প্রথম টুকু পড়ার সময় ধৈর্য ধরে রাখাই কষ্টকর হবে ।

বইটার অনুবাদ করেছে রাই শিল্পী । অনুবাদের মান মোটামুটি । তবে ভেতরে প্রচুর বানান ভুল । অবশ্য লেখার সময় আমার নিজের বানান ভুল যায় অনেক তাই অন্যের বানান ভুল নিয়ে অভিযোগ করা মানায় না আমার । তবে আমার মনে হয় প্রকাশের আকে আরেকবার যত্ন নিয়ে প্রুফ দেখা দরকার ছিল প্রকাশকের । বইটা প্রকাশ হয়েছে বাতিঘর থেকে । যদি বইটা পড়তে চান তবে পরামর্শ থাকবে আগে অবশ্যই এই সিরিজের আগের বইটা পড়ার ।


হ্যাপি রিডিং